somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনা কালের খোলা চিঠি ৩

০৬ ই জুন, ২০২০ ভোর ৫:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

#করোনা_কালের_খোলা_চিঠি ৩

প্রিয় মিষ্টি দাদু,
হঠাত করেই আপনার সাথে আমার পরিচয়, বোধকরি খুব ছোটবেলায়। ছোটবেলায় আমার তো টই টই করে ঘোরার স্বভাব ছিল, আর যে সময়টায় আমি বড় হয়েছি, সেই সময়টায় আমাদের স্বাধীনতার উপর তেমন রোলার কোস্টার চলতো নাহ। কিছুটা বড় রাস্তা পার হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিলো, এছাড়া মোটামোটি বড় পরিচিত কারও সাথে কোথাও চলে গ্যালেও ঠিক সময় মতন ফিরে আসলে আর ঝামেলা থাকতো না। আর আমাদের বাসার সঙ্গেই ছিলো ছাপাখানা, আমার কাজ ছিলো কোনোমতে ঘুম থেকে উঠে ওই ফ্যাক্টরির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করা আর বিজ্ঞানীগিরি করা। আর এই কাজে মোটামোটি সবার আস্কারাই পেতাম। খালি আব্বা আসলে আমাকে এক্টু শান্ত শিষ্ট দ্যাখা যেত। তো যাই হোক, আমাদের বাসার খুব কাছেই ছিল মিষ্টির কারখানা (এখনো আছে)। আগেরকার দিনে বাসায় লোক্জন আসলে মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করাই রীতি ছিলো। তো দ্যাখা যেত বাসায় বা অফিসে কেউ হয়তো এসেছে, তাকে আপ্যায়ন করার জন্য মিষ্টি কিনতে দোকানে যেতে হবে। যেহেতু আমি ঘুরতে ভালবাসতাম, আর মিষ্টি ব্যাপারটাও মন্দ না, তাই যে মিষ্টি কিনতে যেত আমিও তার সঙ্গে চলে যেতাম।

এভাবেই কোন এক কুক্ষণে আপনার সাথে আমার পরিচয়, তো যাই হোক মোটামোটি মিষ্টির কারণেই আপনার সাথে আমার পরিচয়। পছন্দের মিষ্টি ছিলো লালমোহন আর কালোজাম, ওই দোকানে গ্যালেই মিষ্টি কেনার পর ফাউ মিষ্টি পেতাম আপনার কাছ থেকে মাঝে মধ্যেই। পরে সেটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এখনও মিষ্টি কেনার পর একটা তো খাবই।
কিছুটা বড় হওয়ার পর আপনার জীবনাচরন আমার এক্টূ অদ্ভত লাগতে থাকে। এবং অনেক প্রশ্নও এসে জমা হয়। আপনি ছিলে সংসারত্যাগি সাধু মানুষ। ছোট বেলায় তো এতো কিছু বুঝতাম না, খালি আপনার জীবনাচরণ দেখতাম, আর আপনার সব কথাই ক্যামন জানি রহস্যমূলক, জিজ্ঞেস করতাম একটা জবাব দিতেন অন্য কি জানি। মাঝে মধ্যে বিরক্তও হয়ে যেতাম, যে জিজ্ঞেস করি একটা জবাব দ্যায় আরেকটা কি আজব কাহিনি রে বাবা। তবে বড় হওয়ার পর আপনার কথার অর্থ কিছু বুঝেছি আবার অনেকটাই বুঝিনি।
মাঝে মধ্যে অদ্ভুত টোটকা পেতাম আপনার কাছ থেকে… তার কিছু কিছু আসলেই কাজের, বাকিগুলাও হয়তো কাজের, কিন্তু আমি মনে হয় ঠিক মতন ট্রাই করতে পারিনি।

এরপর একদিন আপনার সাথে গল্প করার সময় শেষ হলো, প্রকৃতির নিয়মে হয়ে গেলাম ব্যাস্ত, তবুও দূর থেকে আপনার চোখে চোখ পড়লেই, আপনি আসতেন আমার কাছে, অথবা আমি যেতাম, আর আপনার ছিল সেই চোখভরা হাসি আর মুখে, “কি খবর ভাই? আছো ক্যামন? মিষ্টি খাইবা নিকি একটা?” শেষের দিকে আমি অবশ্য ফ্রি মিষ্টি খেতে চাইতাম না, তাও মাঝে মধ্যে জোর করে দিতেন। আর হঠাত করে একটা রহস্যমূলক কথা। যার উত্তর স্বভাবতই আমার কাছে নেই। আমিও কিছুক্ষন মাথা চুলকিয়ে, বা হেসে বলতাম আচ্ছা দাদু পরে জানাবো উত্তর। আপনিও হেসে বলতেন আচ্ছা…

এভাবে থাকতে থাকতে হঠাত আপনি হারিয়ে গ্যালেন, তাও প্রায় ৫ বছর তো হবেই। কোথায় আছেন জানিনা, শেষের দিকে শরীর ভেঙ্গে গিয়েছিল বয়সের ভারে, আর কাজও ত্যামন করতে পারতেন না। সারাদিন বসে থাকতেন দোকানের একটা কোনায়, দেখলেই হাসি আর সেই এক কথা। হয়ত মালিক পক্ষের বোঝা হয়ে থাকতে চাননি তাই একদিন আবার শুরু করলেন আপনার যাত্রা….
আর আমি খুজে বেরাই সেই জটাধারী অদ্ভুত চোখের মানুষটাকে আমার পরিচিত শহরে, যার মুখে হাসি আর অদ্ভুত ভালোবাসায় ভরা ডাক…“কি খবর ভাই? আছো ক্যামন?”
ভালো কথা, আপনার নিরুদ্দেশ ভ্রমণের মাস ছয়েক আগে (সম্ভবত…) তিনটা প্রশ্ন করেছিলেন আমাকে। অন্তত সেটির ঊত্তর জানার জন্য হলেও আমার আপনাকে খুজে বের করতে হবে… আশাকরি যেখানেই আছেন ভালো আছেন…

ছবিটা সম্ভবত ২০০৯ সালে তোলাঃ তুলে দিয়েছিলো সালমান

আগের পর্ব

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২০ ভোর ৫:৩৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×