রাত সাড়ে তিনটা। চৌরাস্তার মোর।
মুষলধারে বৃস্টি হচ্ছে। কয়েকটা কুকুর রাস্তার এপার থেকে ওপারে যেয়ে আবার ফিরে এলো। মাঝে মাঝেই ভুগ ভুগ করে উঠছে, হয়তো কোনো কারণ আছে , অকারণেও করতে পারে। দোকানপাট সব বন্ধ। মোড়ের শেষ মাথায় একটা ছোট ঝুপড়ির মতো টং দোকান খোলা আছে। দোকানদার ওটার ভেতরেই থাকে, তাই হয়তো এখনো লাইট জ্বলছে সেখানে।
মাথার ওপর ছাতি নেই, একটা আধা পরিষ্কার লম্বা পলিথিন মাথায় গায়ে দিয়ে এক যুবক রাস্তার মাঝখান দিয়ে টিপ্ টিপ্ পায়ে দৌড়ানোর মতো করে টং দোকানের দিকে যাচ্ছে। মুখ পলিথিন দিয়ে ঢাকা থাকায় চেহারা চেনা যাচ্ছে না। মাঝারি গড়ন ,পাঁচ ফিট ৮ ইঞ্চি হবে হয়তো। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে তার ছায়া প্রেডাটরের মতো দেখাচ্ছে। যুবকটি দোকানের সামনে পৌঁছানোর ২ মিনিট পরেই হলো পুরো জায়গাটা কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে গেলো, হঠাৎ একটা চাপা গোঙানির শব্দ তারপর জোরে মা বলে একটা চিৎকার। কি হয়ে গেলো বোঝার কোনো উপায় নেই।
অনেক লোকজনের ভিড় , সকাল হয়ে গেছে। পুলিশের হলুদ রঙের প্লাসটিকের ফিতা দিয়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমান জায়গা ঘিরে দেওয়া। নিথর দেহ পরে আছে একপাশে, অন্যদিকে মাথা আর দুই হাত পাশের ড্রেইন এর ভেতর পরে আছে। রাতের বৃষ্টিতে লাশের রক্তগুলো ধুয়ে রাস্তার নিচু জায়গায় জমা হয়ে আছে। এতক্ষনে সেসব রক্ত জমাট বেঁধে কালো হয়ে গেছে । সবার হাতে মোবাইল, চেষ্টা করছে ছবি তুলতে। দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার হাতে কালো ওয়াকিটকি নিয়ে এদিক সেদিক থেকে লাশ দেখছেন বিভিন্ন ভঙ্গিমায়। সাথের কনস্টেবলরাও কিছু বুঝে ওঠার চেষ্টা করছে। সাংবাদিকরা এসে ভিড় করছে লাশের কাছাকাছি , বারবার পুলিশ কর্মকর্তার কাছে জানতে চাচ্ছে অনেক প্রশ্নের উত্তর।অফিসার একটু বিরক্ত হয়েই বার বার বলছেন, এখনই কিছু বলা যাবে না। লাশ মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে আপাতত। সাংবাদিকরা তখন স্থানীয় কিছু মানুষদের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করছে ঘটনার রহস্য।
ঝুপড়ির টং দোকান বন্ধ। দোকানদার মিন্টু মিয়া ওসি স্যারের পা ধরে বার বার বলছে '' আমি ঘুমাইতাছিলাম ছার, কিচু দেহিনাই ''। বারবার একই কথা বলে যাচ্ছিলো সে। পাতলা গড়নের মানুষ মিন্টু মিয়া, লম্বায় ৫ ফিট ৫ ইঞ্চি হবে। গরিব মানুষ , সহজসরল গড়নের , চোখে সুরমা লাগিয়ে রাখে সব সময়। চোখের পানিতে সুরমা গুলো ধুয়ে আজ মিন্টু মিয়াকেও বিভত্স ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে খানিক টা। বেশি দেরি না করে লাশের বডি, মাথা আর হাত দুটো একত্রিত করে সাদা লাশকভারে ভরে ভ্যান এ তোলা হলো মর্গে পাঠানোর জন্য।
চলবে
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:২৫