somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মো: সাকিব হাসান
দৃষ্টি তার সীমাহীন,বিশালতা তার আকাশে।গভীরতা তার সাগরে,সপ্ন তার অন্তরে হাসতে চাই জয় এর হাসি।দেখাতে চাই বেঁচে থাকার সপ্ন,অস্তিত্ব তার শিকরে, তার আপন মনের গহীনে......

আব্বাসীয় বিপ্লব ইসলামের হারানো ইতিহাস

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হযরত আবু বকর (রাঃ), উমর (রাঃ), উসমান (রাঃ) এবং ‘আলী (রাঃ) এর নেতৃত্বে খোলাফায়ে রাশেদার সোনালী যুগ অতিক্রান্ত হবার পর ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম বিশ্বের খিলাফতের ভার উমাইয়া পরিবারের কাছে হস্তগত হয়। প্রথম উমাইয়া খলিফা হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) দামেস্ক থেকে মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দেন এবং ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পুত্র ইয়াযিদের কাছে শাসনভার অর্পন করে যান। এভাবে খিলাফত ব্যবস্থায় পরিবারতন্ত্রের সূচনা হয়, যা ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে ওসমানী খিলাফত বিলুপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। খিলাফতের এই দীর্ঘ ১২৯২ বছরজুড়ে বিভিন্ন পরিবারের মাঝে ক্ষমতার পালাবদল হয়। সর্বপ্রথম এরূপ পালাবদল ঘটে ৭৪০-এর দশকের শেষভাগে। এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উমাইয়া পরিবারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে আব্বাসীয় পরিবার প্রতিষ্ঠা করে মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলোর একটি।

উমাইয়াদের সমস্যা
উমাইয়া শাসনামলের ৮৯ বছরে মুসলিম বিশ্বে ভৌগোলিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক শক্তির ব্যাপক উন্নতি হয়। মুসলিম সেনাদল পূর্বে হিন্দুস্তান এবং পশ্চিমে স্পেন ও ফ্রান্স অভিমুখে অগ্রসর হয়। এধরণের বিজয়ের মাধ্যমে অর্থনীতির ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়। ফলে উমাইয়া খিলাফত অবিশ্বাস্যরকম ধনী হয়ে উঠে এবং একটি স্থিতিশীল সাম্রাজ্যে পরিণত হতে থাকে।


এতো সাফল্য এবং ক্ষমতা অর্জন সত্ত্বেও উমাইয়া সমাজের গভীরে নানা সমস্যা টগবগ করে ফুটছিল। প্রথম সমস্যা হলো অনারবদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ। মুসলিম সাম্রাজ্য উত্তর আফ্রিকা, স্পেন এবং পারস্যের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে বিপুল সংখ্যক অনারব-অমুসলিম উমাইয়া খিলাফতের আওতাভুক্ত হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের জীবনযাত্রায় কোন বিঘ্ন ঘটানো হয়নি যেহেতু ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিল ইসলামী সরকারের মূলনীতিগুলোর একটি। ইসলামী শরীয়াহ্‌ মতে, অমুসলিমদের জিযিয়া বা poll tax (মাথাপিছু ধার্যকৃত কর) নামে পরিচিত একটি কর প্রদান করতে হয়। খিলাফতের বেশীরভাগ স্থানেই এই কর ছিল প্রাক ইসলামী যুগের বাইজেন্টাইন (রোমান) বা সাসানীয় (পারস্য) সাম্রাজ্যের করের চেয়ে কম, তাই এ নিয়ে সরকারের প্রতি কোন অসন্তোষ জনগণের মধ্যে ছিলনা।

যেহেতু মুসলিমদের জন্য যাকাত হচ্ছে একটি ফরজ ইবাদত যার মাধ্যমে সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ অভাবীদের মাঝে বিলি করতে হয়, তাই উমাইয়া খিলাফত মুসলিমদের থেকে যাকাত আদায় ব্যতীত অন্য কোন কর না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যদিকে সদ্য উমাইয়া শাসনের নিয়ন্ত্রণে আসা অমুসলিমদের জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণে পরিষ্কারভাবে কিছু আর্থিক সুবিধা ছিল। ধর্মান্তরিত হলে তারা জিযিয়া কর দেয়ার হাত থেকে মুক্ত হতো এবং এর পরিবর্তে যাকাত দিতে হতো। আর যাকাত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জিযিয়ার চেয়ে কম। জিযিয়া অন্যায়ভাবে উচ্চ ছিল না যদিও, কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম অংকের কর দেয়ার বিষয়টি মানুষকে স্বভাবতই ধর্মান্তরিত হবার ব্যাপারে উৎসাহিত করে।

যাহোক, করের হারের উপর ভিত্তি করে দলে দলে ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়টি উমাইয়া খিলাফত বিরাট সমস্যাজনক মনে করলো। জনসংখ্যার একটি বড় অংশ যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ও জিযিয়া বন্ধ হয়ে যায়, সরকারী তহবিলে আয়করের পরিমাণ খুব কমে যাবে। ফলে সৃষ্টি হবে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা। এই সমস্যার সমাধানে উমাইয়ারা সাম্প্রতিককালে মুসলিম হওয়া জনসংখ্যার উপর করের পরিমাণ আগের মতই রেখে দেয়। ধর্মান্তরিত মুসলিমদের সাথে এরূপ অমুসলিমসুলভ আচরণের ফলাফল ছিল ভয়াবহ।

প্রথমত, এর মাধ্যমে উমাইয়ারা শরীয়াহ বহির্ভূত আইনের বৈধতা দিয়ে দিল। যেখানে সকল মুসলিমের প্রতি সমান ব্যবহার ছিল রাসূল মুহাম্মদ ﷺ এর শিক্ষার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক, উমাইয়াদের এহেন নীতি সুস্পষ্টতই তাঁর শিক্ষার বিরোধী ছিলো। উপরন্তু, কর আরোপ করা ধর্মান্তরিতরা অধিকাংশই ছিল অনারব। সাম্রাজ্যের অধিকাংশ আরব জনগোষ্ঠী ছিল আরব উপদ্বীপের অধিবাসী এবং তারা রাসূল ﷺ এর জীবদ্দশাতেই ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তাই এমন জিযিয়া কর তাদের উপর কখনো আরোপিত হয়নি। এই ঘটনায় শুধুমাত্র জাতিগত বৈষম্যের উপর ভিত্তি করেই একটি অসম সমাজ ব্যবস্থা তৈরী হয়। অনারব মুসলিমদেরকে আরবদের চেয়ে নীচু বিবেচনা করা হতো, যেখানে আরব মুসলিমরা ভোগ করত বিশেষ সুবিধা ও অধিকার।

এই নীতির মধ্যে ব্যাপক সমস্যার বিষয়টি উপলব্ধি করেন উমাইয়া খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহঃ), যিনি ৭১৭ থেকে ৭২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেছেন। ক্ষমতায় এসেই তিনি এই আইন পরিবর্তন করেন। শাসন ব্যবস্থায় ইসলামী নিয়ম-কানুন সুনিপুণভাবে অনুসরণ করার কারণে ঐতিহাসিকগণ ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ তাঁকে খলিফা আবু বকর, উমর, উসমান এবং ‘আলীর পরে “খোলাফায়ে রাশেদীন এর পঞ্চম খলীফা” হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন। যাই হোক, উমাইয়া শাসক পরিবারের বিভিন্ন গোষ্ঠী তাঁর এসকল সংস্কারের বিরোধিতা করে এবং ক্ষমতায় আসার মাত্র ৩ বছরের মাথায় তাঁকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করে। তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথেই উমাইয়া সাম্রাজ্যে সকল জাতির প্রতি নিরপেক্ষ আচরণ নীতিরও মৃত্যু ঘটে। আর এর সাথে সাথেই গুরুতরভাবে শুরু হয় উমাইয়াদেরকে ক্ষমতা থেকে হটানোর পরিকল্পনা।

আব্বাসীয় বংশ
৬৬১ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া শাসনের শুরু থেকেই তাদের প্রধান সমস্যা ছিল বৈধতা। প্রথম চার খলিফার মতো উমাইয়ারা জনপ্রিয় মতামতের ভিত্তিতে অথবা সমাজের সম্মানিত নেতাদের দ্বারা নির্বাচিত হয়নি। ‘আলী (রাঃ) এর সময় বিদ্রোহীদের উত্থানের পরে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত রাখতে পারার ক্ষমতা ও দক্ষতার কারণেই উমাইয়াদের শাসন অপরিহার্য ছিল।

একটি গোষ্ঠী উমাইয়া শাসনের বিকল্প হিসেবে ‘আলী (রাঃ) এর পরিবার হতে শাসক নির্বাচনের প্রস্তাব দেয়। তাদের যুক্তি ছিল ‘আলী (রাঃ) যেহেতু রাসূল ﷺ এর চাচাতো ভাই এবং জামাতা ছিলেন, সেহেতু তাঁর পরিবারেরই শাসন করার অধিকার সবচেয়ে বেশী। এই মতাদর্শ ইরাক ও হেজাজের অধিবাসীদের সমর্থন পায়, যেখানে ‘আলী (রাঃ) এর বংশধররা বাস করতেন। পরবর্তীতে এই রাজনৈতিক মতাদর্শ ইসলামের একটি নতুন উপদল ‘শিয়া’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু ৮ম শতাব্দীতে তাদের মতাদর্শের সাথে প্রচলিত ধারার ইসলামের কোন পার্থক্য ছিলোনা, বরং পার্থক্যটা ছিল শুধুই রাজনৈতিক।

যারা রাসূল ﷺ এর পরিবারের শাসনের পক্ষে ছিল তাদের সমস্যা ছিল এই যে, তাদের মাঝে উমাইয়াদের উৎখাত করে নিজেদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার মতো পর্যাপ্ত সাংগঠনিক শক্তি এবং দক্ষতা ছিলনা। এসময়ই রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ এর সাথে সম্পর্কিত আরেকটি গোষ্ঠী সামনে এগিয়ে আসে, আর তারা হলো — আব্বাসীয়রা।

আব্বাসীয়রা রাসূল ﷺ এর চাচা ‘আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) এর বংশধর। ৮ম শতকের শুরুর দিকে তারা হুমায়মাতে বসতি স্থাপন করে। হুমায়মা ছিল একটি মরুদ্যান শহর যা বর্তমানে বালুময় দেশ জর্ডানে অবস্থিত। উমাইয়া শাসনের কেন্দ্র দামেস্কের কাছাকাছি অবস্থান করায় আব্বাসীয়রা উমাইয়া শাসিত সমাজে বৈষম্যের ফলে সৃষ্ট সূক্ষ্ম ফাটল লক্ষ্য করেছিল এবং এই পরিস্থিতিকে তারা ক্ষমতা দখলের জন্য সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে।

৭৩০ এবং ৭৪০ এর দশকে আব্বাসীয়রা পারস্যে গোপনে মিশনারী দল প্রেরণ করে যেখানে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে স্বভাবতই অসন্তোষ বিরাজ করছিল। এই এলাকায় অধিকাংশ মুসলমান অনারব হওয়াতে আব্বাসীয়রা জানতো তারা এসব মানুষের সমর্থন পাবে। অত্যাধিক ধর্মপ্রাণ লোকদের সমর্থন পাওয়ার উদ্দেশ্যে আব্বাসীয়রা প্রচার করে যে ‘আলী (রাঃ) এর একজন বংশধর আনুষ্ঠানিকভাবে আব্বাসীয় পরিবারের প্রতি শাসন করার অধিকার হস্তান্তর করেছেন। এমন ঘটনার সত্যতা যতটুকুই হোক না কেন, এটি আব্বাসীয়দের শাসনকার্য পরিচালনার কিছুটা বৈধতা দেয়, যা উমাইয়াদের ছিলনা।

বিপ্লব
মুসলিম বিশ্বের পূর্বাঞ্চলের অধিবাসীদের পক্ষ থেকে গোপনে কয়েক বছর ধরে সমর্থন লাভের প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর ৭৪৭ খ্রিষ্টাব্দে আব্বাসীয়রা সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করার জন্য এটিই উপযুক্ত সময়। খোরাসান প্রদেশের প্রাচীন শহর মার্ভ এ তারা তাদের স্বতন্ত্র কাল রঙের ব্যানার ও পতাকা উত্তোলন করলো, যেখানে বিপ্লবীদের জনসমর্থন ছিল অত্যন্ত প্রবল।

আবু মুসলিম হিসাবে পরিচিত এক রহস্যময় ব্যক্তির নেতৃত্বে, খোরাসানে আব্বাসীয় পরিবারের সমর্থকরা রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ এবং প্রাথমিক খলিফাদের যুগের বিশুদ্ধ আদর্শে ফিরে যাওয়ার ওয়াদা করেন। এটা ছাড়া আব্বাসীয়দের অন্যান্য প্রতিশ্রুতিগুলো ছিল অস্পষ্ট এবং তা ইচ্ছাকৃতভাবেই এমন ছিল। আব্বাসীয় ও তাদের সমর্থকদের মূল লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা থেকে উমাইয়া পরিবারের অপসারণ। অন্যান্য বিষয়গুলো তারা পরে সমাধানের জন্য রেখে দিয়েছিল।

মার্ভ শহর দখল করে উমাইয়া গভর্নরকে নির্বাসনে পাঠানোর পর, আবু মুসলিম পশ্চিমে পারস্য ও ইরাকের বাকি অংশে আব্বাসীয় সৈন্যবাহিনী পাঠাতে শুরু করেন। উমাইয়াদের অবস্থান পারস্যে কখনোই শক্ত ছিলনা, সম্ভবত এর কারণ ছিল বড়সংখ্যক অনারব জনসংখ্যা তাদের শাসনের ব্যাপারে ক্ষুব্ধ ছিল। ফলে আব্বাসীয় বিপ্লব ইরানের মালভূমিতে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে পরিণত হতে থাকে।

এদিকে আব্বাসীয় পরিবার হুমায়মা থেকে তাদের জন্য অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থান ইরাকে পালিয়ে যায়। সিরিয়ার মরুভূমিতে এক কঠিন যাত্রার মাধ্যমে তারা কুফায় পৌঁছায়। কিছুদিনের মধ্যেই তাদের শাসনের পক্ষে লড়াইরত সেনাবাহিনী (সিরিয়া থেকে) পূর্বদিকে (ইরাকে) আসতে শুরু করে। স্থানীয় জনগণের সমর্থনকে সঙ্গে নিয়ে আব্বাসীয়রা স্থানীয় উমাইয়া সরকারকে উৎখাত করে এবং তাদের স্থলে নিজেদের হাতে শাসনক্ষমতা নিয়ে নেয়। কুফাতেই আবুল-আব্বাস সর্বপ্রথম জনগণের প্রকাশ্য-আনুগত্য পায়, যাকে ৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম আব্বাসীয় খলিফা ঘোষণা দেয়া হয়।

খিলাফতের এই প্রতিকী হস্তান্তরের কোন মূল্যই থাকতোনা যদি সকল উমাইয়াদের জোরপূর্বক অপসারণ করা না যেতো। আব্বাসীয় সৈন্যবাহিনী শেষ পর্যন্ত উত্তর ইরাকে জাব নদীর কাছে উমাইয়া বাহিনীর একটি বড় অংশের মুখোমুখী হয়। দুটো দল ছিল একেবারেই ভিন্নধরনের। উমাইয়ারা তাদের সাদা পতাকা নিয়ে আরব সিরিয়ানদের প্রতিনিধিত্ব করছিল যারা উমাইয়া শাসনের ৮৯ বছর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দল ছিল। অন্যদিকে কালো পতাকা দুলিয়ে আব্বাসীয় সৈন্যরা প্রতিনিধিত্ব করছিল সাম্রাজ্যের অবহেলিত ও বিস্মৃত অনারবদের যাদের আকাঙ্খা ছিল আরো বেশী ইসলামী অনুশাসনভিত্তিক একটি সরকার।

৭৫০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে চরম নাটকীয় “জাব এর যুদ্ধে” আব্বাসীয় সেনাবাহিনী উমাইয়া সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে পর্যুদস্ত করে। আব্বাসীয়রা উমাইয়াদের দেশ সিরিয়াতে একদম সরাসরি প্রবেশ করে অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে সক্ষম হয়। আর সিরিয়ার সেনাবাহিনী কার্যত কঠিন পরাজয় বরণ করে নিঃশেষ হয়ে যায়। সর্বশেষ উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় মারওয়ান মিশরে পালিয়ে যান। তবে সেখানে আব্বাসীয় চররা তাকে খুঁজে পায় এবং হত্যা করে। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দের পরে ক্ষমতা পরিবর্তনের অন্তর্বর্তীকালীন বিশৃঙ্খলার মধ্যেই আব্বাসীয়রা উমাইয়া পরিবারের প্রায় প্রতিটি সদস্যকে জড়ো করে এবং মৃত্যুদণ্ড দিতে সক্ষম হয়। বেঁচে যায় শুধুমাত্র আবদুর রহমান নামক উমাইয়া পরিবারের এক কিশোর সদস্য। আব্বাসীয় সেনাবাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে গিয়ে সে আইবেরিয়ান উপদ্বীপ — আল-আন্দালুস — এ চলে যেতে সক্ষম হয়, এবং প্রতিষ্ঠা করে উমাইয়া শাসন যা ১০৩১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।

বিপ্লবের পর আব্বাসীয়রা তাদের পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত বেশী ন্যায়সঙ্গত ইসলামী সমাজ তৈরি করতে সক্ষম হয়, কিন্তু উমাইয়াদের উৎখাতের সাথে যে স্বপ্নগুলো তৈরী হয়েছিল সে সব আশা পূরণে ব্যর্থ হয়। বাগদাদে তাদের নতুন রাজধানী থেকে আব্বাসীয়রা তাদের পূর্বসুরী উমাইয়াদের মতই আরেকটি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজে অনারবদেরকে সমঅধিকার দিলেও, আব্বাসীয়রা খিলাফতের প্রাথমিক পর্যায়ের মতো সেই সোনালী দিনে ফিরে যেতে ব্যর্থ হয়। উমাইয়া ও ইসলামী ইতিহাসের অন্যান্য রাজবংশের মতোই আব্বাসীয় শাসনেরও ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক ছিল।

উপসংহার
ইসলামী ইতিহাস অধ্যয়নের সময় কোন একটি গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ ভালো বা পুরোপুরি খারাপ হিসেবে চিত্রায়িত করা ঠিক নয়। ইসলামী আক্বীদা অনুযায়ী, রাসূল ﷺ এবং তাঁর সাহাবীরা বাদে প্রায় প্রত্যেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, আন্দোলন এবং সাম্রাজ্যের ভাল ও খারাপ গুণাবলি পাওয়া যায়। এই বিষয়টি সামনে রেখে উমাইয়া ও আব্বাসীয় খিলাফতকালকে অধ্যয়ন করলে আমরা তাদের অর্জন ও আদর্শের প্রশংসা করতে পারব, তার সাথে এ-ও বুঝতে পারব তারা কেউই একেবারে নিখুঁত ছিলনা এবং তাদের মাঝেও নানান ত্রুটি বিদ্যমান ছিল।

Bibliography – গ্রন্থপঞ্জিঃ

‘Ata ur-Rahim, Muhammad. Jesus: Prophet of Islam. Elmhurst, New York: Tahrike Tarsile Quran, Inc. , 1991. Print.

Carr, Matthew. Blood and Faith: The Purging of Muslim Spain. New York: The New Press, 2009. Print.
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×