ঢাকা টু বম্বে ছিল আমার প্রথম বিমান ভ্রমণ অভিজ্ঞতা !
২০০৫ সালের অগাস্ট মাসের কোন এক বিকেলে ছিল বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট সেদিনগুলো তে সপ্তাহে একটাই সরাসরি মুম্বাইয়ের ফ্লাইট ছিল। যেহেতু প্রথম, সময়ের চাইতে প্রায় চার ঘণ্টা আগেই এয়ারপোর্ট এ চলে এসছিলাম, তিন মাস বয়সী ছেলে আর তিন বছর বয়সী টুকটুক করে হেটে বেড়ানো কন্যা। ঐ পারে মুম্বাইতে বসে ছেলে মেয়ের বাবা পাখিপড়া বুঝায়, কী করতে হবে কিভাবে চলতে হবে। যেহেতু অফিসিয়াল ট্রিপ অফিস থেকে অফিসিয়াল কাজকর্ম চেক করে, সিকুইরিটি হিসেবে কোন এক বরুয়া সাহেবের সাথে এয়ারপোর্টে নামা মাত্রই যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। আর এদিকে -ছেলে ঘুমায়, মেয়ে প্রজাপতি আর আমি অভ্যাস মত পর্যবেক্ষণ এ ব্যস্ত, এবং অবশ্যই আনন্দের সাথে। ভয় ছিল আসন গ্রহণের পর ছেলে কে কোলে নিয়ে সবকিছু সামলাতে পারব কিনা? কিন্তু সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইজম বিমানে উঠার পর' ই পেয়ে গেলাম আমাদের ডাকসুর বাবু ভাই কে ফ্লাইট এটেনডেন্ট হিসেবে, ব্যাস আর কি মেয়েকে পাশাপাশি দুই সীট নিয়ে বসিয়ে দিলেন, হাত ভর্তি খেলনা, রঙ পেন্সিল আর চকলেট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া'র সৌন্দর্য ই এসব, পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাবেন, পরিচিত মুখ চমকে দেবে।
সব ব্যাগেজ দিয়ে দেবার পর হাত বেশ হালকা এর মাঝে আসর এর আজান হলো ভাবলাম, বাচ্চাদের ও চেঞ্জ করাই আমিও অজু করে নামাজ পড়ার চেষ্টা করি। হাতে মেলা সময় দুতলায় উঠে টয়লেটের নামে যে অভিজ্ঞতা হল, সেটুকু নাইবা লিখলাম, ২০১৯ পর্যন্ত এই অভিজ্ঞতার ভিন্নতা হয় নি, বরং এ আমলে দেখলাম নামাজের রুমে অজু র জায়গার পাশে ক্লিনার রা ভাত খাচ্ছে নানা রকম ভর্তা ভাজা তে উৎসব। নামাজের রুমে দুজন ভদ্রমহিলা আগেই ছিলেন, উনারা জিজ্ঞেস করলেন এত ছোট বাচ্চা নামাজের রুমে কেন এনেছি, সাথে কি পুরুষ মানুষ নেই ? যাইহোক আবার চলে আসলাম নিচে অপেক্ষার স্থানে। এসে দেখলাম বেশ জমজমাট, উমরাহ হজ্বের বেশ বড় কাফেলা যাচ্ছে কাছাকাছি সময়ে। ধার্মিক দলের এই বৈচিত্র্য ও বেশ উপভোগ্য। সবাই বেশ শুভ্র বসনে, কেউ হাটছেন অস্থির ফ্লাইট কি চলে যাচ্ছে নাকি ? দু একজনের গর্বিত পদচারনা বেশ, দেখ আমি তোমার চেয়ে আলাদা, তুমি আনন্দ করতে যাচ্ছ আমি আল্লাহর ঘরে যাচ্ছি। বেশির ভাগ ই দোয়া দরুদ পড়ছেন।
আমার পাশের আসনে হাতে তসবিহ সহ দুজন ভদ্রমহিলা বসলেন, ছেলে কোলে আবার মেয়ে কে সামলাচ্ছি দেখে জিজ্ঞেস করলেন আপনি একা! সাথে কোন ছেলে মানুষ নাই ? আমি কথা না বলে হাসলাম। আবার উনাদের চিন্তা শুরু আমি একা কিভাবে যাবো, যদিও মাত্র দুই আড়াই ঘণ্টার ফ্লাইট। গেট নাম্বার ঘোষণার পর আমি উঠে সামনের দিকের চেয়ারে বসলাম, এগুলি এগিয়ে শোনা অভিজ্ঞতায় জেনেছি শুরুতে সবাই লাইনে দাড়ায় তখন ভিড় থাকে। (যদিও আমাকে কোথাও দাঁড়াতে হয় নি , বাচ্চাদের সাথে দেখে আমাকে আগেই বোর্ডিং পাস দিয়েছে) সেখানে আমার পাশে একটি পরিবার এসে বসলো, সেই পরিবারের নানী বা দাদী আমাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সাথে কোন ছেলে মানুষ নাই ? আমি ততোক্ষণে উঠে দাড়িয়েছি বাচ্চাকাচ্চা পোটলাপুটলি সহ, উত্তর দিলাম জি আছে ছেলে মানুষ। কিন্তু পাশে কাউকে না দেখে আবার জানতে চাইলেন, কোথায় ছেলে মানুষ? কোলে ছেলেকে দেখায়ে বললাম এই যে আমার কোলেই আছে ছেলে মানুষ, কাঁধে ব্যাগ আর একহাতে মেয়ে কে ধরে পা বাড়ালাম সামনের দিকে।
ছবি- মনিরা সুলতানা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:০২