somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাইকর
অনেক বড় মাপের একজন মানুষ হতে চাই। কারণ- ভালোবাসার মানুষটির নাম ছোট্ট কোন মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাইনা, ভালবাসার মানুষটির নাম বড় কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাই।আই লাভ ইউ (মা)

ভন্ড কাইকর। ( ছোট গল্প)

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক জীবনে প্রেমের খেলা খোলা আকাশের বোকা বাতাসে মিশিয়ে দিয়েছি তেত্রিশটি। আমার এসব প্রেমলীলা আকাশের বায়ুকে দূষণ করছে। নীল আকাশের ডানা মেলা পাখি গুলো এখন নাক ছিটকায় আর কুহু কুহু গলায় আমাকে বলে, শালা তুই কাইকর।এক জীবনে ভালো হবি কবে!

মাধবীলতা! ওর জীবনটা বুড়িগঙ্গা নদীর ঘোলা পানিতে ভেসে বেড়ানো কচুরিপানার মতো। দেখতে দিব্বি মাধুকরী! নাক না ওঠা ইলিশের প্রথম সন্তানের মত। তাকে দেখলে বুড়ো জেলেগুলো ডুবে মরে, মাঝিগুলো বেঁচেও মরে! ঠোঁটের দেড় ইঞ্চি নিচে ছোট্ট কালো জিরার মত দেখতে একখানা তিল। হয়তো কায়দা করে শাহবাগের কোন দোকান থেকে কিনে জাদুকরী ভাবে লাগিয়েছে।

আমার নাম কাইকর। খোলা আকাশে প্রেম উড়ানো মানব আমি। আমার উড়ানো প্রেমের গন্ধ এখন আকাশে বাতাসে! নগরীর আট-দশটা সহজ সরল আলাভোলা টাইপের দেখতে মানুষ আমি। আমাকে দেখে ভদ্র সমাজের অভদ্র মানুষ ভদ্র হয়ে যায়।

মাধবীলতার সঙ্গে সম্পর্কটা হয় মরুভূমিতে পানি আসার মত! এক লাল-নীল সন্ধ্যায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ছাদের কার্নিশে বসে মিছেমিছি বিশাল সাইজের সাদা থালার মতো দেখতে চাঁদের সঙ্গে কথা বলছি। কিছুটা ছিটগ্রস্ত মানুষের মত। কিছু প্রেমিক পাখি পাশের বিল্ডিং এর পাশ দিয়ে উড়ে যাবার সময় আমাকে ভদ্র গলায় অভদ্রভাবে বলে যায়, "তোর মত চারাল মানব দেশে একটাও নাই রে শালা। তোর জন্য হালকা প্রেম করেও শান্তি পাচ্ছি না কোথাও! সব জায়গায় গন্ধ। আকাশের শহরটাকে তুই কান্নায় ভাসিয়ে দিচ্ছিস। তুই শালা মরলে চোর হবি।" আমি শুনে ফিক করে দাঁত বের করে হেসে দেই। পাশের বেঞ্চে বসা ছিল সুন্দরী রমণী মাধবীলতা। সমস্ত কিছুকে নিস্তব্ধ করে দিয়ে সে আমাকে পাগল বলে ডাকে মানুষের ভিড়ে। আমি সহজ সরল একটা কষে হাসি দিয়ে তার চোখের দৃষ্টির মাঝ-বরাবর গিয়ে দাঁড়াই।
সে আমাকে বিনয়ী গলায় অনুরোধ করে তার পাশে গিয়ে বসতে। আমি তার মনকে ছিনিয়ে নেবার জন্যে দুটো কোলড্রিংস অর্ডার করি।

দুটো কোল্ড্রিংসের পাশাপাশি দুটো মানব মানবী। দুটো মন, দুটো দেহ ও দুটো ইন্দ্রিয়।শহরের সহজ-সরল হাসিটার প্রেমে খুব সহজেই সবাই আকৃষ্ট হয়। মাধবীলতাও হয়েছে।

প্রথমে কোল্ড্রিংসের মধ্যে বসানো চিকন পাইপে ঠোঁট। পরে হাতে-হাত, চোখে-চোখ ও মনে-মন। কিছু সময়ের জন্য ব্যস্ত নগরীর কোলাহল নিস্তব্ধ। মিহি বাতাসের সঙ্গে নতুন এক প্রেমের গন্ধ। আরো কিছুটা আকাশের বাতাসকে দূষিত করার জন্যে!

শহরে নতুন করে নতুন প্রেমের জন্ম। নতুন ভোরের আশায়। আমার ও মাধবীলতার প্রেমটা কলমি ডগার মত তাড়াহুড়া করে বড় হতে শুরু করে। কিছু মিথ্যে আশায়, কিছু স্বপ্নের আশায়।

মাধবীলতা রোজ বিকেলে আমায় কবিতা আবৃত্তি করে শোনায়। কোকিল কন্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনায়। আমি পাগলের মত তা শুনি। কোন কিছুর অপেক্ষায়!

আমাদের সম্পর্কের একশোতম দিনে মাধবীলতাকে নিয়ে আমার গোপন কুঠুরিতে যায়। যেখানে মাঝেমধ্যে অন্ধকারে দিন নেমে আসে! বিশেষ দিনে বিশেষ কিছু উপহার দেবার জন্যে শাহবাগ থেকে লাল চুড়ি, লাল টিপ ও লাল বেনারসি শাড়ি কিনি তার জন্যে। মাধবীলতা হাসিমুখে তা পড়ে এসে দাঁড়ায় আমার সামনে। তাকে দেখতে শেষ বিকেলের শেষ সময় সূর্যের মতো লাগে।

আমি অমানুষ। আক্ষরিক অর্থেই অমানুষ। হঠাৎ করে মাধবীলতাকে সলিড রডের একখানা হাতুড়ি দিয়ে কপালে পরা লালটিপের মাঝ-বরাবর কষে দুটো বাড়ি দেই। সে অজ্ঞান হয়ে পাকা মেঝেতে দুমড়ে পরে। আমি এক অট্টহাসি দিয়ে ভবলীলা সাঙ্গ করি। শেষ সময়টায় ধারালো ময়লা লোহার কাঁচি দিয়ে তার হাত পায়ের নখ ক্যাচ ক্যাচ করে কেটে ফেলি। কিছু রাতের পাখি দু ফোটা চোখের জল ফেলে মন কষ্টে উড়ে যায় খোলা আকাশে। আমি একটু হাসি....।

মাধবীলতার চোখ দুটো আমার দিকে প্রহসনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। আমি আবারো হাসি হো হো করে। এভাবে যে কত প্রেমের ভবলীলা সাঙ্গ করে খোলা আকাশের বাতাসে মিশিয়ে দিয়েছি তার হিসেব কষা কঠিন। আমি কাইকর। এক বহুরূপী অমানুষ।

বোকা শহরের কত রমণী যে, বোকা হাসির লুকানো ফাঁদে পা দেয় তার হিসেব মিলাতেও নগরীর মাঝ বরাবর একখানা বিশাল সাইজের যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর বসাতে হবে।

"আলাভোলা সহজ সরল হাসির মাঝে লুকানো থাকে বিশাল সাইজের এক ভন্ড। এই শহরের ভন্ড। "
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৬
১৭টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×