somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এবার চাল নিয়ে তেলেছমাতি

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাসায় চাল শেষে হয়ে যাওয়ায় বাসার সামনে দোকানে গেলোম চাল কিনতে । দাম শুনে অবাক হলাম। ৫৬ টাকার চাল ৬৫ টাকা। কেন?
দোকানী বলল-বাজারে দাম বেড়েছে। তো অল্প পরিমাণ কিনলাম। যে দোকান থেকে সবসময় ক্রয় করি সেটা বন্ধ। ০২-০৩ দিন পর সেই দোকান খোললে তার কাছ থেকে চাল ক্রয় করলাম। তিনি আগের দামই রাখলেন। কিন্তু ০১ দিন পর দেখা হতেই জানালেন আপনি লাভবান হয়েছেন চাল এখন ৬৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

আসলে উনি জানতেন না যে দাম বেড়েছে তাই আগের দাম রেখেছে। যদি জানতেন তবে বেশি দামই রাখতেন এটা বিবেচনা করতেন না যে এ চাল তো আগের দামে কেনা তাই কম দামে বিক্রি করি। সবাই সুযোগের সন্ধানে থাকে।

বছরের এ সময় হঠাৎ চালের দাম কেন বাড়ল তা নিয়ে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন নিম্নরূপ-

চাল উৎপাদন: রেকর্ড উদ্বৃত্তের আশা অথচ বাজারে দাম বাড়ছে, হচ্ছে আমদানিও


বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট পাঁচ মাসে আগে আভাস দিয়েছিলো যে এ বছরের শেষে প্রায় সাড়ে ৫৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে, অথচ বাজারে সব ধরণের চালের দামই বেড়ে যাছে।

চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলগুলো দাম বাড়িয়ে দেয়ার প্রভাব পড়েছে বাজারে। আর মিল মালিকরা বলছেন, ধানের সরবরাহ কম। তবে এ সংকট সাময়িক কারণ কয়েকদিন পরেই নতুন চাল বাজারে আসবে ।

খাদ্য সচিব ডঃ মোছাম্মৎ নাজমানারা খাতুন বলছেন যে দাম বাড়ার মূল কারণ হলো কৃষকেরা ধান কম বিক্রি করছেন।

"এ মুহূর্তে স্কুল কলেজ বন্ধ। নানা ধরনের সরকারি সাহায্য যাচ্ছে। করোনার জন্য খরচও কমে এসেছে। তাই হয়তো অনেকের ধান বিক্রির তাড়া নেই। সে কারণেই ধান মিলে কম যাচ্ছে। যারা বিক্রি করছেন তারাও একটু লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। কৃষক টাকাও পাচ্ছে। এখন যে দাম বাড়ছে চালের সেটি কোনোভাবে সংকট জনিত কারণে নয়," বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান।

তাহলে সরকারকে কেন চাল আমদানি করতে হচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "নানা কারণে বা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য অনেক সময় র‍্যাশনিং বা বিতরণ করতে হয় সরকারকে। সে জন্য মজুদ রাখার দরকার হয়। কৃষকের কাছ থেকে নিলে বাজারে সংকট হতো। তাই সরাসরি আমদানি করা হচ্ছে।"

খাদ্য সচিব জানান, প্রথম চালানের ৫০ হাজার টন ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এছাড়া জানুয়ারির মধ্যে আরও অন্তত দেড় লাখ টন চাল বাংলাদেশে আসবে।

"তবে এ আমদানির সাথে বাজারে চালের দামের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ ধান বা চালের কোনা সংকট নেই। যদিও প্রত্যাশার চেয়ে উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে এ বছর। তারপরেও সেটি খুব একটা বেশি নয় বলেই কোনো সংকট তৈরি হয়নি"।


কিন্তু বাজার পরিস্থিতি আসলে কেমন?

ঢাকার একজন চাল ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন রাজা বলছেন, সব ধরণের চালের দামই বাড়িয়ে দিয়েছে মিলগুলো ।

তিনি জানান, মোটা চাল বস্তা প্রতি একশ টাকা, মিনিকেট বা চিকন চাল দুশো টাকা, নাজিরশাইল ৫/৬শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

"মিলগুলো বলছে ধানের সরবরাহ কম। প্রতিদিনই কিছু কিছু করে বাড়ছে। এখন সরকারের আমদানি করা চাল আসলে হয়তো বাজার স্থিতিশীল হবে," বলছিলেন তিনি।

যদিও খাদ্য সচিব জানিয়েছেন বাজারের পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন তারা।

"বাজারে কোনো সংকট নেই। ধানও আছে কৃষকের কাছে। মাঝে মধ্যে বাজারে সরবরাহ তারা কমালে একটু প্রভাব পড়ে।"

রাইস মার্চেন্ট এসোসিয়েশনও জানিয়েছে, সামনে বাজারে নতুন চাল আসবে। আর এই নতুন চাল আসার আগে দাম কিছুটা বাড়ে যেটা স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন তারা।

ওদিকে সরকারি হিসেবে ৫ লাখ ৫১ হাজার ২৯০ টন চাল মজুদ আছে, যদিও গত বছর একই সময়ে মজুদ ছিলো প্রায় সাড়ে দশ লাখ
টন চাল।

৫৫ লাখ টন উদ্বৃত্তের আভাস ছিল

গত অগাস্টে চালের মজুদ নিয়ে নিজেদের এক সেমিনারে ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট পূর্বাভাস দিয়েছিলো যে চাহিদা মেটানোর পরেও সাড়ে ৫৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে।

তখন বলা হয়েছিলো, নভেম্বরের মধ্যে আউশ ও আমনের উৎপাদন যুক্ত হলে খাদ্য ঘাটতির কোনো সম্ভাবনাই থাকবেনা।

আর এখন আবার ইন্সটিউটি বলছে, আগামী জুন নাগাদ উদ্বৃত্ত থাকবে ৩০ লাখ টন।

প্রতিষ্ঠান কৃষি অর্থনীতি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনা বা বন্যা পরিস্থিতির কারণে উৎপাদন কিছুটা কম হলেও সেটি সংকট তৈরি করার মতো নয়।

"সংকট নেই, উদ্বৃত্তও আছে। কৃষকের হাতে ধান ও মিলারদের হাতে চাল আছে। এখন সেটি বাজারে কতটা আসছে সেটি আমরা বলতে পারবো না। নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো এসব বিষয়ে কাজ করছে," বলছিলেন তিনি।

মি. ইসলাম বলেন, এবারও সারা দেশ থেকে বিস্তারিত তথ্য নেয়া হয়েছে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে, নেয়া হয়েছে স্যাটেলাইট চিত্রও।

"কোথায় কোন ধান কতটুকু হচ্ছে তার একটি সার্বিক হিসেব আমরা নিয়েছি, পাশাপাশি দেশের মানুষের জন্য কতটুকু ধান দরকার হয় সে হিসেবও আছে। এসব হিসেব নিকেশ করেই আমরা একটা ধারণা দিয়েছি যে কতটা চাল উদ্বৃত্ত থাকবে," বলছিলেন তিনি।

তাহলে সরকারকে আমদানিই না করতে হচ্ছে কেন - এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল ইসলাম বলেন তারা সবসময়ই সরকারকে দশ থেকে বার লাখ মেট্রিক টন মজুত রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

"মজুত যথাযথ থাকলে বাজার নিয়ে কোনো দুরভিসন্ধির কোনো সুযোগ থাকে না। পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে সরকার জনগণের মধ্যে চাল বিতরণ করতে পারে। আবার কৃত্রিম সংকট মোকাবেলাতেও এটি ভূমিকা রাখে। তাই সরকার আমদানি করছে মানে এই নয় যে আমরা যে আভাস দিয়েছিলাম সেটি সত্যি হয়নি বা হবে না।"


এই যদি হয় বিশ্বের ৪র্থ ধান উৎপাদনের দেশে চালের দাম তো সাধারন জনগন, গরীব মানুষ, দিন মজুরদের অবস্থা কি হবে ? এত দাম দিয়ে চাল কিনে তারা কয়বেলা খেতে পারবে ? অবিলম্বে সরকারের এ দিকে নজর দেওয়া উচিৎ এবং ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

ছবি ও প্রতিবেদন বিবিসি বাংলা থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:১৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×