somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূত লেখক

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকেই ‘ghost writer বা ভূত লেখক’ এর কথা শুনেছেন। কেউ কেউ দেখেও থাকবেন। যে সকল লেখক অন্যের জন্য লিখে দেন তারা সেই লেখক। এঁরা অনেক কষ্টে থাকেন। কোথাও লেখা প্রকাশ পায় না। কেউ জিজ্ঞেস করেন না। অনেক আশা-প্রত্যাশার মৃত্যু নিজের বুকে ধারন করেন। মন-সাধ-আহলাদ কফিনে বেঁধে দৃষ্টি ভেজান।

নিজের লেখা অন্যের নামে যখন প্রকাশিত হয়, কেমন লাগে? উপলব্ধি? এমন অনুভূতির কথা বলি। তখন একটি দৈনিকে কাজ করি। অনেক কবি-সাহিত্যিক-লেখক-নিবন্ধ প্রদায়ক আসেন। চা-সিগারেট চলে। সরস আড্ডা। এসবের ফাঁকে সম্পাদকীয় লিখি। অন্যের লেখা সম্পাদনা করি। পরিচয় হলো, এক প্রেস-মালিকের সঙ্গে। শহরের নামিদামি প্রেস। তাঁর একটি প্রতিবন্ধী উন্নয়নের সংস্থা আছে। তিনি পরিচালক।

একদিন চেপে ধরলেন, তাঁর জন্য একটি বক্তৃতা লিখে দিতে হবে। অনুরোধে ঢেঁকি গেলা। না বলতে পারি না। সৌজন্যতার খাতিরে লিখে দিলাম। তারপর এক সন্ধেয় যথারীতি শহরের অডিটোরিয়ামে আলোচনা অনুষ্ঠান। দর্শকের সারিতে ভিআইপি সিটে বসে আছি। পরিচালক উঠলেন। ভাষণ পড়লেন। পরের লাইনে কী আছে সব মনে পড়ছে আমার। অদ্ভুত-কিম্ভুত উপলব্ধি। এই হলো ভূত লেখক। দেশের বড় বড় রাজনীতিক যে সকল ভাষণ পড়েন, সে-সবের বেশিরভাগ ভূতগণ লেখেন। বিশ্বাস হয় না। চোখ-কান খোলা রাখুন। বুঝতে পারবেন।

তারপর অন্য এক ঘটনা। বিকল্প পেশা হিসেবে বিভিন্ন এনজিওর জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা, ব্রুশিয়র, প্রোফাইল, প্রতিবেদন, পলিসি ম্যানুয়াল লিখে দিই। দুটো পয়সা পাই। এক পরিচালক, যিনি আবার বেসরকারি কলেজের শিক্ষক; কাজ দিলেন। একটি শিরোনাম। তার উপর প্রবন্ধ লিখে দিতে হবে। অগ্রিম টাকা পেলাম। লেখা হলো। সম্পাদনা হলো। রেফারেন্স নির্ঘন্ট সব হলো। তিনি গোস্ত-ভাত খাওয়ান। কমলা-আপেল-মিষ্টি। কত কি! পরে জানলাম, এটি তার এমফিল থিসিসের কাজ। কোনোদিন আর যাই না। অনেকদিন পর রাতে হাজির। এবার একটি প্রবন্ধ লিখে দিতে হবে।আগের তুলনায় আরও সহজ বিষয়। অভাবগ্রস্ত মানুষ কী করি! বললাম, -

‘ভাই পারব না। উইনরক-এর জন্য পিপি লিখছি।’

তিনি বেশ তাগাদা দিলেন। অনেক সম্মানীর লোভ। কিন্ত টলে ওঠা সম্ভব নয়। তারপর দেড়-দুই বছর চলে গেল। একদিন মোবাইল বেজে ওঠে।

‘কী ভাই আসেন না যে...আসবেন। আমার পিএইডি হয়ে গেছে।’

কৌতূহল বড় নাছোরবান্দা। গেলাম। দেখি, পাঁচ-ছয় শত পাতার বিশাল স্ক্রিপ্ট। সুন্দর করে বাইন্ডিং। তার এনজিও-র একজন সিনিয়র কর্মকর্তা পাশে বসে আছেন। তিনি এগিয়ে দিলেন সেই বই। জিজ্ঞেস করি, -

‘কে করে দিল?’
‘আ রে ভাই আপনার মতো কত মানুষ আছে। রংপুরের এক প্রফেসর করে দিল। তিনিও পিএইচ ডি।’

কথা মুখে এসেছে, কত খরচ হলো? বললাম না। এ দেশে অনেককিছু হয়। টাকা থাকলে কত কি! গাঁজাখোরও কবি-সাহিত্যিক হতে পারেন। টাকা না থাকলে লেখার জন্য নিবেদিত মানুষ ভূত লেখক হোন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৫৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×