somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চড়-দেওয়ানি জীবন

২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৬ ভোর ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার আগেই নিওমোনিয়া হয়েছিলো। মা বাবা কেউ প্রথমে বুঝতে পারেনি, তারপর যখন এত ছোট হাসি খুশি একটা মানুষের চোখ মুখের আলো নিভে যেতে থাকলো, তখন তাদের সন্দেহ হলো। বাবা মাঝরাতে রিকশা করে হসপিটালের জন্য রওনা হলো। কোলে প্রায় নিস্তেজ শিশুটা। মা রাতের ঘুম হারাম করে চিন্তায় অস্থির। আল্লাহ শেষ পর্যন্ত তাদের ইচ্ছা পূরণ করলো। মেয়েটা এ যাত্রায় বেঁচে গেলো।

এরপর পাঁচ না হতেই আবার ঝামেলা বাধালো সে। ছোট খালার বিয়ে খেয়ে এসে টাইফয়েডের জীবাণু নিয়ে এসেছে। আবার মরার মত বিছানায় পড়ে থাকা, মেজাজ খিটখিটে করে। ঈদের দিনেও সুস্থ হলো না ও। তাকে যেতে হলো হসপিটালে। এবার থাকতে হলো রাত দু'টো পর্যন্ত - এক হাতে স্যালাইন বেধে। অবশ্য নার্সটা খুব ভালো ছিলো। বাচ্চাদের পছন্দ করতো।

প্রথম শ্রেনীতে ওঠার পর একবার নানুবাড়ি যাওয়া হলো। বিরাট জায়গা। ছোটাছুটি করে শেষ করা যায় না এমন অবস্থা! তবে বেশ কয়েকটা জায়গা উচুনিচু - তখুনিই বোঝা উচিত ছিলো ভালো লক্ষণ না। তিন চার দিনের মাথায় দুই হাটুই কেটে গিয়েছে। মেয়েতো কাঁদতে কাঁদতে শেষ। কদিন পরেই স্কুল শুরু হলো। মা কতবার বলে দিয়েছেন না দৌড়াতে! কিন্তু সে লোভ সামলাতে পারলো না। ছোয়াছুয়ি খেলতে নেমে পড়লো। আবারও ভাগ্য খারাপ - মাঠের মাঝখানের বটগাচের শেকড়ে পা লেগে পড়ে গেলো, আর ব্যাথা পেলো ঠিক হাটুতেই। জামা তুমি দেখি হাটু রক্তে ভরে গেছে। নিজের দোষে নিজেই কেঁদে ফেললো।

পরের বছর বাক্স-পেটরা নিয়ে আবার নানুবাড়ি। এবারও কান্ড ঘটালো দুর্ভাগিনী, তবে ভিন্ন ধরনের। বন্ধুর সাথে নদীর পাড়ে হাটছিলো, হঠাৎ কিছু একটা হয়েছে, ওমনি তার রাগ হয়ে গেলো। তাকে একা ফহেলে বনের ভেতর রওনা হলো। তাকে পাওয়া গেলো দু'তিন ঘন্টা পর। পরের গ্রাম থেকে কয়েকটা ছেলে এসে দিয়ে গিয়েছে। আরও এক পশলা কান্না।

চিকেন পক্স হলো বারো বছরে। এরকম এক অসময় হয়েছে, যে সে মজা বলতে যা কিছু ছিলো, কোন কিছুতেই থাকতে পারেনি। বন্ধুরা দল বেধে ক্যম্পে গেলো, স্কুল কনসার্টে গেলো, সে কোথাও যেতে পারলো না। ছুটির অর্ধেক বাসায় কাটতে হলো। ইতি মধ্যে বন্ধুরা আরেকবার পিকনিক করে ফেলেছে। মেয়েটা খালি সারাদিন টিভির সামনে বসে থাকে, আর ঘুমায়। খাওয়াতেও যেন রুচি নেই। মাঝরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে হঠাৎ উঠে বসে। এক মাস এভাবেই কেটে গেলো।

দু'বছর পর। স্কুলে যাওয়ার পথে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। ধপ করে পড়ে যাওয়ার কারনে গালের পাশটা কেটে গিয়েছিলো। সেবার রিতিমত ব্লাড টেস্ট, গ্লুকোজ টেস্ট সব করা হলো। এ্যম্বুলেন্সে চড়া হলো। হসপিটাল থেকে এক গাদা চকলেট নিয়ে বাসায় ফেরা হলো

এতো ধকল যাওয়ার পর এখন সে মনে হয় বেশ শক্ত হয়ে উঠেছে। জ্বর পর্যন্ত হয় না। স্কুলে যেতে ইচ্ছে না করলেও কিছু করার থাকে না। রশুন নিয়ে রোদে হাটলেও কাজ হয় না, স্বাস্থ্য ঠিকই থাকে। রোগগুলো সব অসময়ে হলো। জীবনের সব কিছুই অসময়ে হয়।

সেদিন একজন একটা কথা বলেছিলো: লাইফটাকে ধরে একটা চড় দেওয়া উচিৎ। তখন তার মনে হলো, আসলেইতো, জোরে একটা চড় দিলে মনে হয় শান্তি আসবে। তার আগে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১১:২২
২৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রবাসীর মৃত্যু ও গ্রাম্য মানুষের বুদ্ধি!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০



একজন গ্রামের মানুষের মাথায় ১০০ জন সায়েন্টিস্ট, ৫০ জন ফিলোসফার, ১০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৫ জন ব্লগারের সমপরিমাণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এসব লোকজন বাংলাদেশের এক একটি সম্পদ।

বিস্তারিত:... ...বাকিটুকু পড়ুন

×