somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আশ্বিনের ঐক্যতান

০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আচ্ছা ঢাকা শহরের কোথায় ছাতিম গাছ পাওয়া যাবে কেউ সন্ধান দিতে পারেন ? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিশ্চয়ই আছে। আজন্ম সাধ ছিল দু' পাশে ছাতিম গাছের সারি রেখে ঘোরলাগা সকালে কৈশোরের মত নির্ভার হেটে যাব বহুদূর। তেমন একসন্ধ্যা এসেছিলো জীবনে। ভারত বাসের সময়, গুরগাঁও এক হেরিটেজ রিসোর্টে গিয়েছিলাম ইন্ডিয়ান বিগ ফ্যাট ওয়েডিং এর নিমন্ত্রণে। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার দারুণ মিশেলে গড়া সে ভবনের প্রবেশ পথ ছিল ছাতা মাথায় ছাতিম গাছের সারি নিয়ে। সমস্ত গাছ ভর্তি করে সবুজ সাদার মিশেলে থোকায় থোকায় জোনাকির মত ফুটে ছিল সে ফুল। জীবন আসলে এইসব টুকরো টুকরো মহার্ঘ্য স্মৃতির মিশেল।

মাঝেমাঝে ভাবি একটা ছাতিম গাছ, মায়ের নাকফুলের মত ছোট্টফুল আর তার নরম সুবাস, কেমন করে যে সুপারি' র খোলে দাঁড় টানার সে শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যায়! সেই ফ্রক পরার দিনগুলোতে এক এক' টা আশ্বিনের সকাল কেটেছে রাশিরাশি, ছোটছোট ছতিম ফুল আর শিউলি মালা গেঁথে। ফ্রকের কোঁচড়ে ফুলের রস মেখে মায়ের চোখ রাঙ্গানিতে। দক্ষিণা বাতাসে দু এক টুকরো ঝরা ফুল আর মগজে গেঁথে যাওয়ার মত তুমুল সুবাস নিয়ে আসা মেঘ করা সন্ধ্যা নিয়ে।

আমার পড়ার টেবিলের জানালার ও'পারে একঝাক ঝুমকো জবার ঝাড় ছিল। সমস্ত টা বছর জুরেই সে আর কলাবতীর গুচ্ছ গা উজার করে ফুল ফোটাতো খুব। অন্য পাশের জানালা ছিল মিলি, মিষ্টুর দাদুর পূজাঁর ঘর! বারোমাসি ফল মিষ্টি’ র প্রসাদ! ধূপধোঁয়া চন্দন। সেসব দিনগুলোতে সাদা মেঘের নাও ভাসিয়ে, চকচকে কাঁচের মত রোদ্দুরে গুটিপায়ে আসত আশ্বিনের গান। এই শরত এলেই তার সাথে শিউলি সুর মেলাতো। শিউলি গাছটা খনিক দূরের যদিও দাদুর বাড়ির শেষ মাথায় পুরনো রান্নাঘর আর বেল চালতার কাছটিতে। তবুও ভোরের শিশির এর সাথে ঝরে পরার সময় আর সন্ধ্যার হিমকনায় প্রস্ফুটিত হতে যেয়ে তুমুল সুবাস দিত সবাইকে।

পুকুরের ঐ পাড়ে যখন কাশবন ভর সন্ধ্যের বাতাসে মাথা নোয়াতো! আমার কেবল ঈদের জামাতে রুকু সেজদার কথা মনে পড়ত। কী ভীষণ স্নিগ্ধ আর পবিত্র !! এ পাড়ে তখন আমি ঘাসফুলে মেতে আছি! সান্ধ্য শাঁখ আর আজানের ধ্বনি ঐক্যতান বাতাসে মেশার আগেই ঘরে ফেরা। হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বসে আঙুলের করে স্কুল ছুটির দিনগোনা শুরু। ষাণ্মাসিক পরীক্ষা আর বার্ষিক পরীক্ষা মাঝামাঝি চড়ুই উড়ালে চলে যাওয়া এ ছুটিটুকু যতখানি পরীক্ষার সমন কাঁধে নিয়ে আসে; তার চাইতে বেশি আনে দাদা /নানার বাড়ি বেড়াতে যাওয়া র আনন্দ, পিঠেপুলির আনন্দ আর খেজুরের মিষ্টি রসের মিঠেল ঘ্রাণ।

কেমন একটা পূজা পূজা উৎসব চারিদিকে বেশ। ঢাকে কাঠি পরার আগেই পুকুরের পানি তে হিম নামে, চোখেমুখে লাগে কুয়াশা মেশা ঘোলা বাতাস! প্রচণ্ড ঘোরলাগা সে সময়। কালী বাড়ির মন্দিরে দূর্গাপুজার এ ক'দিন ভোরের আলোর সাথে মাইকে চমৎকার সব গানবাজত! ভোররাতের মিষ্টি ওম না কাটতেই দূর থেকে ভেসে আসা কিশোর কুমারের কন্ঠের " সে যেন আমার পাশে আজো বসে আছে " গানের বিষন্ন মায়ার সাথে ছুটির দিনগুলোর শুরু হত। তার সাথে ঝুমকো জবার হাসি, পাশের জানালায় দাদুর ধূপকাঠি আর ছাতিম বনের ডাকে শিউলির সুবাস কখন যে মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত! আহা কৈশোর !!! বুকে ক্যামন করা এক অনুভূতির নাম। এখন ও শরত নামে এ দেশে সাথে নিয়ে সেই মিঠেল আদ্রতা, প্রাণপণ সে সরাতে চায় এ শহরের বিষবাষ্প। এই কদর্য শহরে আজও কোন ভাঙা ইটের স্তূপের নগ্নতায় শিউলি দু' এক ফোটা শিশির বুকে ঝরে। অযত্নে অবহেলায় কাশ ও স্নিগ্ধতা বিলায় ! আর সন্ধ্যের নরম আলো থেকে মাঝ রাতের নিশ্চুপ নির্জনে যদি নাকে তীব্র ঘ্রাণ আপনাকে আবেশিত করে; নিশ্চিত বুঝে নেবেন সে আর কেউ নয় মা মাসীদের সকল গঞ্জনা সয়ে টিকে থাকা ছাতিম ফুল।

আপনি এই শরতে শিউলি ছুঁয়েছেন? অথবা প্রাণভরে ছাতিমের সুবাস ? কাশফুল স্পর্শ করুন চনমনে আশ্বিনের ঘ্রাণ পাবেন। দারুণ ব্যস্ত, বিক্ষিপ্ত এ সময়ে সেটুকুই হবে পথ চলার সঞ্জীবনী। সবাই কে শরত শুভেচ্ছা !



সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ৯:২১
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×