বাস থেকে নেমে আমরা সবাই স্থানীয় মসজিদের সামনে জড়ো হলাম।
কিছুক্ষনের মধ্যে ১টি দামী গাড়িতে ওই এলাকার রাজনৈতিক নেতা এবং উনার স্ত্রী আসলো।তিনি গাড়ী থেকে নেমেই আমাদের উদ্দেশ্যে খুব চমতকার ১টি ভাষন দিলো যদিও আমরা ইন্টারন্যাশনাল ছাত্ররা এর কিছুই বুঝিনি।শুধুমাত্র এতটুকুই বুঝলাম যে উনি আমাদের খুব প্রশংসা করলেন এবং আমাদের ধন্যবাদ জানালেন।
যাই হোক উনার ভাষনের পর আমরা ছোট-ছোট গ্রুপ এ ভাগ হয়ে আমাদের আসল কাজে নেমে পড়লাম।আমার গ্রুপ এ ২জন ছেলে এবং ৪জন মেয়ে ছিলো।সবাই ই মালয়শিয়ান,আমিই শুধুমাত্র ইন্টারন্যাশনাল।
আমরা খুজে খুজে ১টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ঘরে ঢুকলাম।
বাড়িটি ছিলো দোতলা।বন্যার সময় নিচতলায় পানি ঢুকেছিল।
পুরো নিচতলা এখনও কাদা হয়ে আছে।আমরা বড়ীতে প্রবেশ করে গ্রৃহকর্তীর আনুমতি নিয়ে বাড়ী পরিষ্কার করা শুরু করলাম।একদিকে চলছে মেঝে পরিষ্কারের কাজ অন্যদিকে চলছে থালা-বাসন সহ অন্যান্য আসবাবপত্র পরিষ্কারের কাজ।আমার ভাগে পরলো থালা-বাসন পরিষ্কারের কাজ।ফাহমিদ ময়লা থালা-বাসন আর আসবাবপত্র নিয়ে আসছে আর আমি পরিষ্কার করে চলছি।কর্দমাক্ত সেইসব জিনিসপত্র পরিষ্কার করা খুব একটা সহজ ছিলো ঠিক তা না।তবে কেন জানি কাজ করে খুব মজা পাচ্ছিলাম।
নিজের জিনিসপত্রও পরিষ্কার করেও এমন মজা পাই না যদিও নিজের জিনিসপত্র এতো যত্নসহকারে পরিষ্কার করেছি বলে মনে পরেনা।কাজ করার ফাকে ফাকে মালায়শিয়ান মোহাম্মদ,আমদের গ্রুপ মেম্বার, ভালোই জোকারী করে যাচ্ছিল।
কিছুক্ষন পর ওই বাড়ীর দাদীর বয়সী সবচেয়ে বয়স্ক মহিলা আমাদের কাজ দেখতে আসলেন।ভদ্রমহিলা আমাকে ভাষা মালায় তে কি যেনো জিজ্ঞেস করলেন।আমি হা করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই বলতে পারলাম না। যেকোনো মালায়শিয়ান আমাকে দেখলে ভাষা মালায়তেই আলাপ শুরু করে।বুঝিনা আমার চেহারা কি আসলেই মালায়শিয়ান দের মতো কিনা!! এর আগেও বেশ কয়েকবার এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে তাই আমার জানা আছে কিভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।ডাক দিলাম আমার গ্রুপ মেম্বার ইউনিভার্সিটি উতারার ছাত্রী লিন্ডাকে।লিন্ডা ভদ্র মহিলাকে বললো যে আমি বিদেশী ছাত্র।লিন্ডার মাধ্যমে উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি কোন দেশ থেকে এসেছি।আমি বললাম বাংলাদেশ থেকে।এ কথা শুনে ভদ্র মহিলা খুব অবাক হলেন।হয়তোবা ভাবতে পারেননি যে সেই দূরদেশ থেকে আসা কোনো ছাত্র তাদের এই অজোপাড়াগাঁয়ে এসে তাদের বাড়ী-ঘড় পরিষ্কার করে দিয়ে যাবে।কিছুক্ষন পর বাড়ীর গ্রৃহকর্তা এসে আমরা কতজন কাজ করছি তার হিসেব নিয়ে গেলেন।বুঝতে পারলাম যে আমাদের জন্য কিছু রিফ্রেশমেন্ট এর ব্যবস্থা হচ্ছে।যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই।কিছুক্ষন পর গ্রৃহকর্তা আমাদের জন্য গরম গরম রুটি চানাই,যাকে আমরা বাংলাদেশে পরোটা বলি,নিয়ে হাজির হলো।সবাই কাজে বিরতি দিয়ে ডাল দিয়ে পরোটা খেয়ে নিলাম।এরপর যথারীতি আবার কাজ এ লেগে গেলাম।দুপুর ১টার আগে কাজ শেষ করে আমি আমরা ঐ বাড়ীর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হলাম।বের হয়ে দেখি সকালে যে নেতা এসেছিল উনি আমদের জন্য দুপুরের খাবার পাঠিয়েছে।সবাই মিলে ১টা বাড়ীর বারান্দায় বসে পরলাম দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য।
খাবার মুখে নিয়েই বুঝতে পারলাম এই খাবার আমার পক্ষে খাওয়া সম্ভব না।অল্প কিছু খেয়ে বাকি গুলো রেখে দিলাম।খাওয়া শেষে সবাই মিলে আবার আমাদের মিলিতস্থল মসজিদের পাশে ছোট ১টা স্কুল এ আসে জড়ো হলাম।
বাকি গ্রুপ গুলোও ততোক্ষনে চলে আসলো।আমরা সবাই হাত-মুখ ধুয়ে জুমার নামজে শরীক হওয়ার জন্য মসজিদের দিকে এগিয়ে চললাম।
(চলবে)
~~~কেদাহ ভ্রমন এবং বিচিত্র আভিজ্ঞতা~~~ (পর্ব-১)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ৮:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




