বান্দরবানের লামার দুর্গম পাহাড়ের চারশত পাহাড়ি বাঙালি শিক্ষার্থীদের সামনে এখন নতুন স্বপ্ন; ‘অলিম্পিকে সোনা আমরা জিতবোই’। অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের লক্ষ্যকে সামনে রেখে তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে উঁচু মাঠ ‘গ্রাউন্ড অলিম্পিয়ান’। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা হাজার ফুট।
গত ২৬ নভেম্বর শুক্রবার মশাল জ্বালিয়ে এ মাঠের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আলোকিত মানুষ গড়ার অগ্রপথিক বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এ মাঠের ক্রীড়াবিদ ও খেলোয়াড়দের কাছ থেকে শুধু একটা গোল্ড মেডেল না, প্রতিবার ৫টা/১০টা গোল্ড মেডেল আসবে। কারণ এখানকার শিশুদের দেখে খুবই আশা জাগে। যেহেতু এদের মধ্যে স্বপ্ন জেগেছে এবং এ স্বপ্নের মধ্যে বিশ্বাস আছে, কষ্ট করার সাহস আছে আর অনুশীলন করার মাঠ আছে, কাজেই এখান থেকে আমরা অনেক অনেক গোল্ড মেডেল পাবো। তিনি বলেন, ‘অলিম্পিক থেকে আমি গোল্ড মেডেল আনবোই’- এ বিশ্বাস যদি কোনো শিশুর মধ্যে সত্যি সত্যি জাগে তাহলে সে আনবেই। কারণ মানুষ যা ভাবতে পারে, সে তা-ই করে, তা-ই হয়।
সমতল ভূমির ক্রীড়াবিদদের চেয়ে পাহাড়ি বা উঁচু স্থানে প্রশিক্ষণ পাওয়া ক্রীড়াবিদদের দম বা স্ট্যামিনা বেশি থাকে। ফলে এথলেটিকস্ এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং নানা ধরনের খেলায় তাদের পারদর্শিতা অনেক বৃদ্ধি পায়। চীনের ক্রীড়াবিদদের পারদর্শিতারও অন্যতম রহস্য উঁচুমাঠে প্রশিক্ষণ। এ সূত্রকে সামনে রেখেই তৈরি করা হয়েছে গ্রাউন্ড অলিম্পিয়ান। যে মাঠে নিয়মিত খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণের ফলে শিশুদের স্ট্যামিনা অন্য যেকোনো অঞ্চলের শিশুদের তুলনায় বেশি হবে। পাশাপাশি যথাযথ প্রশিক্ষণ তাদের ক্রমাগত দক্ষ করে তুলবে। টিলার গায়ে ধাপে ধাপে নির্মিত শিশুকাননের নতুন স্কুল ভবনের কাছেই আরেকটি টিলার উপরিভাগে অবস্থিত এবড়োথেবড়ো পরিত্যক্ত আনারস ক্ষেত সমতল করে এ মাঠ তৈরি করা হয়। পরিবেশের সাথে ভারসাম্য রেখে নির্মিত এ মাঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকেও দারুণ মনোরম।
গত সাত বছর ধরে কোয়ান্টাম শিশুকাননের শিক্ষার্থীরা লামা উপজেলা পর্যায়ে এবং বান্দরবান জেলা পর্যায়ে স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের প্যারেড ও ডিসপ্লে অনুষ্ঠানে প্রথম স্থান অধিকার করে আসছে। গতবছর প্রথমবারের মতো বিভাগীয় পর্যায়ে চট্টগ্রামে এসেই প্যারেড ও ডিসপ্লেতে প্রথম স্থান অধিকার করে তারা। এছাড়া, গত বছর তারা প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসে জাতীয় পর্যায়ে আন্তঃস্কুল খো-খো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় এবং যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়।
তবে কোনো মাঠ না থাকায় তাদের খেলার অনুশীলন করতে হয়েছে পুরনো স্কুল ভবনের আঙিনায়, প্যারেড করতে হয়েছে রাস্তায়। এতদিন তারা ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল বা এ ধরনের কোনো খেলায় অংশ নিতে পারে নি। এমনকি এথলেটিকস-এর ট্র্যাক বা ফিল্ড ইভেন্টের কোনো কিছুও চর্চা করার সুযোগ পায় নি। নতুন এ মাঠে তাদের জন্যে নতুন অনেক কিছু চর্চা করার সুযোগ এনে দিয়েছে। আর তাই এখন তারা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে অলিম্পিকে সোনা জয়ের।
সুবিশাল এ মাঠে কোয়ান্টাদের খেলাধুলার জন্যে ১২টি সি স, ৩টি রিং, ৩টি বার, ৩টি আপার বার, ২ সেট স্লিপার, ৮ সেট দোলনা, ১ সেট এক্রোবেটিকস, ১টি বার্মা ব্রিজ, ১টি মাংকিং রোপ ও ১টি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। মাঠের উত্তর-পূর্ব দিকে জাতীয় পতাকা ও কোয়ান্টাম পতাকা উত্তোলনের জন্যে বিজয়মঞ্চ নামে একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এর পাশে কোয়ান্টাদের জন্য ১টি সেপাক টেক্রো খেলার মাঠ, ১টি খো-খো মাঠ, ২টি বাস্কেট বল মাঠ, ২টি হ্যান্ডবল মাঠ রয়েছে।
(ওয়েব থেকে নেয়া। http://www.quantummethod.org.bd)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




