এরপর পাঁচ না হতেই আবার ঝামেলা বাধালো সে। ছোট খালার বিয়ে খেয়ে এসে টাইফয়েডের জীবাণু নিয়ে এসেছে। আবার মরার মত বিছানায় পড়ে থাকা, মেজাজ খিটখিটে করে। ঈদের দিনেও সুস্থ হলো না ও। তাকে যেতে হলো হসপিটালে। এবার থাকতে হলো রাত দু'টো পর্যন্ত - এক হাতে স্যালাইন বেধে। অবশ্য নার্সটা খুব ভালো ছিলো। বাচ্চাদের পছন্দ করতো।
প্রথম শ্রেনীতে ওঠার পর একবার নানুবাড়ি যাওয়া হলো। বিরাট জায়গা। ছোটাছুটি করে শেষ করা যায় না এমন অবস্থা! তবে বেশ কয়েকটা জায়গা উচুনিচু - তখুনিই বোঝা উচিত ছিলো ভালো লক্ষণ না। তিন চার দিনের মাথায় দুই হাটুই কেটে গিয়েছে। মেয়েতো কাঁদতে কাঁদতে শেষ। কদিন পরেই স্কুল শুরু হলো। মা কতবার বলে দিয়েছেন না দৌড়াতে! কিন্তু সে লোভ সামলাতে পারলো না। ছোয়াছুয়ি খেলতে নেমে পড়লো। আবারও ভাগ্য খারাপ - মাঠের মাঝখানের বটগাচের শেকড়ে পা লেগে পড়ে গেলো, আর ব্যাথা পেলো ঠিক হাটুতেই। জামা তুমি দেখি হাটু রক্তে ভরে গেছে। নিজের দোষে নিজেই কেঁদে ফেললো।
পরের বছর বাক্স-পেটরা নিয়ে আবার নানুবাড়ি। এবারও কান্ড ঘটালো দুর্ভাগিনী, তবে ভিন্ন ধরনের। বন্ধুর সাথে নদীর পাড়ে হাটছিলো, হঠাৎ কিছু একটা হয়েছে, ওমনি তার রাগ হয়ে গেলো। তাকে একা ফহেলে বনের ভেতর রওনা হলো। তাকে পাওয়া গেলো দু'তিন ঘন্টা পর। পরের গ্রাম থেকে কয়েকটা ছেলে এসে দিয়ে গিয়েছে। আরও এক পশলা কান্না।
চিকেন পক্স হলো বারো বছরে। এরকম এক অসময় হয়েছে, যে সে মজা বলতে যা কিছু ছিলো, কোন কিছুতেই থাকতে পারেনি। বন্ধুরা দল বেধে ক্যম্পে গেলো, স্কুল কনসার্টে গেলো, সে কোথাও যেতে পারলো না। ছুটির অর্ধেক বাসায় কাটতে হলো। ইতি মধ্যে বন্ধুরা আরেকবার পিকনিক করে ফেলেছে। মেয়েটা খালি সারাদিন টিভির সামনে বসে থাকে, আর ঘুমায়। খাওয়াতেও যেন রুচি নেই। মাঝরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে হঠাৎ উঠে বসে। এক মাস এভাবেই কেটে গেলো।
দু'বছর পর। স্কুলে যাওয়ার পথে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। ধপ করে পড়ে যাওয়ার কারনে গালের পাশটা কেটে গিয়েছিলো। সেবার রিতিমত ব্লাড টেস্ট, গ্লুকোজ টেস্ট সব করা হলো। এ্যম্বুলেন্সে চড়া হলো। হসপিটাল থেকে এক গাদা চকলেট নিয়ে বাসায় ফেরা হলো
।
এতো ধকল যাওয়ার পর এখন সে মনে হয় বেশ শক্ত হয়ে উঠেছে। জ্বর পর্যন্ত হয় না। স্কুলে যেতে ইচ্ছে না করলেও কিছু করার থাকে না। রশুন নিয়ে রোদে হাটলেও কাজ হয় না, স্বাস্থ্য ঠিকই থাকে। রোগগুলো সব অসময়ে হলো। জীবনের সব কিছুই অসময়ে হয়।
সেদিন একজন একটা কথা বলেছিলো: লাইফটাকে ধরে একটা চড় দেওয়া উচিৎ। তখন তার মনে হলো, আসলেইতো, জোরে একটা চড় দিলে মনে হয় শান্তি আসবে। তার আগে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১১:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



