ছবিতে দু’টি বাচ্চা দেখা যাচ্ছে। বড়টির নাম তাহিয়া ছোটটির নাম মারিয়াম। ওদের মা আমাদের অফিসে নিউজ সেকশনে চাকরি করে । ওদের বাবা থাকে ঢাকায়। বাচ্চা দুটি প্রায় সময় অফিসে আসে। বড় বোনটি ছোট বোন কে সামলায়, ফিডারে দুধ বানিয়ে খাওয়ানো, ঘুমপাড়ানো, চিল্লাচিল্লি করলে বা কান্না কাটি করলে দ্রুত তাকে খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখা সহ তার দেখভাল করে।
তো একদিন তার মাকে বললাম বাসায় আপনার বাচ্চাদের কার কাছে রেখে আসেন। তিনি বললেন প্রথম প্রথম আমার ভাই অথবা বোন থাকতো এখন বাসায় কেউ থাকেনা বাচ্চাদের তাই তালা দিয়ে আসি। কথাটা বলার সময় উনার চোখ মুখের বিষন্নতার ছায়া । বুঝতে পারলাম খুব কষ্ট থেকেই তিনি কথাটা বলেছেন। আমি বললাম- এভাবে তালা দিয়ে বাচ্চাদের রেখে আসাটাতো ঝুকিপূর্ণ । কিন্তু চাকরি তো করতে হবে ভাই, প্রতিদিন তো আর বাচ্চা নিয়ে অফিসে আসে যায় না। দেখেন্ইত কত ঝামেলা করে। এত কিছু সামলে, এত টেনশন নিয়ে কি অফিস করা যায় ?
ওরা নিজে নিজে থাকতে পারে বাসায় ভয় পায় না ? কিংবা আগুন পানিতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ? উনি বললেন রান্নাঘরটা তালা দিয়ে রাখি যাতে করে আগুন জ্বলাতে না পারে। বড় মেয়েটাকে বলে আসি মারিয়াম যেন কখনো একা একা ওয়াসরুমে না যায়। ওদেরকে এভাবে রেখে আসতে খারাপ লাগে তবুও বাধ্য হয়ে রেখে আসতে হয় তালা দিয়ে।
যেদিন ওদের রেখে আসি মন পরে থাকে বাসায়। টেনশন বেশি হলে এক ঘন্টা দেড় ঘন্টা পর পর বাসায় গিয়ে দেখে আসি। সকালে বাচ্চাদের অফিসে নিয়ে আসলে বিকালে নিয়ে নিয়ে আসেন না। আবার বিকালে ওদের অফিসে আনলে সকালে রেখে আসেন।
এভাবেই যুদ্ধ করে তিনি চাকরি করছেন। বদলীর জন্যও চেষ্টা করছেন। অবশেষে একদিন এল বিজয়ের দিন। বদলী হয়ে ঢাকায় চলে গেলেন। হয়তো এখন বাচ্চাগুলোর বন্দীত্ব শেষ হবে।
সব বাচ্চাদের শৈশব, কৈশর সুন্দর হোক।
ছবি-নিজের তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৫৭