শুনশান বিকেল, হালকা ছিপ ছিপ বৃষ্টি পড়ছে থেমে থেমে।
চৌরাস্তার মোড়টা আজ অন্যরকম লাগছে। মানুষের আনাগোনা কম, মিন্টু মিয়ার ঝুপড়ি দোকান আজ বন্ধ। আশেপাশের কয়েকটা দোকানপাট গুলোও আজ বন্ধ। এলাকার মানুষ জন চোখ নিচু করে হেটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে।মনে হচ্ছে প্রয়োজন ছাড়া কেউ ইচ্ছে করে এই রাস্তায় আসছে না। একটা থমথমে অবস্থা। হঠাৎ এমন চঞ্চল এলাকা এরকম পানসে হয়ে যাওয়া তা বড্ডো বেমানান লাগছে।
মিন্টু মিয়া কে থানায় রাখা হয়েছে সন্দেহভাজন হিসেবে। সহজ সরল লোকটা এমন প্যাচের মধ্যে পরবে কে জানে। থানা হাজতে এসে মিন্টু মিয়া একদম শুকিয়ে গেছে। নিহত যুবকের পরিচয় ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে, যুবকের নাম রিপন , দেশের বাড়ি শরীয়তপুর। তার দূর সম্পর্কের এক খালা এসেছে থানায় নাম সখি বানু। সহজ সরল মধ্যবয়সী মহিলা। পান খায় অনেক তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। পুরোনো শাড়ি পড়া, পায়ে স্পঞ্জের চটি , সাথে একটি জরাজীর্ণ ভেনেটি ব্যাগ। হয়তো পান সুপারি রাখা আছে তাতে। ওদিকে একটা হাজতের মতো কক্ষে মনমরা হয়ে বসে আছে মিন্টু মিয়া।
কে হয় আপনার ?
আধগরম চায়ের শেষ ঢোক গিলে প্রশ্ন করলেন আশুলিয়া থানার ওসি সাহেব।
সামনে বসা সখি বানু বললো,
আ'র ভাইগ্ন্যা , এতিম পুলা। আ'র ছুডো বোনের পুলা আছিলো , বাপ মা আগেই মরছে।
বালা আছিলো পুলাডা, কারো লগে গ্যাঞ্জাম নাই , কে কইরলো এই সর্বনাশ , আল্লাই বিচার কইরবো।
বলতে বলতে ব্যাগ থেকে রিপনের একটা ছবি বের করে বুক চাপড়ে কান্না করতে লাগলো সখি বানু। কান্না থামার পর ওসি সাহেব আবার প্রশ্ন করলেন ও কি করতো , কোথায় থাকতো , আপনার সাথে শেষ কবে যোগাযোগ করছে রিপন ?
এবার কান্না থামিয়ে সখি বানু বলতে লাগলো, ''কি একটা অফিস এ চারকি করতো ,আলা চারকিডা বালা আছিলো অনেক , মগবাজার অপিশ । কিন্তু এনো কিয়ের লাইগা আইছে ইডা জানিনা।''
মগবাজার কিসের অফিস সেটা জানেন ?
মুখ থেকে চিবানো পানের বাকি অংশ ফেলে সখি বানু বললো , ''আলা কইছিলো তো কি সব বেচা বিক্রি করে বিদ্যাশ পাঠায়। তয় একটা কাগজ দিছিলো হেনো কিছু থাকপার পারে।'' ব্যাগ থেকে একটা সিগারেটের প্যাকেটের ছেড়া কাগজ বের করে ওসি সাহেবের হাতে দিলো সখি বানু। ওসি সাহেব কাগজ টা মেলে ধরলেন চোখের সামনে।
ছার , ও ছার , আমারে ছাড়বেন কহন ? আমি তো সত্যিই কইতাছি কিছুই জানিনা। ওসি সাহেব বাঁকা চোখে একবার মিন্টু মিয়ার দিকে তাকিয়ে বাহিরে বের হয়ে গেলেন। তারপর সখি বানুও মিন্টু মিয়ার দিকে অবজ্ঞার চোখে তাকিয়ে বের হয়ে গেলেন। সখি বানু বের হওয়া মাত্রই থানার সামনে কিছু ধোঁয়াশা ভাব এলো। তারপর আর সখি বানুকে দেখা গেলো না। হয়তো চলে গেছে নিজের মতো।
পরদিন সকালে চৌরাস্তার সব দোকানদার মিলে ওই খুনের জায়গাটার কাছে একজন হুজুর কে ডেকে মিলাদ পোড়ানোর উদ্যোগ নিলেন। কেউ কেউ বলছে এটা একটা ভৌতিক কান্ড। এই এলাকায় এমন কোনো খুনের নজির আগে কখনো নেই । তবে ওই পাশের বট গাছটার সাথে নাকি কয়েকটা জীন আছে। কারে কারে নাকি স্বপ্ন দেখাইছে তারা মাথা চায়, মাথা পাইলে নাকি তারা ঠান্ডা হয়ে যাবে। তাই হয়তো ওই যুবকরে এই দশা হয়েছে। তাই সবাই মিলে একটু দোয়া খায়ের করলে হয়তো বিপদ মুক্ত থাকা যাবে।
চলবে,,,,
আগের পর্ব
ধোয়া (সিজন-১)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯