ছবি: anichkamiqayelyan.wordpress.com
শ্রীকান্ত আর ইন্দ্রনাথ মিলে উপলব্ধি দিয়েছিল ___জাগতিক সম্পর্কগুলোর মধ্যে কোনটা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পাই (যেমন: মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন), কোনটাবা (বিবাহ) জৈবিক কারণে গড়ে নেই। কিন্তু একটাই সম্পর্ক যেটা আমাদের নিজের গুণে, নিজের যোগ্যতায় ভর করে অর্জন করতে হয়। জাগতিক সম্পর্কগুলোর মধ্যে মাত্র একটা।
বন্ধুত্ব!
আজকের গল্প সেই অর্জন করা সম্পর্ক নিয়ে। বন্ধুত্ব নিয়ে।
দু'বন্ধুর একজন (বব) বিশবছর আগে দেয়া কথা অনুযায়ী অন্য বন্ধুর সাথে দেখা করতে হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে শিকাগো থেকে নিউ ইয়র্ক এসে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে নির্ধারিত স্থানে। গল্পের সময়টা মোবাইল, ইমেইল, ফ্যাক্সের আগের সময়ের। তাই বব জানে না বন্ধুটি বেঁচে আছে কিনা। আর বেঁচে থাকলেও বিদায়ী আবেগে আপ্লুত উঠতি মনের দেয়া প্রতিশ্রুতি তার মনেও আছে কিনা। কিন্তু ববের আচরণে সেসবের সন্দেহ বিন্দুমাত্র আছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। যদি থাকতো তাহলে প্রায় অনিশ্চিত অসম্ভবের আশায় এতটা পথের ধূলো উড়িয়ে কে আসে? তারওপর যখন নিজের আথির্ক অবস্থা খুবই ভালো?
একটা কথাই তার চেহারায় ভেসে আছে শুধু। বন্ধু!
দেখা হবে বন্ধুরে!
আর অন্যজন (জিমি); 'কাজ-কাম কিছু পেয়েছে কিনা কে জানে! কথা তো বিশ বছর পরে দেখা হবে, কিন্তু যদি কোনো কারণে আগেই আসে? না জানি কখন এসে ফিরে যায়' এ ভেবে নিয়েছে শহরের পাহারাদারের চাকরি!
কী চিন্তা!
বন্ধুত্বের লড়াইয়ে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর!
অনেকটা "ভীর-জারা"র মতো। বিশ বছর ধরে পরদেশে পরবাসে জেল বসে জারার এক পায়ের নুপুর সযত্নে রেখেছিল ভীর। হাতেই থাকত। যেন প্রেমের তসবি। জপ করছে সর্বদা।
বিচারের শেষ দিনে বিশেষ সাক্ষাতের ক্ষণে ভীর অতি যত্নে গুছিয়ে রাখা সেই নুপুর পকেট থেকে বের করে জারাকে দেখায়। চোখের খুশিতে অধর কোণের চাঁপা হাসিতে যেন বলছে__
"দেখো জারা! দেখো। তোমার একমাত্র স্মৃতিকে আমি কীভাবে, কত যত্নে আগলে রেখেছি! কিভাবে জপছি তোমারে ভালোবাসার তসবি করে তোমার হারিয়ে যাওয়া নুপুরে! দেখো! আমার ভালোবাসা তোমার ভালোবাসাকে ছাপিয়ে গেল। তুমি জিতেছ, কিন্তু আমি হারিনি।" কিন্তু তখন তো আর বোঝেনি ভীর তার জন্যে কী অপেক্ষা করছে ধীরে ধীর।
জারার বাড়িয়ে দেয়া হাত দেখে__
"দাড়াও, দাড়াও আমি পরিয়ে দেই"-- করে পরাতে গিয়ে দেখে এক-পায়ে-নুপুর-পরা জারার সেই নুপুর-হারানো-পা খালি। সে জেনেছিল ভীর মরে গেছে তাই বাকি জীবন নুপুর-খোয়ান-পা-কে খালি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল!
তেমনি বব ভেবেছিল যে, হাজার মাইল পাঁড়ি দিয়ে এসেছি, আমি-ই জিমিকে বেশি ভালোবাসি। শেষের আগে সে বোঝেই নি ভালোবাসার এ দৌঁড়ে জিমি তারে অনেক আগেই পেছনে ফেলে গেছে।
সেদিন জিমি-ববের আলাপ হয়েছিল ঠিকই তবে অচেনা পরিচয়ে। আগন্তুক আর অফিসার হিসেবে। জিমি ববকে চিনতে পেরেছিল কিন্তু পরিচয় দেয়নি। কিন্তু কেন দেয়নি?
আর বব জিমিকে চিনেছিল জিমি চলে যাবার পর। কিভাবে চিনলো?
এতো ভালোবাসা এতো ত্যাগের পরেও কেন জিমি পরিচয় গোপন করল?
বন্ধুত্ব নষ্টের মূলে মূলত দু'টো কারণ থাকে। নারী নয়তো অর্থ। কিন্তু জিমির মুখ যে আঁটকে রেখেছিল যে সে এ দু'টোর কোনোটাই নয়; সে অন্য কেউ। অন্য কিছু।
কী সেটা?
সেটার বর্ণনা আছে জীবনে প্রথম কোনো লেখকের বই পড়ে মেরে দেয়ার ইচ্ছে জাগা ও'হেনরির আফটার টুয়েন্টি ইয়ার্স বইয়ে।
Ohh! O' Henry. ইউ বিউটি। অ্যাজ সুইট অ্যাজ আ ভ্যালেন্টাইন'স কিস্।
বই পড়ি।
জীবন গড়ি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০২২ দুপুর ১:৪৪