somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মো: সাকিব হাসান
দৃষ্টি তার সীমাহীন,বিশালতা তার আকাশে।গভীরতা তার সাগরে,সপ্ন তার অন্তরে হাসতে চাই জয় এর হাসি।দেখাতে চাই বেঁচে থাকার সপ্ন,অস্তিত্ব তার শিকরে, তার আপন মনের গহীনে......

ক্রুসেডঃ পর্ব ২ – “দখল” ইসলামের হারানো ইতিহাস।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই সিরিজের প্রথম পর্বে ক্রুসেডের আক্রমণের কারণ এবং ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান জেরুজালেম দখলের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করা হয়েছে। ক্রুসেডের উপর এই সিরিজটি এখন ক্রুসেডারদের দ্বারা মুসলিম নগরীগুলো দখলের ঘটনা বর্ণনা করবে।

৯ই আগস্ট, শুক্রবার, ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দ। দিনটি ছিল ২৯শে রমজান। আবু সা’দ আল-হারাউই নামক এক সম্মানিত কাজী (বিচারক) বাগদাদের প্রধান মসজিদে আচমকা প্রবেশ করে জনসম্মুখে খাবার খাওয়া শুরু করেন। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, সবেমাত্র তিনি দামেস্ক থেকে তিন সপ্তাহ সফর শেষে ফিরেছেন এবং জেরুজালেম হারানোর খবর নিয়ে এসেছেন। তিনি ভেবেছিলেন মুসলিমদের চেতনা জাগিয়ে তুলতে রোজার মাসে দিনের বেলায় খাদ্যগ্রহণ সকলের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হবে। জেরুজালেম হারানোর খবর শুনে বাগদাদবাসী পবিত্র নগরীর জন্য কাঁদতে আরম্ভ করে। আল-মুজতাজির নামক তরুণ খলিফার সামনে আল-হারাউই তার আর্জি পেশ করলেণ যাতে খলিফা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। খলিফা ওয়াদা করেন যে তিনি একটি কমিটি গঠন করে সম্ভাব্য পাল্টা আঘাতের পথগুলো খতিয়ে দেখবেন। কিন্তু পরে সেই ওয়াদা শুধু ওয়াদা-ই থেকে যায়।

ক্রুসেডারদের বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা তখন মুসলিম বিশ্বের ছিলনা। তুর্কি আমিররা প্রায়শই নিজেদের মাঝেই যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো, ফলে শহর এবং গ্রাম ধ্বংসাবশেষে পরিণত হচ্ছিল। খলিফার নিজেরই প্রকৃত কোন ক্ষমতা ছিলনা, তুর্কি জেনারেলদের হাতে তিনি ছিলেন নিছকই এক কলের পুতুল। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলিম বিশ্বের মধ্যে যে ঐক্য ছিল তখন তা অতীতের গল্প বৈ আর কিছুই নয়।



অন্যদিকে ক্রুসেডাররা ছিল শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা ভূমধ্যসাগর উপকূলে চারটি রাজ্য গঠন করে এবং ইউরোপে ফ্রান্স ও জার্মানী যে নীতিতে পরিচালিত হতো সেভাবেই রাজ্যগুলো পরিচালনা করতে থাকে। জেরুজালেম, আন্তাকিয়া ও বৈরুত থেকে মুসলমানদের জাতিগতভাবে নির্মূল করা হলেও বেশীরভাগ আরব (মুসলিম, খ্রিস্টান এবং অর্থোডক্স খ্রিস্টান) গ্রাম্য চাষীরা তাদের নিজ এলাকায় থেকে যায়। শুধুমাত্র জেরুজালেম রাজ্যেই ৩ লক্ষের চেয়েও বেশী আরব বসবাস করত।

এই দখলদারিত্বের এক অনন্য দিক ছিল মুসলিম সংস্কৃতির সাথে ধীরে ধীরে ক্রুসেডারদের আত্মীকরণ। ক্রুসেডপূর্ব শতাব্দীগুলোতে মুসলিম বিশ্ব বিজ্ঞান, দর্শন, প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সৃষ্টিশীলতায় অগ্রগামী ছিল। ইউরোপ তখন ছিল অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত, ঠিক তখন মুসলিমদের জীবনযাত্রার মান এমন পর্যায়ে ছিল যা ইউরোপে কল্পনাও করা যেতনা। ক্রুসেডের সমসাময়িক আরব কাহিনীকার উসামাহ ইবন মুনকিজ তার এক রচনায় লিখেছিলেন: “ফ্র্যাঙ্কদের ব্যাপারে যারা জানতো তাদের কাছে ফ্র্যাঙ্করা ছিল পশুর ন্যায় হিংস্র, আগ্রাসী এবং যুদ্ধবাজ এক জাতি, ঠিক যেমনটা শক্তি ও আগ্রাসনের দিক দিয়ে পশুরা মানুষের চেয়ে এগিয়ে থাকে।”

ধীরে ধীরে মুসলিমদের প্রচলিত চর্চাগুলো দখলদার বাহিনীর সংস্কৃতিতে প্রবেশ করা শুরু করে। দুর্গ তৈরীর মতো ইউরোপীয় কিছু কৌশল শেখা ব্যতীত মুসলিমরা ক্রুসেডারদের কাছে তেমন কিছুই শিখেনি, অন্যদিকে ক্রুসেডাররা বরং তাদের মুসলিম প্রজাদের আচরণই নকল করা ‌আরম্ভ করে। মুসলিমদের ঔষধ, ভাষা, কৃষি, প্রযুক্তি এবং গণিত সবই ক্রুসেডের ফলে পশ্চিমে পৌঁছায়। দাবার মতো জনপ্রিয় খেলা যেটি পারস্যে উদ্ভব হয়েছিল, এই সংঘাতের মাধ্যমে ইউরোপে পরিচিতি লাভ করে।

যাই হোক, মুসলিম বিশ্বে ক্রুসেডারদের এ আক্রমণ বহু-ধর্মের পাশাপাশি সহাবস্থানের কাল্পনিক সমাজের ধারে কাছেও কিছু গড়তে সাহায্য করেনি (যার অস্তিত্ব ঠিক তখন মুসলিম স্পেনে ছিল)। বহিরাগত ইউরোপীয়দের হাতে মৃত্যুর আশংকায় সার্বক্ষণিক ভীত থাকতো মুসলিম নাগরিকরা। যেমন, ক্রুসেডারদের সূত্রমতে, তারা ১০৯৮ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে সিরিয়ান নগরী মা’ররা তে প্রত্যেক নাগরিককে হত্যা করে, এবং শুধু তাই নয়, হত্যার পর তারা মৃতদেহ ভক্ষণ করতে পর্যন্ত উদ্যত হয়। ফ্র্যাঙ্কদের এধরনের বর্বরতার ঘটনায় ধীরে ধীরে মুসলিম বিশ্বের ঘুম ভাঙ্গতে শুরু করে। তবুও ১১১০ এর দশকে দিকে মুসলিমদের বিজয় তখনও বহু দূরের কথা। ১১৪০ এর দশকে ইমাদ আল-দিন জেন্‌গির শাসনকালে স্রোতের গতি পরিবর্তন হতে শুরু করে।

অনুবাদ করা হয়েছেঃ The Crusades Part 2: Occupation

৩য় পর্বে রয়েছে ক্রুসেডারদের পরাজিত করে জেরুজালেমের স্বাধীনতা অর্জনের বিস্তারিত

Sources:

Hodgson, M. (1961). The Venture of Islam . (Vol. 2). Chicago: University of Chicago Press.

Crusades in The New Catholic Encyclopedia, New York: McGraw-Hill Book Company, 1966, Vol. IV

Maalouf, A. (1984). The Crusades Through Arab Eyes. New York: Schocken. (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×