somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

র‌্যাপিড স্ট্রেপ টেস্ট

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

র‌্যাপিড স্ট্রেপ টেস্ট (RST) অথবা র‌্যাপিড এন্টিজেন ডিটেকশন টেস্ট (RADT) হল একটি দ্রুত রোগনির্ণয় পরীক্ষা যা বিভিন্ন ক্লিনিকে একপ্রকার ব্যাকটেরিয়া গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কি এর কারণে গলায় প্রদাহ হবার কারণ নিশ্চিত করে। কখনও একে স্ট্রেপ থ্রোটও বলা হয়। বর্তমানে কয়েক প্রকার স্ট্রেপ টেস্ট রয়েছে, প্রত্যেকটা প্রযুক্তি প্রত্যেকটির থেকে ভিন্ন। তবে যেভাবেই হোক, সব গুলোর উদ্দেশ্য একই থাকে আর সেটা হল রোগীর গলা থেকে কাঠিতে করে নমুনা সংগ্রহ করে সেখানে GAS এর উপস্থিতি সনাক্ত করা।

প্রয়োগ:

একটি র‌্যাপিড স্ট্রেপ টেস্ট কখনো কখনো একজন চিকিৎসককে সাহায্য করে থাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে যে রোগীকে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হবে কিনা, বিশেষত যা সচরাচর একপ্রকার গলার প্রদাহ -ফ্যারিনজাইটিস সনাক্ত করতে সহায়তা করে। সাধারণত এই অসুখটা হয় ভাইরাসের কারনে কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে (২০% থেকে ৪০% বাচ্চাদের মধ্যে, ৫% থেকে ১৫% বড়দের মধ্যে) এই প্রদাহ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের কারনেও হতে পারে।ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া উভয় সংক্রমনের উপসর্গ একই রকম কিন্তু ব্যাক্টেরিয়ার কারনে ফ্যারিনজাইটিস হলে সেটাকে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগে ভালো করা যায়। যেহেতু ব্যাক্টেরিয়াল ফ্যারিনজাইটিস এর মূল কারণ হল গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কি, তাই রোগীর গলায় এর নমুনা পাওয়া গেলেই এটা চিকিৎসককে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করার সিন্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পারে। গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কি ফ্যারিনজাইটিস হল একপ্রকার সীমাবদ্ধ প্রদাহ যা কিনা কোন ওষুধ ব্যবহার ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। তারপরও এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করলে সেটা রোগের স্থায়ীত্ব এবং প্রাবল্য (এবং কোন কোন ক্ষেত্রে, যদিও খুব দুর্লভ) রোগের জটিলতর অবস্থা হওয়া থেকে কমায়।

কেবল গলার রোগের চিকিৎসা করা ছাড়াও র‌্যাপিড স্ট্রেপ টেস্টের আরো বেশকিছু সুবিধা আছে। এটা করার কারণে বোঝা যায় যে রোগীর আসলেই ব্যাক্টেরিয়াল প্রদাহ হয়েছে, ভাইরাল প্রদাহ হলে রোগী অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট অনাকাংখিত স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে বেঁচে যায়, যেখানে এন্টিবায়োটিক কার্যকরী নয়।

কিছু দেশের স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী ফ্যারিনজাইটিসের রোগীকে র‌্যাপিড স্ট্রেপ টেস্টের করানোর পরামর্শ আছে, আবার কোথাও কোথাও নিষেধ করা আছে। ইউরোপিয় মানের তুলনায় আমেরিকান স্বাস্থ্যগত গাইডলাইন আরএসটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে আছে। স্বম্ভবত তৃতীয় বিশ্বে র‌্যাপিড স্ট্রেপ টেস্টের প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হবে যেহেতু এসব এলাকায় গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কি এর সংক্রমন বেশি এবং পরীক্ষাটি এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী। কিন্তু দু্ঃখজনকভাবে সেইসব এলাকায় এখনও পর্যাপ্ত গবেষনা হয়নি।

পরীক্ষা করার কাঠি থেকে প্রাপ্ত নমুনার মাইক্রোবিয়াল কালচার হতে পারে আরএসটির একটি কার্যকরী অথচ তুলনামূলকভাবে সস্তা বিকল্প যা তুলনামূলকভাবে বেশি স্পর্শকাতর এবং নির্দিষ্টতা রয়েছে। তারপরও, এই কালচার করতেও বিশেষ ব্যবস্থা এবং যন্ত্রপাতি লাগে এবং পরীক্ষার ফলাফল বের হয়ে আসতে ৪৮ ঘন্টা সময় লাগে যেখানে র‌্যাপিড স্ট্রেপ টেস্ট মাত্র ময়েক মিনিটে ফলাফল প্রদান করে।

প্রক্রিয়া:

প্রথমে রোগীর গলা থেকে কাঠির মাধ্যমে মিউকাস সংগ্রহ করা হয়। বেশিরভাগ টেস্টেই নমুনাটুকু একটি রিএজেন্টের সংস্পর্শে আনা হয় যেখানে এমন কিছু এন্টিবডি থাকে যা গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কির এন্টিজেনের সাথে একপ্রকার বন্ডিং তৈরী করে। যদি দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন আসে তাহলে ফলাফল পজিটিভ বলে ধরে নেওয়া হয়। প্রধানত তিন ধরনের আরএসটি আছে: প্রথমটি হল ল্যাটেক্স ফিক্সেশন টেস্ট যেটা ১৯৮০ সালে আবিস্কৃত হয়েছিল এবং বর্তমানে একেবারে বিলুপ্ত। এই পদ্ধতিতে কিছু ল্যাটেক্স বিডস/ রাবারের বল ছিল যেগুলোতে এমনসব এন্টিজেন মাখানো থাকত যাতে গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কির এন্টিবডি থাকলে সেগুলো রবারের বলের সাথে এঁটে থাকত।
দ্বিতীয়ত, একটি ল্যাটারেল ফ্লো টেস্ট যেটা এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এখানে নমুনটিকে একটি নাইট্রোসেলুলার ফিল্মের সংস্পর্শে আনা হয়। গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কির এন্টিজেন থাকলে এগুলো ফিল্মের একদিক থেকে আরেকদিকে চলে যাওয়ার সময় এন্টিবডির সাথে মিলে একটা দাগ ফেলে।
তৃতীয়ত পদ্ধতিতে, অপ্টিকাল ইমিউনোএ্যাসে ব্যবহার করা হয় যা সর্বাধুনিক এবং খরচ সবচেয়ে বেশি। এখানে নমুনাকে কিছু পরিচিত এন্টিবডির সাথে মিশানো হয় তারপর বিশেষ স্তর লাগানো ফিল্মের সংস্পর্শে আনা হয়। এন্টিজেন থাকলে (বা না থাকলে) ফিল্মটি রং পরিবর্তন করে।

ফলাফল নিরূপণ:

র‌্যাপিড স্ট্রেপ টেস্টের মাধ্যমে গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কির উপস্থিতি নির্ণয় সাফল্যের শতকটা হার ৯৫% (কোন কোন গবেষনায় এটা ১০০% এর কাছাকাছি বলেও দাবি করে)। তাই ধরেই নেওয়া হয় টেস্টের ফলাফল পজিটিভ আসলে সেখানে গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কির উপস্থিতি রয়েছে। তারপরও, ৫% থেকে ২০% মানুষ তাদের গলায় গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কি বহন করে অথচ তাঁদের গলায় কোন প্রদাহের লক্ষন বহন করে না। তাই কারো গলায় গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কি থাকলেই যে সে ফ্যারিনজাইটিস এর রোগী এমনটি দাবী করা যাবে না। ল্যাটারেল ফ্লো পদ্ধতির র‌্যাপিড স্ট্রেপ টেস্টের স্পর্শকাতরতা ৬৫% থেকে ৮০% পর্যন্ত কম। তারপরও পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল আসলে তাকে গ্রুপ এ স্ট্রেপটোকক্কি ফ্যারিনজাইটিস নয় এমনটা বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না যেটা কিনা মাইক্রোবিয়াল কালচারের তুলনায় একটি উল্লেখযোগ্য অসুবিধা, যার স্পর্শকাতরতা ৯০% থেকে ৯৫% পর্যন্ত। যাইহোক, নতুন অপ্টিকাল ইমিউনোএ্যাসে টেস্টটি ৯৪% পর্যন্ত সংবেদনশীল বলে গবেষনার রিপোর্টে পাওয়া গেছে।

যদিও উপসর্গহীন জীবানুধারকের ক্ষেত্রে একটি র‌্যাপিড স্ট্রেপ টেস্ট করানো আর না করানোর ভেতর কোন পার্থক্য থাকে না, বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই আর এস টি'র ফলাফল পজিটিভ আসলে গলায় ঘাঁ হওয়া রোগীকে এ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দেন। যুক্তরাষ্টের বিশেষজ্ঞগণ ফলাফল নেগেটিভ আসলে একটি মাইক্রোবিয়াল কালচার করার পরামর্শ দেন যেখানে ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞরা আরএসটির ফলাফলেই সন্তুষ্ট থাকেন।

(লেখাটি মূলত উইকিপিডিয়া থেকে পাওয়া মূল ইংরেজী নিবন্ধের বাংলা অনুবাদ)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৯
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×