সুন্দরম যেভাবে লে অফ এড়ালেন
২০১৫ খ্রিস্টাব্দের কথা। কানাডার আলবার্টায় চারিদিকে কঠিন লে অফ চলছে। বিভিন্ন অয়েল-গ্যাস কোম্পানিতে টানা দশ বছর বা তারও বেশি সময় কাজ করেও অনেকে লে অফ'এর ভয়ে অস্থির। ষাট'এ পা রাখা কর্মী সুন্দরম'ও এর ব্যতিক্রম নন।
কানাডায় লে অফ দেয়া হয় মোটামুটি এভাবে। হিউম্যান রিসোর্সেস (এইচ আর) ম্যানেজার আসেন টার্গেট করা কর্মকর্তা/কর্মচারীর কক্ষে। হাই, হ্যালো বলে তাঁকে ডেকে নিয়ে যান মিটিং রুমে। তারপর তাঁকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি বা লে অফ'এর বিষয়ে জানিয়ে সরাসরি সিকিউরিটি দিয়ে অফিস থেকে 'সসম্মানে' বের করে দেয়া হয়। তাঁর অফিস কক্ষে শেষবারের মতো যাবার সুযোগও দেয়া হয় না।
দীর্ঘদিন কাজ করায় সুন্দরম লে অফ'এর খুঁটিনাটি ভালোভাবেই জানতেন। জীবনে শতশত লে অফ'এর ঘটনা তিনি দেখেছেন। ২০১৫ সালের এক দুর্দিনে তাঁর কক্ষেও এইচ আর ম্যানেজার আসলেন। তাঁকে দেখেই সুন্দরম দ্রুত বিষয়টা আঁচ করলেন। ম্যানেজার তাঁকে মিটিং রুমে যেতে আহবান জানালে তিনি বাথরুম চেপেছে বলে দ্রুত বাথরুমে গেলেন। ম্যানেজার সুন্দরম'এর অপেক্ষার তাঁর কক্ষে বসেই আছেন। কিন্তু, সুন্দরম আর ফেরেন না।
খানিক পর ইমার্জেন্সি এম্ব্যুলেন্সের সাইরেনের আওয়াজ পেয়ে এইচ আর ম্যানেজার কক্ষের বাইরে গিয়ে জানলেন সুন্দরম বাথরুমে পা পিছলে পরে গিয়ে হাঁটুতে বড়ধরণের ব্যাথা পেয়ে বাথরুম হতেই ৯১১ কল করেছেন। এ অবস্থায় তো আর লে অফ হয়না। সরাসরি হাসপাতালে তাঁর ঠাঁই হলো। এর সাথে যোগ হলো বুড়ো বয়সের নানাব্যাধি। সব মিলিয়ে চোখের পলকেই কেটে গেলো ৬০ শতাংশ বেতনে টানা সাড়ে চার বছর। বর্তমানে সুন্দরম ৬৫ ছুঁইছুঁই। মানে, শিগগির শুরু হবে কানাডার নিয়মিত বয়স্ক ভাতা। কি মজা! তাই না? তাছাড়া, এইচ আর ম্যানেজার নিজেই লে অফ পেয়েছেন বছর খানেক আগে, ২০১৯-এ।
অনেক বছর পর সেই সুন্দরম'এর সাথে ঘটনা চক্রে দেখা হলো সপ্তাহখানেক আগে। কথায় কথায় জানতে চাইলাম তাঁর চাকুরীর অবস্থা কি? তিনি উত্তরটা দিলেন এভাবে: 'আমি তো অনেক সিনিয়র পজিশনে কাজ করি। তাই, আমার মতো কর্মকর্তাকে লে অফ দিলে কোম্পানির আর থাকে কি? মনে হয়, রিটায়ারে না যাওয়া পর্যন্ত এই কোম্পানির সাথেই আছি।' (তাঁর ধারণা, আমি ঘটনাটা জানিনা।)
তাঁকে সাবাশ দিয়ে বললাম, বাহ্!
ML Gani, RCIC / Canada
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:০৯