somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিগ্রি বনাম ডিপ্লোমা-প্রকৌশলী খেতাবের দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা - এম এল গনি

২৮ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে প্রকৌশলীদের চলমান আন্দোলন নিয়ে বিডিনিউজ২৪ ডট কম-এ প্রকাশিত আমার এ কলামটি একদিনে ৫,০০০ বার শেয়ার হয়েছে। আপনিও পড়ে দেখতে পারেন।

গুগল করতে পারেন লেখাটির শিরোনাম: 'ডিগ্রি বনাম ডিপ্লোমা-প্রকৌশলী খেতাবের দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা'
লিংক: https://bangla.bdnews24.com/opinion/3ae63ec012d8

পাঠ সহজ করতে নিচেও লেখাটির কপি দিলাম।

= ডিগ্রি বনাম ডিপ্লোমা-প্রকৌশলী খেতাবের দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা =

রাজধানীর শাহবাগ ২৩ অগাস্ট মধ্যরাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠেছিল। সেই আন্দোলন এখনও অব্যাহত রয়েছে। বুয়েটের সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়েছেন। শুধু ঢাকায় নয়, রাজশাহী আর চট্টগ্রামেও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামতে দেখা যাচ্ছে। এই লেখাটি ২৬ অগাস্ট বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটায় যখন লিখছি, তখন আবারও উত্তাল-অবরুদ্ধ শাহবাগ।

রোকন নামে বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর ওপর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের হামলা ও প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে মধ্যরাতে ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শাহবাগ মোড় হয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যেতে চেয়েছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।

তবে সহপাঠী ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করে বিক্ষোভ থামেনি। ‘বিএসসি ছাড়া ইঞ্জিনিয়ার নয়’–এই স্লোগানে তিন দফা দাবিতে সড়কে নামেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। শাহবাগে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরেন।

তাদের ভাষায়, 'ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা প্রকৌশলী হতে পারেন না। ইঞ্জিনিয়ার ট্যাগ শুধুমাত্র বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য বরাদ্দ থাকতে হবে।' এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছেন, টানা তিন দিন, ২৪ থেকে ২৬ অগাস্ট পর্যন্ত বুয়েটের সব ক্লাস ও পরীক্ষা শিক্ষার্থীরা বর্জন করবেন। সংবাদমাধ্যমে জানা গেল এসব তথ্য।

এ লেখার শুরুতে আমার নিজের সংক্ষিপ্ত পরিচয় না দিলে লেখাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, আমি যা বলব, তা বলবার যে অধিকার রাখি, সেটাও অব্যাখ্যাত থেকে যাবে।

বর্তমানে কানাডার অভিবাসন পরামর্শক (আরসিআইসি-আইআরবি) হিসেবে কাজ করলেও আমি একজন প্রাক্তন বুয়েটিয়ান। দেশের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রায় অর্ধযুগ প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর কানাডায় চলে আসি। অতঃপর কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে কানাডায় প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার (পি.ইন্জ.) হিসেবে কাজ করি দীর্ঘ সময়। অর্থাৎ, দেশে-বিদেশে প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। নিজে বুয়েটিয়ান হলেও কোনোপ্রকার পক্ষপাতমূলক অবস্থান গ্রহণ না করে নির্মোহভাবে কিছু তথ্য ও অভিজ্ঞতা এ লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করব, যা থেকে বুয়েটিয়ান-অবুয়েটিয়ান দুপক্ষ কিছুটা হলেও দিক নির্দেশনা পাবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর কানাডায় চাকরিজীবনের শুরুর দিকে এক প্রতিষ্ঠিত স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে আমি কয়েক বছর স্ট্রাকচারাল ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করি। কোম্পানির এডমন্টন অফিসে ছিল আমার পোস্টিং। সেখানে প্রায় পঞ্চাশ জনের একটা টিম ছিল যার মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন প্রায় অর্ধেক। অন্যরা ড্রাফটসম্যান, ডিজাইনার বা অফিস স্টাফ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরিধি বিবেচনায় ডিজাইনারদের বাংলাদেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। আমাদের টিম লিডার বা দলনেতা ছিলেন সত্তরোর্ধ এক বৃদ্ধ। আমার চাকরির ইন্টারভিউতেও এই বৃদ্ধ উপস্থিত ছিলেন। প্রকৌশলীদের মধ্যে দুজন পিএইচডি, পাঁচ বা ছয়জন মাস্টার্স ডিগ্রি আর অন্যরা ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী (বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার) ছিলেন।

স্ট্রাকচারাল ডিজাইনের কাজ করার সময় একদিন একটা বিষয়ে সিনিয়র কারো সঙ্গে পরামর্শ করার প্রয়োজনবোধ করছিলাম। সে অবস্থায় ভাবলাম, টপ বস, অর্থাৎ, টিম লিডারের সঙ্গে কথা বলি। দ্রুত তার অফিসে গেলাম। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তিনি সহাস্যে আমাকে প্রশ্ন করলেন, 'তুমি কি আমাকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার মনে করেছো?' আমি বললাম, 'ঠিক তাই। আপনি কি তবে ইঞ্জিনিয়ার নন?'

আমার এ ধরণের অনুমানের কারণ হলো, সাপ্তাহিক অফিসিয়াল সভায় তাকে নেতৃত্ব দিতে দেখেছি। অর্থাৎ, তার নির্দেশনায় কাজ করছে পুরো টিম। তিনিই আমাদের মাঝে কাজ বিতরণ করেন এবং সময়ে সময়ে আমাদের কাছ থেকে কাজের অগ্রগতি বুঝে নেন। সবদিক বিবেচনায় তাকে সিনিয়র কোন ইঞ্জিনিয়ার বিবেচনা না করার সঙ্গত কারণ দেখিনি। বাস্তবতা হলো, তিনি আসলে ইঞ্জিনিয়ার নন।

আমি যে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা যোগ্যতা সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে ছিলাম তা তিনি আঁচ করতে পেরে তার একাডেমিক ও প্রফেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আমাকে খুলে বললেন। জানা গেল, তিনি প্রায় চার দশক আগে এই কোম্পানিতে একজন ড্রাফটসম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। সে আমলে হাই স্কুল (দ্বাদশ শ্রেণি) শেষ করে এক বছর পড়াশোনা করলেই ড্রাফটম্যান হওয়া যেতো। পড়াশোনা এটুকুই। তার মানে, বর্তমানে পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীর বস হলেও বাস্তবে তার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে একটা ছোটোখাট ডিপ্লোমাও নেই, আছে কেবল এক বছরের ড্রাফটসম্যান ট্রেনিং।

কথায় কথায় তিনি বললেন, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না থাকলেও কোন ভবনের ডিজাইন ও নির্মাণ কাজে কত সময়, অর্থ বা জনবল লাগতে পারে, বা প্রকৌশলীদের মোট কত কর্মঘণ্টা ব্যয় হতে পারে তার একটা আনুমানিক হিসাব তিনি খুব দ্রুত দিতে পারেন। দীর্ঘকাল ধরে প্রকৌশলীদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তিনি এ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। অর্থাৎ, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন না জানলেও কোনো প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তার অমূল্য অভিজ্ঞতা আছে। সঙ্গে রয়েছে বিশাল এক ক্লায়েন্ট-বেইসের সঙ্গে পরিচয় ও যোগাযোগ। ফলে কোম্পানির জন্য প্রজেক্ট পাওয়া তার পক্ষে অনেক সহজ। সে বিবেচনায় কোম্পানি তাকে এডমন্টন অফিসের টিম লিড বা দলনেতা বানিয়েছেন। এতটাই দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন যে ওই কোম্পানিতে কাজ করাকালীন আমি কখনো কাউকে তার একাডেমিক যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখিনি।

আরেকটা দৃষ্টান্ত দেই। আমার এক সিনিয়রের ছেলে, ড. মেহেদী ভূঁইয়া, সম্প্রতি কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করে এক ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে কাজে যোগ দিয়েছে। তার সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জানলাম, তার বস, অর্থাৎ, তাদের টিম লিডও নাকি প্রকৌশল শাস্ত্রে তিন বছরের ডিপ্লোমাধারী এক বয়স্ক ভদ্রলোক।

উল্লেখ্য, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দু-তিন বছরের ডিপ্লোমাধারীদের কানাডা বা আমেরিকায় 'ইঞ্জিনিয়ার' সম্বোধন করা হয় না। তবে, তাদের সে বিষয়ে মাথাব্যথাও নেই বা, তারা তেমন অযৌক্তিক দাবিও করেন না কখনো। কর্মক্ষেত্রে তাদের খাটো করেও দেখা হয় না। উন্নতদেশগুলোতে কর্মক্ষেত্রে 'স্যার' সম্বোধন করে সিনিয়রদের তোয়াজ করার রীতিও নেই; সবাই সবাইকে নাম ধরে ডাকে। কানাডায় বেড়ে উঠা মেহেদী ভূঁইয়াও তার বস আরেক পিএইচডি ডিগ্রিধারী, বা ন্যূনপক্ষে একজন প্রকৌশলী না হওয়ায় কিছুমাত্রও অবাক হয়নি। তাদের কাছে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অথচ, আমরা যারা বাংলাদেশ থেকে কানাডা বা আমেরিকায় এসে প্রকৌশল পেশায় কাজ করছি তাদের প্রায় সকলেই এসব দেখে প্রথমে এক ধরণের কালচারাল শক বা ধাক্কা অনুভব করেন। আমার নিজেরও একই অবস্থা হয়েছিল।

যে দুটি দৃষ্টান্ত দিলাম তেমন ঘটনা কানাডা-আমেরিকার কর্মক্ষেত্রে অহরহ দেখা যায়। অর্থাৎ, পড়াশোনা কম বলে আপনাকে খাটো করে দেখা হবে, বা আপনি কখনো বড়ো পদে যেতে পারবেন না, বিষয়টি তেমন নয়। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট বা প্রকল্প পরিচালনা করার মতো দক্ষতা, অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতা থাকলে আপনি ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী না হয়েও কর্মক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যেতে পারেন। যেহেতু, কর্মদক্ষতা বিবেচনায় সবারই ওপরে উঠার সুযোগ রয়েছে তাই কেউ কারো সঙ্গে পদোন্নতির জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতায়ও লিপ্ত হয় না। স্বভাবতই, প্রকৌশল শাস্ত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেই তেমন কেউ নিজেদের নামের সঙ্গে 'ইঞ্জিনিয়ার' টাইটেল ব্যবহারের প্রয়োজনবোধও করেন না। তারা কখনোই নিজেদেরকে গ্র্যাজুয়েট ইঞ্জিনিয়ারদের সমকক্ষ বা সমতুল্যও দাবি করেন না, বা তা তাদের করতে হয় না। বরং, ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমাধারীরা পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যার যার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের প্রচেষ্টা চালান।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, কানাডায় প্রকৌশল শাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করলেই কেউ তার নামের আগে বা পরে 'ইঞ্জিনিয়ার' টাইটেল ব্যবহার করতে পারেন না। এমন কি পিএইচডি ডিগ্রি থাকলেও কেবলমাত্র একাডেমিক ডিগ্রির সুবাদে নামের সঙ্গে 'ইঞ্জিনিয়ার' টাইটেল ব্যবহার করা যায় না। অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্য। ইঞ্জিনিয়ার টাইটেল ব্যবহারের উপযুক্ততা অর্জন করতে একজন ডিগ্রিধারীকে কোন প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ারের তত্বাবধানে কয়েকবছর কাজ করতে হয়। অতঃপর ওই প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ারের প্রত্যয়ন বা রেফারেন্স নিয়ে প্রফেশনাল/রেগুলেটরি বডি, যেমন, প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার্স অন্টারিও (পিইও), তে আবেদন করতে হয়। প্রফেশনাল এথিক্স বা পেশাগত নৈতিকতার পরীক্ষাও পাশ করতে হয়। সার্বিক বিবেচনায় প্রফেশনাল বডি আবেদন অনুমোদন করলে তবেই 'ইঞ্জিনিয়ার' টাইটেল ব্যবহার করা যায়। কানাডায় একজন প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার হতে কমপক্ষে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি থাকতে হয়। অনেক দেশে, যেমন ব্রিটেন, প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার হতে প্রকৌশল শাস্ত্রে কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হয়। সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাজের অভিজ্ঞতা তো লাগেই।

টাইটেল বা খেতাবপ্রাপ্ত কোন প্রকৌশলী তার রেগুলেটরি বডি, যেমন পিইও, নির্দেশিত প্রফেশনাল এথিক্স (পেশাগত নৈতিকতা) মেনে চলতে বাধ্য। অপেশাদারী আচরণ, যেমন, ঘুষ নেওয়া বা অন্যভাবে প্রভাবিত হওয়া, সহকর্মীদের সঙ্গে অনৈতিক আচরণ, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, ইত্যাদির অভিযোগে অভিযুক্ত হলে বা তার প্রমাণ পেলে তাকে দেওয়া 'ইঞ্জিনিয়ার' খেতাব স্থগিত বা বাতিল করার বিধান রয়েছে। তেমন ঘটনা প্রমাণিত হলে যত বড়ো ডিগ্রিধারীই হোন, তিনি 'ইঞ্জিনিয়ার' টাইটেল ব্যবহারের অযোগ্য ঘোষিত হতে পারেন। এমন উদাহরণ কানাডা-আমেরিকায় অসংখ্য। বাংলাদেশের পরিবেশের সঙ্গে উন্নত দেশের তুলনা করলে আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারবেন মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে তিন বা চার বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা অর্জন যারা করেছেন তাদের নিজেদের 'ইঞ্জিনিয়ার' বা প্রকৌশলী দাবি করা কতোটা অযৌক্তিক। উন্নত বিশ্বের কোথাও তেমন নজির নেই।

উল্লেখ্য, প্রকৌশলীদের মূল কাজ উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। এ কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী এবং প্রকৌশলশাস্ত্রে ডিপ্লোমাধারী, যাদের বাংলাদেশে ডিপ্লোমা-ইঞ্জিনিয়ার সম্বোধন করা হয়, উভয় প্রকারের পেশাজীবীর প্রয়োজন রয়েছে। এখানে কারো ভূমিকা খাটো করে দেখা বা কাউকে কম বা বেশি প্রয়োজনীয় মনে করার অবকাশ নেই। ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীবৃন্দ প্রকল্পের প্রকৌশলগত প্ল্যান বা ডিজাইন সম্পন্ন করেন। অপরদিকে, মাঠ পর্যায়ে সে প্রকল্পের বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ডিপ্লোমাধারীগণ। সোজা কথা, দুপক্ষের কাউকে বাদ দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা যায় না।

প্রকৌশলী ও প্রকৌশল শাস্ত্রে ডিপ্লোমাধারী পেশাজীবীদের পরস্পরের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর পরিবেশ বজায় থাকলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, থমকে পড়বে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। তার চেয়ে বরং দুই পক্ষের পারস্পরিক বোঝাপড়া, শ্রদ্ধাবোধ ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরির মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে কেবল পেশাজীবীরা নন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দেরও এগিয়ে আসতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় কেবল ভোট সংখ্যা বা ভোট ব্যাংক বিবেচনায় রাজনীতিকরা ঢালাওভাবে প্রকৌশল শাস্ত্রে ডিপ্লোমাধারীগণের পক্ষাবলম্বন করেন। কারণ, সংখ্যায় তারা ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদের চেয়ে অধিক। ব্যক্তি স্বার্থে তারা ভুলে যান, পেশাজীবীদের যোগ্যতা বা উপযোগিতা বিষয়ে সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে নয়, যার যার প্রফেশনাল বা রেগুলেটরি বডির মাধ্যমে নেওয়া প্রয়োজন।

আবারও বলি, কর্মক্ষেত্রে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীবৃন্দের মর্যাদা বাড়াতে তাদের পদ-পদবির নাম পরিবর্তন বা তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদের সমকক্ষ বা বিএসসি আখ্যা দেওয়া কোন যৌক্তিক সমাধান নয়। তার চেয়ে বরং কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতি ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে সকল পক্ষের জন্য সহায়ক স্বাস্থ্যকর ও ন্যায়ভিত্তিক কর্মপরিবেশ তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

তবে, ডিপ্লোমাধারীদের মধ্যে যারা অধিকতর শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেছেন বা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ দক্ষতা দেখিয়েছেন তাদের পদোন্নতি কেবল একাডেমিক শিক্ষা বিবেচনায় আটকে দেয়া অনুচিত। এমনকি টিম লিড বা দলনেতা হবার সুযোগও তাদের দিতে হবে। তবে, ঢালাওভাবে সকল ডিপ্লোমাধারীকে ডিগ্রিধারী ইঞ্জিনিয়ারের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে পদোন্নতি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে একপ্রকার যুদ্ধ লাগিয়ে দেওয়া কোনভাবেই কাম্য নয়। এছাড়া, প্রকৌশল বিষয়ে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি ছাড়াই কারো নামের আগে বা পরে ইঞ্জিনিয়ার বা প্রকৌশলী টাইটেল ব্যবহারও প্রকৌশল পেশার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তথাপি তা করা হলে তা হবে 'ম্যাডাম'কে 'স্যার' সম্বোধনের মতো বালখিল্যতা, যা শেখ হাসিনা আমলে হয়েছে।

নির্মোহভাবে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে সন্দেহাতীতভাবেই বাংলাদেশে প্রকৌশল ক্ষেত্রের কর্মপরিবেশ উন্নত হবে। ফলে, উন্নতদেশের মতো ডিগ্রি প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমাধারীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত হবেন এবং একইসঙ্গে, স্নাতক প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমাধারীদের পরস্পরের মধ্যে চলমান বিবাদেরও অবসান ঘটবে বলে আমি মনে করি।

ML Gani, RCIC-IRB, Email: [email protected]

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ২:৪৮
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×