somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন ভাস্কর শামীম শিকদার মৃত্যুতেই কেবল অনেকে জানলেন তিনি নারী

২২ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আসলে আমিও প্রথমে যখন বইয়ে ওনার নাম পড়েছি তখন তাকে ছেলে বলেই মনে করেছি। ভুলটা পরে ভেঙ্গেছে। তার মৃত্যুতে অনেকেরই হয়তো সেই ভুল ভাঙ্গবে বা ভেঙ্গেছে।


বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম—এ রকম একটি ভাস্কর্য আছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি)। বাংলাদেশের শত শত ছবিতে এটি দেখা গেছে। একেবারে সাধারণ গ্রামীণ দর্শক, যিনি হয়তো ঢাকায়ও আসেননি, কিন্তু সিনেমার মধ্যে ভাস্কর্যের নজরুলকে দেখেছেন—যুবক নজরুল দাঁড়িয়ে আছেন প্রেমিক-ভঙ্গিতে, হাতে বাঁশি। কিন্তু অনেকেরই হয়তো জানা নেই, এফডিসির নজরুল শিল্পকর্মটির ভাস্কর শামীম শিকদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সড়কদ্বীপে অবস্থিত ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’, জগন্নাথ হলের মাঠে দাঁড়ানো ‘বিবেকানন্দ’—এগুলো শামীম শিকদারের কাজ। নিউ ইস্কাটনে তাঁর একটি ভাস্কর্যবাগান আছে। জগন্নাথ হলের পেছনে উদয়ন স্কুল ও সলিমুল্লাহ হলের মুখে সড়কে তাঁর শিল্পকর্মের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত গ্যালারি এখন ঢাকায়। এখানে প্রায় শ খানেক ভাস্কর্য তিনি করে রেখে গেছেন। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে তাঁর আরও অনেক কাজ সংগ্রহে রেখেছেন বিভিন্ন কলারসিক ও প্রতিষ্ঠান। চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগ থেকে অধ্যাপক হিসেবে অবসর নেওয়ার পর শামীম শিকদার চলে যান লন্ডনে।


১৯৫২ সালে জন্মেছিলেন তিনি, মারা গেলেন ২১ মার্চ ২০২৩। বলতে পারি, ভাস্কর হিসেবে শামীম শিকদারের জীবনে প্রভাব রেখে থাকতে পারেন পঞ্চাশের দশকেই নিজের কাজে স্বাক্ষর রাখা ভাস্কর নভেরা আহমেদ। বাংলাদেশের নারী বলতে যা বোঝায়, চলনেবলনে ও সৃজনে নভেরা আহমেদ এবং পরে শামীম শিকদার যেনবা তার বাইরেই ছিলেন। দুজনের পোশাক–পরিচ্ছদও তাই প্রথাগতভাবে শাড়ি-ব্লাউজ ছিল না। শামীম শিকদার জিনস-শার্ট আর পায়ে কেডস পরতেন। পকেটে সত্যিকারের পিস্তল ঝুলিয়ে রাখতেন। কেন রাখতেন? বড় ভাই সিরাজ শিকদারের মতো তিনিও কি নিজেকে বিপ্লবী মনে করতেন?

তথ্য ও লেখা- প্রথম আলোর টোকন ঠাকুরের প্রতিবেদন।

শামীম শিকদার নিজেই গাড়ি চালিয়ে আসতেন চারুকলায়, আমরা ছাত্ররা তাকিয়ে দেখতাম। শামীম ম্যাডাম এককথায় ‘ডেসপারেট অ্যাপ্রোচে মুভ’ করতেন। ঢাকা শহর যেনবা তাকিয়ে দেখেছে ভাস্কর শামীম শিকদারকে, যার বড় ভাইয়ের নাম সিরাজ শিকদার, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে শ্রেণিবদলের রক্তাক্ত আলোচিত-সমালোচিত সেই বিপ্লবী সিরাজ শিকদার।


সিমেন্ট, কাঠ, ব্রোঞ্জ, প্লাস্টার অব প্যারিস, কাদা, কাগজ, লোহা ও গ্লাস ফাইবারকেও মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন শামীম শিকদার। একুশে পদক পেয়েছেন তিনি। পেয়েছেন দেশ-বিদেশের আরও অগণন পদক ও সম্মাননা। বাংলাদেশ তাঁকে চেনে-জানে, তিনি কে?

যে দেশের নারীরা ঢেঁকিতে ধান ভেনে চাল বের করে স্বামীর জন্য রান্না করে পাখা দিয়ে হাওয়া দেয় গরম ভাতে, সেই দেশেরই নারী শামীম শিকদার। শামীম নাম তো এ দেশে সচরাচর পুরুষবাচকই শোনা যায়, কিন্তু শামীম নামটি একজন নারীরও, তিনি শামীম শিকদার। অথচ বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে চিত্রকলায় যে সামগ্রিকভাবে ঘরে ঘরে খুব বেশি আদৃত, তা–ও নয়, তাহলে ভাস্কর্যের গ্রহণযোগ্যতা সামাজিকভাবে কীভাবে বাড়বে? সেখানেই ভাস্কর হিসেবে শামীম শিকদার কাজ করে গেলেন, নাম করলেন। নিজের স্বাক্ষর রেখে গেলেন। এটি বাংলাদেশের বর্তমান ও আগামী দিনের অনাগত নারী-পুরুষের জন্য প্রেরণা হয়ে থেকে যাচ্ছে, যেভাবে আমরা নেতাকে মনে রেখে যাচ্ছি।

অসংখ্য ভাস্কর্য নির্মাণের পাশাপাশি শামীম শিকদার গ্রন্থ রচনা করেছেন বেশ কিছু। যেমন ‘ইনার ট্রুথ অব স্কাল্পচার: আ বুক অন্য স্কাল্পচার’, ‘স্কাল্পচার কামিং ফরম হ্যাভেন, কনটেম্পোরারি আর্ট সিরিজ অব বাংলাদেশ’। কবি জাকারিয়া চৌধুরী তাঁর স্বামী ছিলেন। তাঁদের দুটি কন্যাসন্তান আছে।



সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:২২
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×