somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাইকর
অনেক বড় মাপের একজন মানুষ হতে চাই। কারণ- ভালোবাসার মানুষটির নাম ছোট্ট কোন মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাইনা, ভালবাসার মানুষটির নাম বড় কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে বলতে চাই।আই লাভ ইউ (মা)

আমারে বড় ঢাকাতে নিয়া যাও আল্লাহ! ( অণুগল্প)

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অমন কথা কইয়েন না মহাজন। আপনার দুইডা পায়ে পরি। আমার পেটে লাথি মাইরেন না। নাজমার মা কইছে, ঢাকা থাইক্যা ফেরত আইসা আপনার হগল পাওনা মিটাইয়া দিবো। মহাজন আমার কান্নাকাটি দেইখ্যা মুখগালি দিয়া কইলো, ফকিরের জাত বেজ্জমা এইবারের মতো মাফ কইরা দিলাম। যা এইহান থাইক্যা।

আমার বউয়ের নাম কুলসুম। গ্রামের মানুষ সুন্দরী কুলসুম কইয়া ডাহে। গ্রামের হগল মাইনষের চোখ ফাকি দিয়া বিয়া করছিলাম কুলসুমরে। আমারে খুউব ভালাবাসে কুলসুম। পুটি মাছ দিয়া তরকারি রান্না কইরা গরম ভাতের লগে মিশাইয়া খাওয়াই দিতো আমারে।

আমার বউ আর আমি মিলামিশা সুন্দর কইরা ঘর-সংসার সাজাইছিলাম। আমি নদীতে নৌকা চালাইয়া মাছ ধইরা নিয়া আইতাম আর কুলসুম তা সুন্দর কইরা মাটির চুলায় আগুন জালাইয়া মাটির পাতিলে ঝোল বেশী দিয়া রান্না কইরা রাইখতো। আমি সারারাইত নদীতে ইট্টু ইট্টু হারিকেনের আগুন জালাইয়া মাছ মারতাম। শেষ রাইতে মাজায় গামছা কইষা বাইন্দা ধান ক্ষেতের আয়েল দিয়া হাইটা হাইটা বাড়ীতে আইতাম। কুলসুম আমার লাইগা কাপড়ের আচল বিছাইয়া বইয়া থাকতো উঠানের মইধ্যে। আমি তারাতাড়ি কইরা তারে গিয়া জড়াই ধরতাম। সে মুখবাকা কইরা কইতো, আমার আর ভালা লাগেনা একা একা সারারাত বইয়া থাকতে। আমি তার রাগকপালে চুমা দিয়া হাইসা কইতাম, তাইলে ঘরের মইধ্যে আরেকটা মানুষ আনুনের ব্যবস্থা করতে হইবো। সে লজ্জা পাইয়া কইতো, নিষ্টুর জানি কোনহানকার। আমাগো মাইয়া হইলে তোমার লাইগা আর বইয়া থাকুম না দেইখো। আমি হাইসা হাইসা কইতাম, আইছ্যা বউ। তারপর দুইজন মিলামিশা মাঠির মইধ্যে বইসা চাকুম চাকুম কইরা সাদা ভাতের লগে বেশী কইরা ঝোল মিশাইয়া খাইতাম।

তারপর একদিন ছোট ঘরের ছোট সংসারে ছোট্ট একটা সাদা ফুটফুটা চাঁদের লাহান মাইয়া আল্লাহ দান করে। কুলসুম খুশি হইয়া মাইয়াডার নাম রাখছিল নাজমা। আমি খুশিমনে কান্না করছিলাম খুব সেদিন।

আমার মাইয়াডা ছোট ঘরের মইধ্যে বড় হইতে শুরু করে। দুই বছরের মাথায় কি জানি নাম কয় শহরের বড় বড় ডাক্তার "ম্যাল্যারিয়া"ওই রোগ মাইয়ার ধরা পরে। একদিন শেষ রাইতে নদী থাইক্যা মাছ মাইরা আনুনের পর দেখি কুলসুম উঠানের মইধ্যে আচল বিছাইয়া বইসা রইছে। তার চোহে ছিল জল। আমি তার চোহের জল মুইছা দিতে গেলেই কুলসুম জড়ায় ধইরা আমারে হাউমাউ কইরা কান্না শুরু কইরা দেয়। আমাগো ছোট ঘরের বড় মাইয়াডা সেদিন বাইচা ছিলোনা।

নদী থাইক্যা মাছ মাইরা যে টাকা কামাইতাম তা দিয়া সাদা মোটা চালের লগে কিছুমিছু তরকারি পাওয়া যাইতো। কিন্তু যন্ত কইরা মাটির ছোট ব্যাংকে আর টাকা রাখুন যাইতো না। গ্রামের জমিদারের কাছ থাইক্যা সামাইন্য কিছু টাকা হাওলাত কইরা মাইয়াডার কবর জিয়ারত করছিলাম। তার তিনমাস পরই আমারে সবুজ ধান ক্ষেতের মধ্যে থাইকা সবুজ একটা সাপ কামুড় দেয়। কবিরাজ- ডাক্তার খুব চেষ্টা চালাইয়া আমারে বাচাইতে পারলেও আমার এক পা আর এক হাত বাচাইতে পারে নাই। এহন আমি অভিশাপের জীবন ঘরে বইসা পার করি। পাশের বাড়ীর এক দিদি আমারে নিজের ভাইয়ের মতোন কইরা এহন পালে।

আমার চিকিৎসাকালে আরো মোটা টাকা জমিদারের কাছ থাইক্যা কুলসুম কান্নাকাটি কইরা ধার নেয়। সেই টাকা এহনো শোধ করবার পারি নাই। জমিদার চাচায় সেই টাকার ভয় দেখাইয়া আমাগো থাকুনের শেষশম্বল বাড়ীটুকুন নিজের নামে লেইখা নিতে চায়।

তারপর কুলসুম গ্রামের এক চাচার হাত ধইরা ঢাকা গিয়া বড়লোক বাড়ীতে কাম নেয়। মাস শেষে সামান্য কিছু টাকা পাঠায়। তা দিয়া কোনরহম টাইনাটুইনা চলি।

সেদিন কুলসুম ছোট ফোনে কল দিয়া বড় কইরা কইলো, ঢাকা থাইক্যা ফেরত আইসা জমিদার চাচার সব টাকা শোধ কইরা দিয়া আমারে ঢাকা নিয়া যাইবো। কুলসুমের আশা দেহানো কথা শুইনা আল্লাহরে মনে মনে বড় কইরা কই, আমারে বড় ঢাকাতে নিয়া যাও আল্লাহ। যেই ঢাকাতে আমার মাইয়া সুখে শান্তিতে ঘুমাইতাছে ওই ঢাকাতে যাইবার চাই। আল্লাহ তুমি আমারে নিয়া যাও।

~ আব্দুল্লাহ আল মামুন(কাইকর)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×