আস্থা থেকে আস্তিক এবং অনাস্তা অবিশ্বাস অস্বীকার থেকে নাস্তিক, অথচ মানুষ মরে এটি চিরন্তন। দুনিয়ার মানবকূল তথা আস্তিক আর নাস্তিক উভয়েই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জীবনাচার করেন, দুনিয়ার নাজ নেয়ামত ভোগ করেন। শুধুমাত্র একটি বিষয়ে দ্বিমত পেষণ করে আস্তিক আর নাস্তিকে বিভক্ত হয়েছে। বিষয়টি হইলঃ- (১) নাস্তিকঃ- দৃশ্যমান জগত প্রাকৃতিক বিবর্তনের ফলে তৈরী হয়েছে, কোনো স্রষ্টা নেই। স্রষ্টা যদি থাকিত তাহলে তাকে দেখা যাইত, যেহেতু দৃশ্যমান নয় সেহেতু অদৃশ্যকে বিশ্বাস করাটা বোকামী। (২) আস্তিকঃ- সৃষ্টি জগতের একজন স্রষ্টা রয়েছেন, তিনি শুধু স্রষ্টাই নন বরং একক মালিক এবং তার সৃষ্টি জগতকে নিজের মত পরিচালনাও করেন, তার হকুমের বাহিরে সৃষ্টির কোনো কিছুই পরিচালিত হয়না।
আমি যেহেতু সৃষ্টিকে বিশ্বাস করি আস্তিক সেহেতু সৃষ্টি অস্বীকার কারী নাস্তিক ভাইদের কাছে কিছু জিজ্ঞাসাঃ-
ভাই বলুন তো: আপনি তো মানুষ, সকলের মত মায়ের পেট থেকে আপনিও এসেছেন। মায়ের পেটে সকলের মত আপনিও লজ্জাসকর বিন্দু রক্তই ছিলেন, এই রক্ত বিন্দুতে কঠিন হাঁড়, হাঁড়ের ভেতর মগজ, এক হাঁড়ের সাথে আরেক হাঁড়ের সূনিপণ সংযোগ, সেই হাঁড়ের উপর মাংস, হাঁড় মাংসকে আবৃত্ত করে রাখার জন্য শক্ত চামড়ার আবরণ হাত পা চোখ নাক কান চুল ইত্যাদির সমন্নয়ে একটি কঠিন পদার্থে পরিনত হাওয়া কোন্ প্রাকৃতিক বিবর্তনের ফসল?? এখানেই শেষ নয়, এই কঠিন পদার্থে প্রাণ সঞ্চার হয়েছে নির্দিষ্ট একটি সময় পার হাওয়ার পর, কে এই প্রাণ সঞ্চার করিলেন? এই প্রাণ সঞ্চারিত কঠিন পদার্থটিতে কে পুষ্টি দান, লালন পালন করে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মায়ের পেট থেকে কে বাহির করিয়া দিলেন?? আমার প্রশ্ন এটিতো খুবই আরামের জায়গাই ছিল, ওখানে আরও কয়দিন বেশী পারলেন না কেন? অথচ আপনিও আমার মত এক বিন্দু জমাট বাঁধা রক্তই ছিলেন। তাহাছাড়া মানুষ হয়ে দুনিয়াতে আসার জন্য আগে এক বিন্দু রক্ত হয়ে মায়ের পেটেই যাইতে হয় কেন? প্লেইন বানাইতে একটি কারখানার দরকার আছে, উপকরণের দরকার আছে, সেই উপকরন দিয়ে প্লেইন বানাইতে বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, শ্রমীক সহ আরও অনেক কিছুর দরকার হয় অথচ মায়ের পেটে আমাকে/আপনাকে বানাইতে কোনো বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, শ্রমীক দরকার হয় নাই এই কথা কিভাবে বিশ্বাস করেন? আমরা আস্তিক বিশ্বাস করি যে, মায়ের পেটে এক বিন্দু রক্ত থেকে আমাকে/আপনাকে বানাইতে এবং প্রাণ সঞ্চার করিয়া নির্দিষ্ট সময়ে বাহির করিয়া দিতে সেখানেও বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, শ্রমীক ছিলেন আর তিনি হচ্ছেন আমার স্রষ্টা "আল্লাহ"।
একজন স্রষ্টা আছেন, তার হকুমেই সবকিছু পরিচালিত হয়, ইহ কালের সবকিছুই সেই স্রষ্টার সন্তেষ্টির জন্য হবে, তার কাছেই ফিরে যেতে হবে, তাকেই ইহকালের (হায়াতের) হিসাব কেয়ামতের মাঠে দিতে হবে। দুনিয়ার হায়াত হচ্ছে একটি পরীক্ষা কেন্দ্র, এই পরীক্ষা পাস করতে পারলেই জান্নাত নছিব হবে। পরীক্ষার হলে না দেখে প্রশ্ন উত্তর লেখার নামই পরীক্ষা, দেখে দেখে লিখলে সেটিকে পরীক্ষা বলা হয়না। না দেখে বিশ্বাস করার নামই হচ্ছে ঈমান, প্রত্যেক ঈমান ওয়ালাকে স্রষ্টার যাবতীয় আদেশ নিষেধ তারই প্রেরীত প্রতিনিধি রাসুলরে (সঃ) প্রদর্শিত পন্থায় (সুন্নত) পলন করতে হবে। আমরা নিজেরাই সৃষ্টি সূতরাং সকল সৃষ্টি একমাত্র স্রষ্টার মুখাপেক্ষি দুনিয়াতে আমারা কারও কিছুই নেই। যদি আমাদের কোনো ক্ষমতা থাকিত তাহলে দুনিয়া থেকে বিদায়ের সময় জিজ্ঞাসিত হইতাম যাইব কিনা, কই, যিনি নিতে আসেন তিনি তো আমাকে আপনাকে জিজ্ঞাস করেনা যাইব কিনা। আপনার আমার প্রিয়তমা স্ত্রীকে, আদরের সন্তানকে ছোবল মেরে নিয়ে যাওয়ার সময় আপনার আমার কাছে অনুমতি চায় কি? তাহলে কিভাবে বলি প্রিয়তমা স্ত্রীকে, আদরের সন্তান আমার! যিনি আমার আপনার স্রষ্টা তিনি আমাকে আপনাকে প্রিয়তমা স্ত্রীকে, আদরের সন্তান দিয়েছেন দুনিয়া করার জন্য। যতদিন ইচ্ছা আমাদের কাছে রেখেছেন আবার যখনই ইচ্ছা ছোবল মেরে নিয়ে গেছেন। নিয়ে যান প্রিয়তমা স্ত্রী, আদরের সন্তানের কাছ থেকে আপনাকে আমাকেও। তাতে কি প্রমান হয়না? মালিক একজন আছেন, সবকিছই তার ইচ্ছায় হয়। এটির নামই ঈমান, এই ঈমাদারের জন্যই রয়েছে মহা পুরস্কার জান্নাত। ঈমনদারেরাও পাপের কারণে, স্রষ্টার আদেশ নিষেধ সুন্নত মতে পালন না করার কারণে কঠিন শাস্তির গহ্বর অগ্নিকূন্ড জাহান্নামে যাবে যদি স্রষ্টা করুনা না করেন। শাস্তি থেকে মূক্ত হাওয়ার জন্য স্রষ্টার কাছে করুনা চাইতে হয় তিনি পরম করুনা ময়, ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করেন। ক্ষমা চাইতে দেরী অথচ ক্ষমা করিতে দেরী করেন না, মানুষ না বুঝে পাপ করে, হকুম অমান্য করে, হায়াতকে নিজের মত করে অতিবাহিত করে তারপরেও দয়াময় আল্লাহ ক্ষমা চাইলে তাওবা করিলে তাহা কবুল করে ক্ষমা করেন। আল্লাহর প্রতিনিধি রসুল (সঃ) বলেন যেই ব্যক্তি ৮০ বছর পাপ করিয় যদি ক্ষমা চায় এবং এই দরুদ জূমাবারে পড়ে করুনাময় আল্লাহ তার ৮০ বছরের গুনাহ সমুহ ক্ষমা করে দিবেন, পরম করুসময় আল্লাহ ওয়াদা পালনকারী। গুনাহ মাপের জন্য, আল্লাহর সন্তোষ্টি অর্জন করে জান্নাত পাওয়া আশায় আসুন আমরা প্রতি জুমাবার একাগ্র চিত্তে এই দরুদটি ৮০ বার পাঠ করি। হে আল্লাহ, আমরা গুনাগার, না বুঝে গুনাহ করেছি, আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:১২