somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মো: সাকিব হাসান
দৃষ্টি তার সীমাহীন,বিশালতা তার আকাশে।গভীরতা তার সাগরে,সপ্ন তার অন্তরে হাসতে চাই জয় এর হাসি।দেখাতে চাই বেঁচে থাকার সপ্ন,অস্তিত্ব তার শিকরে, তার আপন মনের গহীনে......

ক্রুসেডঃ পর্ব ৩ – “স্বাধীনতা অর্জন” ইসলামের হারানো ইতিহাস

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই সিরিজের ১ম পর্ব এবং ২য় পর্বে আমরা ইউরোপের খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের দ্বারা মুসলিম ভূমি আক্রমণ এবং এর কি কি প্রভাব মুসলিম বিশ্বে পড়েছিল সে ব্যাপারে পর্যালোচনা করেছি। সিরিজের এই পর্ব ইসলামের ৩য় পবিত্রতম ভূমির স্বাধীনতা এবং খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করা নিয়ে পর্যালোচনা করবে।

ক্রুসেডারদের আক্রমণের মুখে মুসলিমদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া বস্তুত বড়ই হতাশাজনক ছিল। বাগদাদের অযোগ্য এবং অকার্যকর খলিফা মুসলিমদেরকে তাদের পবিত্র স্থানসমূহ সুরক্ষায় চেতনা জাগিয়ে তোলার ব্যাপারে একটুও মাথা ঘামাননি। অন্যদিকে সেলজুক আমিররা নিজেদের মধ্যেই হানাহানিতে ব্যস্ত ছিল। আর মিশরের ফাতেমীদ শিয়া সাম্রাজ্য প্রায়শই ক্রুসেডারদের সাথে হাত মিলিয়ে সুন্নি সেলজুকদের ক্ষতিসাধনেই লিপ্ত ছিল। আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো কোন অবস্থাই মুসলিমদের ছিলনা। তবে ধীরে ধীরে মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে এবং ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে আরম্ভ করে।

প্রথম যে আমির সত্যিকার অর্থেই ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং সফলও হয়েছিলেন, তিনি হলেন ইমাদ আল-দ্বীন জেন্‌গি। তিনি আলেপ্পো (বর্তমান সিরিয়া) এবং মসুল (বর্তমান ইরাক) এর আমির ছিলেন। যদিও অনেক দিক দিয়েই যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত অন্যান্য তুর্কি আমিরদের সাথে তার মিল ছিল, তবুও বহু দিন পর মুসলিম বিশ্ব এমন এক নেতার সন্ধান পেয়েছিল যার মাঝে একজন প্রকৃত মুসলিম নেতার প্রয়োজনীয় অনেক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী বিদ্যমান ছিল। তাঁর শাসনাধীন অঞ্চলের অনেক প্রাসাদে বসবাস করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত সহজ-সরল জীবন বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর জীবনযাত্রা ছিল তাঁর কর্তৃত্বাধীন সৈন্যদের মতোই সাধারণ। তিনি এসব ব্যাপারে এতোটাই কঠোর আত্মসংযমী ছিলেন যে বিখ্যাত মুসলিম ইতিহাসবিদ ইব্‌ন আসীর তাঁকে “মুসলিমদের জন্য এক ঐশ্বরিক উপহার” হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।

ইমাদ আল-দ্বীন তাঁর সুশৃংখল ও প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী নিয়ে মুসলিম ভূমিগুলো পুনর্দখল শুরু করেন। ১১৪৪ খ্রিস্টাব্দে এদেসা দখলের মাধ্যমে এই পুনর্দখলের সূচনা হয়। দখলের প্রথম দিকে ক্রুসেডাররা সিরিয়ায় অবস্থিত এই শহরটিকে প্রাথমিক আক্রমণের জন্য মূলঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছিল। ইসলামের তৃতীয় পবিত্র ভূমি স্বাধীন করার পথচলাও শুরু হলো এই নগরী পুনর্দখলের মধ্য দিয়েই। ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ আক্রমণের বিরাট এক পরিকল্পনা ছিল ইমাদ আল-দ্বীন এর, কিন্তু ১১৪৫ খ্রিস্টাব্দে অপ্রত্যাশিতভাবে তাঁর জীবনের ইতি ঘটে। এক ফ্র্যাঙ্কিশ চাকরের গুপ্তহত্যার শিকার হন তিনি। কিন্তু মুসলিমদের ঐক্যের ব্যাপারে যে গুরত্বারোপ তিনি করেছিলেন তার ফলে তাঁর গড়া ছোট্ট সাম্রাজ্যটি তাঁর মৃত্যুর পরও ভেঙ্গে যায়নি। তাঁর ছেলে নূর আল-দ্বীন জেন্‌গি সাম্রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। নূর আল-দ্বীন তাঁর বাবার যুদ্ধগুলো অব্যাহত রাখেন, ক্রুসেডারদের গড়া আন্তাকিয়া রাজ্য আক্রমণ করেন, সাথে সাথে দামেস্কের আমিরের সাথে জোট বেঁধে সিরিয়ার দু’টি বড় নগরী আলেপ্পো এবং দামেস্ক ঐক্যবদ্ধ করেন।

কয়েক দশক ধরে নূর আল-দ্বীন দখলদার ক্রুসেডারদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যান বটে কিন্তু খুব একটা অগ্রসর হতে সক্ষম হননি। এসময় যে মুসলিম নেতার হাত ধরে অবশেষে বিজয় এসেছিল তাঁর আবির্ভাব ঘটে – আর তিনি হলেন সালাহ আল-দ্বীন আল-আইয়ুবী।

তখন মিশর ছিল শিয়া ফাতেমীদ সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রানাধীন। কখনো কখনো এরা ক্রুসেডারদের সাথে হাত মিলিয়ে মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষতিসাধন করতো। ১১৭০ এর দশকের দিকে ফাতেমীদ সাম্রাজ্য অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ায় তখন ক্রুসেডাররা মিশর আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং দখলের চেষ্টা চালায়। নূর আল-দ্বীন তাঁর মুসলিম ভাইদের রক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এই বাহিনীর প্রধান হিসেবে তিনি নিযুক্ত করেন আসাদ আল-দ্বীন শের্‌কোহ নামক এক কুর্দি জেনারেল কে। কুর্দিরা হচ্ছে এক সম্প্রদায় যাদের বসতি বর্তমান তুরষ্ক, সিরিয়া, ইরাক ও ইরানে। এই যুদ্ধে আসাদ আল-দ্বীন তার ভাতিজা সালাহ আল-দ্বীনকে সঙ্গে নেন।

মুসলিম সেনাবাহিনী মিশরে ক্রুসেডারদের পরাজিত করতে সময়মতো পৌঁছায় এবং সেখানকার মুসলিমদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়। বিজয়ের পর পরই আসাদ আল-দ্বীন পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ভাতিজা সালাহ আল-দ্বীন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেন এবং মিশরের গর্ভনরের দায়িত্ব গ্রহণ করে ফাতেমীদ সাম্রাজ্যের অবসান ঘটান।

সালাহ আল-দ্বীনের চারপাশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করার আগে আসুন মুসলিম হিসেবে তাঁর গুণাবলীর দিকে একটু আলোকপাত করি। ৩৬ বছর বয়সেই সালাহ আল-দ্বীন মিশরের নেতা হিসেবে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হন। আজ পর্যন্ত মুসলমান ও খ্রিস্টান সকল ইতিহাসবিদ তার বিনয়ের কথা বর্ণনা করেন। তিনি জীবনের সুখ-সাচ্ছন্দ্যের প্রতি আগ্রহী ছিলেননা এবং বরাবরই মুসলিম ভূমিগুলোকে পুনরুদ্ধারের প্রতি মনোযোগী ছিলেন। কথিত আছে তিনি কোন পরিস্থিতিতেই হাসতেন না। যখন তাঁকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হতো, জবাবে তিনি বলতেন, “আমি কিভাবে হাসতে পারি যখন মাসজিদ-আল-আকসা এখনও ক্রুসেডারদের দখলে?” তাঁর উপদেষ্টাগণকে মাঝে মাঝে তহবিলের স্বর্ণমুদ্রা তাঁর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে হতো, কারণ তিনি যদি জানতেন এখনো কিছু স্বর্ণ অবশিষ্ট আছে তাহলে তিনি সেগুলোও সেনাবাহিনীকে আরো শক্তিশালী করার কাজ ব্যয় করে ফেলতেন। তাঁর নিকটস্থ লোকজনদের মতে তিনি নিজের উপর বেশী কঠোর ছিলেন, কিন্তু অন্যদের ব্যাপারে অনেক ছাড় দিতেন, যে গুণটি ইসলামের ৪ খলিফার মাঝেও দেখা যেত। মুসলিম ভূমিগুলো স্বাধীন করার জন্য এই গুণাবলীরই প্রয়োজন ছিল।

সালাহ আল-দ্বীন মিশরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর পরই পর্যবেক্ষকরা মনে করতে লাগলেন যে হয়তো খুব শীঘ্রই সালাহ আল-দ্বীন এবং তাঁর আমির নূর আল-দ্বীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হতে পারে। সালাহ আল-দ্বীন তা অস্বীকার করেন এবং তিনি দৃঢ় কণ্ঠে জানান যে তিনি নূর আল-দ্বীনের প্রতি বিশ্বস্ত এবং ক্রুসেডারদের প্রতিহত করতে তিনি ঐক্যবদ্ধ থাকতে চান। যাই হোক, নূর আল-দ্বীন ১১৭৪ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন এবং সালাহ আল-দ্বীনকে সিরিয়া এবং মিশরের যোগ্য নেতা হিসেবে রেখে যান। তাঁর অঞ্চল তখন ফিলিস্তিনে ক্রুসেডারদের ঘিরে রেখেছিল।

সালাহ আল-দ্বীন অতি সত্ত্বর নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন যে ক্রুসেডারদের আক্রমণ করার জন্য সকল মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ আছে এবং প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফাতেমীদ সাম্রাজ্যের অবশিষ্টাংশ, দ্যা অ্যাসাসিনস বা গুপ্তহত্যাকারী নামে পরিচিত দলটির দিকেও তাঁর নজর দিতে হয়। এই দলের লক্ষ্য ছিল মুসলিম ও ক্রুসেডার নেতাদের হত্যা করা। তাদের তৈরী সমস্যার মুখেও সালাহ আল-দ্বীন ক্রুসেডারদের মোকাবেলা করার লক্ষ্যে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হন।

এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে কয়েক বছর লেগে যায়, কিন্তু ১১৮০-র দশকের শুরুর দিকে সালাহ আল-দ্বীনের সেনাবাহিনী ক্রুসেডারদের হাত থেকে পবিত্র নগরীকে মুক্ত করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। অন্যদিকে এসময় ক্রুসেডারদের অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। তাদের শক্তিশালী কোন নেতা ছিলনা এবং নিজেদের মধ্যেও তারা ঐক্যবদ্ধ ছিলনা, অনেকটা ৮০ বছর আগে জেরুজালেম দখলের সময় মুসলিমদের অবস্থা যেমন ছিল, ঠিক তেমন। ১১৮২ খ্রিস্টাব্দে সালাহ আল-দ্বীন ক্রুসেডারদের অঞ্চল অতিক্রম করেন ও ফ্র্যাঙ্কদের সাথে শেষ লড়াই আরম্ভ করেন।

সালাহ আল-দ্বীনের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল রেনাল্ড শ্যাটিলন, যে তার নিষ্ঠুরতার জন্য বিখ্যাত ছিল। রেনাল্ড দখলকৃত এলাকায় মুসলিমদের প্রায়ই উত্যক্ত করতো এবং হজ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা কাফেলার উপরও হামলা চালাতো। এমনকি একের অধিকবার সে মক্কা ও মদিনা আক্রমণ করার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিল। সালাহ আল-দ্বীন ইসলামের উপর সরাসরি এমন আক্রমণ সহ্য করতে পারেননি এবং রেনাল্ডকে নিজ হাতে শাস্তির দেয়ার সংকল্প করেন।


উত্তর ফিলিস্তিনে হাত্তিন এর প্রান্তর, এখানেই হাত্তিন এর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল

১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে হাত্তিন এর যুদ্ধে সালাহ আল-দ্বীন তার সংকল্প পূরণের সুযোগ পান। এই যুদ্ধে ক্রুসেডাররা জেরুজালেম থেকে তাদের বেশীরভাগ সৈন্যই নিয়ে আসে, সংখ্যায় ছিল প্রায় ২০,০০০। অন্যদিকে ঐক্যবদ্ধ মুসলিমরা ৩০,০০০ যোদ্ধা নিয়ে মোকাবেলা করতে আসে। ক্রুসেডাররা ইউরোপীয় যুদ্ধে অভ্যস্ত ছিল তাই তারা ভারী বর্ম গায়ে যুদ্ধ করতে আসে। এই ভারী বর্ম গায়ে তাদেরকে মরুভূমির মধ্য দিয়ে মার্চ করে যেতে হয়, তার উপর তাদের সাথে পানির পরিমাণও ছিল অত্যন্ত কম। যুদ্ধ যখন শুরু হলো তখন যুদ্ধ করা তো দূরের কথা, ক্রুসেডারদের আর দাঁড়ানোর কিংবা হাঁটার শক্তিও ছিলনা। অতি দ্রুত ক্রুসেডার বাহিনী শোচনীয় পরাজয় বরণ করে এবং রেনাল্ডকে বন্দী করা হয়। অন্যান্য ক্রুসেডার নেতাদের প্রতি সালাহ আল-দ্বীন দয়া দেখালেও, রেনাল্ডের মৃত্যুদণ্ড দেন এবং তা নিজ হাতে কার্যকর করেন। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দাম্ভিকতা, গোঁড়ামি এবং অসম্মান প্রদর্শনকারী ব্যক্তির জন্য এটাই সঠিক বিচার।

ক্রুসেডারদের মূল বাহিনীকে পরাহত করার পর সালাহ আল-দ্বীন জেরুজালেম অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পান, আর ততদিনে জেরুজালেমের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দের ২রা অক্টোবর, ক্রুসেডারদের দ্বারা দখল হওয়ার ৮৮ বছর ২ মাস ও ১৭ দিন পর, সালাহ আল-দ্বীনের সেনাবাহিনী পবিত্র নগরীটি স্বাধীন করেন।



সালাহ আল-দ্বীনের চরিত্রের আসল রূপ প্রকাশ পায় তিনি কিভাবে জেরুজালেমে বসবাসকারী খ্রিস্টানদের সাথে আচরণ করেছিলেন তা খতিয়ে দেখলে। ৮৮ বছর আগে ক্রুসেডাররা শহরের সকল অধিবাসীর উপর গণহত্যা চালিয়েছিল, ক্রুসেডারদের ভাষায় “গোড়ালি সমান উচ্চতায়” রক্ত পৌঁছানো পর্যন্ত। মুসলিমরা জেরুজালেম স্বাধীন করার সময় সালাহ আল-দ্বীন সকলকে সামান্য মুক্তিপণের বিনিময়ে শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের সহায় সম্পত্তিসহ শহর ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। যেসকল গরীব লোকদের মুক্তিপণ (বর্তমান মূল্যে প্রায় ৫০ ডলার) দেয়ার সামর্থ্য ছিলনা, তাদেরকে তিনি বিনামূল্যেই শহর ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন।

জেরুজালেমের স্বাধীনতা আরেকটি ইউরোপীয় ক্রুসেডের জন্ম দেয় যা ১১৮৯ সালে পবিত্র নগরীতে এসে পৌঁছে। এই ক্রুসেডের নেতৃত্বে ছিলেন ইংরেজ রাজা রিচার্ড দ্যা লায়নহার্ট। কয়েকটি অমীমাংসিত যুদ্ধের পরে ক্রুসেডারদের মিশন ব্যর্থ হয় এবং জেরুজালেম মুসলিম নিয়ন্ত্রণেই রয়ে যায়। এই যুদ্ধগুলোতেও সালাহ আল-দ্বীন সাহসিকতা ও মহানুভবতা প্রদর্শন অব্যাহত রাখেন। এক যুদ্ধে তিনি দেখতে পান যে রিচার্ডের ঘোড়া মারা গিয়েছে, তাই তিনি মুসলিম সেনাবাহিনীর একটি ঘোড়া তাকে উপহার হিসেবে পাঠান। কারণ সালাহ আল-দ্বীন বিশ্বাস করতেন, কোন জেনারেল এর পক্ষে ঘোড়া ব্যতীত তার সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব নয। তাঁর মহানুভবতা ও দয়ার কথা ইউরোপে তাঁর শত্রুদের মাঝেও কিংবদন্তী হয়ে গিয়েছিল, যাদের কাছে তিনি অত্যন্ত সম্মানের পাত্র ছিলেন।

সালাহ আল-দীনের নেতৃত্ব ও একনিষ্ঠতা মুসলিম ঐক্যের এক নতুন যুগ ফিরিয়ে আনে। এমনকি তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁর প্রতিষ্ঠিত আইয়ুবী সাম্রাজ্য এই আদর্শ সমুন্নত রেখেছিল এবং শত বছর ধরে বহিরাক্রমণের মুখে মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ রেখেছিল। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফিলিস্তিন ও জেরুজালেম মুসলিমদের হাতে ছিল। সে বছর ১ম বিশ্বযুদ্ধের অংশ হিসেবে বৃটিশ সেনাবাহিনী জেরুজালেম দখল করে। যদিও সালাহ আল-দ্বীনের যুগ বহু আগে গত হয়েছে এবং আমরা আজ নতুন সব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, তবুও ক্রুসেডের সময়কালে মুসলিমদের ঐক্যের গল্প আমাদের কখনোই ভুলে যাওয়া চলবেনা।

অনুবাদ করা হয়েছেঃ The Crusades Part 3: Liberation

Sources:

Hodgson, M. (1961). The Venture of Islam . (Vol. 2). Chicago: University of Chicago Press.

Maalouf, A. (1984). The Crusades Through Arab Eyes. New York: Schocken. (শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×