আমরা এমন একটা দেশে বাস করি যে দেশের দ্রোহীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করতে হয়। যে দেশের দ্রোহীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় আবার তাদের দাপটে অনেক দেশ প্রেমিক মুখ ফুটে কিছু বলার বা প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। স্বাধনতার 41 বছরেও এদেশ থেকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি নির্মুল করা সম্ভব হয় নি। বরং সেই শক্তিটা তাদের আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে অহরহ। সেই শক্তিটাই এই দেশের একদল যুবশক্তিকে তাদের মত দ্রোহী তৈরী করছে। 71-এ একদল নরপশু এদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করেছে। যারা এদেশের মা-বোনদের করেছে বীরাঙ্গণা। সেই নরপশুগুলো আজও এই স্বাধীন বাঙলাদেশের পবিত্র পরিবেশে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সত্যিই অনেক কষ্ট হয়। আজ সেই সকল নর পশুর বিচার দাবীর জন্য, তাদের শাস্তির দাবিতে বাঙ্গালীকে করতে হচ্ছে আন্দোলন, করতে হচ্ছে হরতাল। তাহলে কী বাঙলাদেশ আজও তাদের ঘৃনিত প্রভাব মুক্ত হতে পারেনি। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নাম করে যারা এদেশের কিছু সংখ্যক সাধারণ মানুষকে তাদের দলে টানছে তাদের মুখে থু থু ছিটাতে ইচ্ছা করে। সাথে তাদেরও যারা সেইসব নরপশুদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য সাপোর্ট করে যাচ্ছে। গ্রাম-বাঙলার অসংখ্য সাধারণ মানুষ জন আজও মনে করে যে, সাইদীর ফাঁসী হলে ইসলামের অবমাননা হবে কিংবা ইসলামের অনেক ক্ষতি হবে। তাহলে বোঝাই যায় এরা সাধারণ মানুষের মনে কতটা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
রাজাকার, আল-বদর উপাধিগুলো ইসলাম ধর্মের আলোকে অনেক পবিত্র ও গর্বিত উপাধি। আলোচনার খাতিরে পুনরায় বিষয়টি প্রকাশ করছি। ইসলামধর্ম প্রতিষ্ঠা কিংবা মুসলমানদের অস্তিত্ব নির্ভর একটি ধর্মীয় যুদ্ধ হল “বদর যুদ্ধ”। এই যুদ্ধটির গুরুর্ত্ব ইসলামের ইতিহাসে অনিস্বীকার্য্। হিজরতের পর খুব সামান্য সংখ্যক মুসলিম অনুসারী নিজেদের ধর্ম, বিশ্বাস, সর্বপরি সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য বীরদর্পে বিপুল সংখ্যক শত্রুসৈন্যের মুখোমুখী হয়েছিল এবং নিজেদের ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে স্বক্ষম হয়েছিল। সেই পবিত্র ধর্ম যুদ্ধে যারা মুসলিম সেনা ছিল তাঁদের যুদ্ধপরবর্তী উপাধি হল “আল-বদর” আর যারা তাঁদের সেবা করে কিংবা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য-সহযোগীতা করেছিল তাঁদের উপাধি হল “রাজাকার”। যা তাঁরা অর্জন করেছিল ধর্মযুদ্ধে, সত্যের পথে সংগ্রাম করে। কিন্তু 71-এ পাকিস্থানী দালালরা সেই সব পবিত্র উপাধিগুলোকে নিজেদের নামের সাথে যুক্ত করে করেছিল দেশের বিরোধীতা, করেছিল নারী ধর্ষন, নিজেদের মা-বোনকে তুলে দিয়েছিল পাকিস্থানী পশুদের হাতে। তারা সেই উপাধিগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করল ঘৃনিত কতগুলো উপাধিতে এবং সেই সাথে করল ধর্মের অবমাননা। তাহলে সেই 71-এ পাকিস্থানী দালালদের সংগঠন কী করে এই মুক্ত বাঙলাদেশ এখন বীরদর্পে দাপিয়ে বেড়ায় ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। বাঙ্গালী মাত্রই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কামনা করা উচিত। কেন তাদের বিচারের জন্য হরতাল করবে, কেন অনলাইন-ব্লগে লিখবে? দেশ প্রধানের অনেক আগেই উচিত ছিল তাদের বিচারের আওতায় এনে বিচার কার্য সম্পন্ন করা।
সাধারণ মানুষকে ধর্মীয় বিভিন্ন উদ্বৃতির অপব্যাখ্যা দিয়ে দেশের মানুষের শান্তি বিনষ্টকারী সকল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা উচিত। তা না হলে বাঙলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাময়, ঘোর কুসংস্কারের একটি দেশ হবে। যে দেশের শাসক হবে দেশদ্রোহীরা।
**লাল সালাম**