somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মো: সাকিব হাসান
দৃষ্টি তার সীমাহীন,বিশালতা তার আকাশে।গভীরতা তার সাগরে,সপ্ন তার অন্তরে হাসতে চাই জয় এর হাসি।দেখাতে চাই বেঁচে থাকার সপ্ন,অস্তিত্ব তার শিকরে, তার আপন মনের গহীনে......

বর্ষপঞ্জির ইতিহাস: তকিউল্লাহর ভাষ্যে

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবহমান কাল থেকেই বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়,
শ্রাবণসহ বারো মাস বাঙালির একান্ত নিজস্ব ছিল।
বাংলাসহ ভারতীয় ভূখণ্ডে শকাব্দ, লক্ষণাব্দ ইত্যাদি
যে বর্ষপঞ্জি প্রচলিত ছিল তাতে এই মাসগুলোই ছিল।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সনগুলো ছিল চান্দ্র-সৌর মিশ্র
সন। এর মানে হল, মাস গণনা করা হত চান্দ্র
পদ্ধতিতে আর বছর গণনা করা হত সৌর পদ্ধতিতে।
ব্যাকরণ অনুযায়ী, অগ্রহায়ণ মানে অগ্র+হায়ণ(বৎসর)।
অর্থাৎ বছরের প্রথম।
অগ্রহায়ণ মাসে সে সময় নতুন ফসলও উঠত। এ থেকে
ধারণা করা যেতে পারে প্রাচীন বাংলায় হয়ত বছরের
প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ।
চান্দ্র মাস আর সৌর বৎসরের মধ্যে সমন্বয় করার
জন্য তিন বছর পর পর একটি অতিরিক্ত চান্দ্র মাস
গণনার রীতি ছিল। এই অতিরিক্ত মাসটিকে বলা হত
মল মাস। মল মাসে পূজাপার্বণ নিষিদ্ধ ছিল।
এদিকে ১২০১ সালে বখতিয়ার খিলজির বাংলাজয়ের পর
বিভিন্ন অঞ্চলে হিজরি সনেরও প্রচলন শুরু হয়।
বিশেষ করে দরবারের কাজকর্মে।
১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সুবা বাংলা নামে মোগল
সাম্রাজ্যের অনর্গত হয়। সে সময় পুরো সুবাতে খাজনা
আদায়ের জন্য একটা সমন্বিত বর্ষপঞ্জির
প্রয়োজনীতা অনুভূত হতে থাকে।
সম্রাট আকবরের নির্দেশে আমির ফতেহউল্লাহ
সিরাজি মলমাস বাদ দিয়ে সৌর বর্ষের বৈশিষ্ট্য
নিয়ে একটি বর্ষপঞ্জি প্রণয়ন করেন। মূলত হিজরি
সনকে ফসলী সনে রূপান্তরিত করা হয়। তবে মাসের
নামের ক্ষেত্রে বাংলা নামগুলোই রাখা হয়। সে সময়
থেকে বৈশাখকে প্রথম মাস হিসেবে গণনা করা হয়।
বাংলা সনের জন্ম ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে একথা
মোটামুটিভাবে অধিকাংশ পঞ্জিকা বিশারদ মেনে
নিয়েছেন।
ইংরেজ আমলে শহরে সরকারি কাজকর্ম চলতো
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। কিন্তু বাংলার
গ্রামে গঞ্জে জমিদারের খাজনা, পুণ্যাহ, হালখাতা
ইত্যাদি চলতো বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী।
বাংলা মাস কখনো ৩০, ৩১ এমনকি ৩২ দিনেও হতো।
কালের বিবর্তনে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে বেশ কিছু
জটিলতা ও সমস্যা দেখা দিতে থাকে। পঞ্জিকা প্রণেতা
ও জ্যোর্তিবিদদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে বাংলা
বর্ষপঞ্জি। কবে কোন মাস শুরু হবে, কবে কোন বছর
শুরু হবে তা আগে থেকে বলার উপায় হয়ে পড়ে অত্যন্ত
জটিল। বাংলা ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করাও প্রায় দুঃসাধ্য
হয়ে পড়ে।
এই অবস্থায় ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি ডক্টর মুহম্মদ
শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে সুদক্ষ ও খ্যাতনামা পণ্ডিত ও
জ্যোতির্বিদদের সমন্বয়ে একটি বাংলা পঞ্জিকা
সংস্কার উপসংঘ গঠন করে। এই উপসংঘের সদস্য ছিলেন
অধ্যাপক আবুল কাশেম, পণ্ডিত তারাপদ ভট্টাচার্য
কাব্য-ব্যাকরণ-পুরাণ স্মৃতিতীর্থ ভাগবত শাস্ত্রী,
সাহিত্যোপাধ্যায় স্মৃতি-পুরাণ রতœ জ্যোতিঃ
শাস্ত্রী; পণ্ডিত অবিনাশ চন্দ্র কাব্য
জ্যোতিস্তীর্থ, পণ্ডিত সতীশচন্দ্র শিরোমণি
জ্যোর্তিভূষণ এবং বাংলা একাডেমির তৎকালীন
পরিচালক সৈয়দ আলী আহসান।
১৯৬৬ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি কমিটি চূড়ান্ত রিপোর্ট
পেশ করে। অধ্যক্ষ এম এ হামিদ এই সভায় নিয়মিত
অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়। স্বাধীন দেশে
নতুনভাবে বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয়বাহী বাংলা
বর্ষপঞ্জির প্রয়োজন অনুভূত হয়। সেময় ১৯৭২ সাল
থেকে বাংলা প্রচলিত বর্ষপঞ্জি সংস্কারের জন্য
গবেষণা শুরু করেন। কারণ শহীদুল্লাহ কমিটি প্রণীত
বর্ষপঞ্জিতে কিছু কিছু দুর্বলতা ছিল। আর চিরাচরিত
বাংলা পঞ্জিকার সবচেয়ে বড় ত্রুটি ছিল যে এর লিপ
ইয়ার গণনার পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট ছিল না এবং বর্ষ
গণনায় বর্ষমানের পরিমাপের সঙ্গে লিপ ইয়ার গণনা
সঙ্গতিপূর্ণ নয়। চারশ বছর পরে পহেলা বৈশাখ
তিনদিন সরে যাওয়ার আশংকাও ছিল।
১৯৮৮-৮৯ সালে ১৩৯৫ বঙ্গাব্দে বাংলাদেশে একটি
সমন্বিত বিজ্ঞান সম্মত বর্ষপঞ্জি প্রবর্তনের কথা
মুহম্মদ তকিউল্লাহ ও অন্যান্য লেখকরা বিভিন্ন
পত্রিকায় লিখতে থাকেন। ফলে বিষয়টি বিবেচনার
জন্য বাংলা একাডেমি একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন
করে। তার এবং অন্যান্যদের দেওয়া প্রস্তাব বিবেচনা
করে। পরে তার প্রস্তাব গ্রহণ করে শহীদুল্লাহ
কমিটির লিপ ইয়ার সংক্রান্ত প্রস্তাবের সংস্কার
করা হয়।
বাংলাদেশ সরকার বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ
অনুমোদন করে ১৯৯৬ সালে বঙ্গাব্দ ১৪০২-১৪০৩
বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করে। এর নাম দেওয়া হয় শহীদুল্লাহ
পঞ্জিকা। তার প্রস্তাব অনুযায়ী, এখন যে সরকারি
বাংলা বর্ষপঞ্জি চালু রয়েছে তা খুবই সহজ। এতে
খ্রিস্টীয় সন ও বঙ্গাব্দের মাসগুলোর তারিখ সব
সময়ের জন্য স্থির রয়েছে। ফলে প্রতিবছরই ১৪
এপ্রিল পহেলা বৈশাখ হবে। একইভাবে অন্যান্য মাসের
তারিখও স্থির থাথবে। এই ক্যালেন্ডার ভবিষ্যতেও
কোনোদিন পরিবর্তন হবে না।
মুহম্মদ তকিউল্লাহ ১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৩৭৯৯
খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্যালেন্ডার তৈরি করেছেন এবং তা
বাংলা একাডেমির বিশেষজ্ঞ কমিটিতে পেশ করে
দেখিয়েছেন যে এর কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। নতুন
নিয়মে যে বাংলা পঞ্জিকা চলছে তা ঋতুনিষ্ঠ সায়ন
( ট্রপিকাল) পঞ্জিকা।
পরিচয়: মুহম্মদ তকিউল্লাহর জন্ম ১৯২৬ সালে। তিনি
১৯৫১ সালে ঢাকা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ
সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের
আলোকচিত্রগুলো তারই তোলা। তিনি ভাষাবিদ ডক্টর
মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:২৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×