somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

সিরাজুল আলম খানের সীমাবদ্ধতা ও দক্ষতা!

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি সিরাজুল আলম খান একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য পড়লে মনে হবে- একাত্তরে তিনিই সব করেছেন। জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত, জয়বাংলাসহ বিভিন্ন শ্লোগান তার নিউক্লিয়াসই করেছে। ঢাকাসহ দেশজুড়ে সংঘটিত সমস্ত আন্দোলন, পরিকল্পনা, হরতাল বাস্তবায়ন, ১১ দফাসহ ছাত্রদের যাবতীয় কর্মপরিকল্পনা সবই হয়েছে নিউক্লিয়াস ও বিএলএফ এর নিপুণ পরিকল্পনায় এবং এর নেপথ্যে ছিলেন সিরাজুল আলম খান। খটকা লাগে যখন তিনিই বলেন, ‘১৯৬৯ সালের আগে জানতেন না নিউক্লিয়াস ও বিএলএফ এর কথা’। তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডে মাত্র দুজন বুদ্ধিজীবীকে পেয়েছেন যারা মার্চের আগেই স্বাধীনতার কথা ভাবতে পেরেছিলেন- একজন আমাদের বিক্রমপুরের কামরুদ্দীন আহমদ, আরেকজন প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ড. আহমদ শরীফ। বুদ্ধিজীবীরা এখনকার মতোই তখনও জন-মানুষের কোন কাজে আসেনি কয়েকজন ছাড়া। একালেও দেখি- অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও আনু মোহাম্মদকে।

বইটি পড়তে গিয়ে বিস্মিত হলাম, যখন দেখলাম ৬ দফা প্রনয়ণের বিষয়টি তিনি জানতেনই না। শেখ মণি তাকে নিয়ে গেল আলফা ইন্সুরেন্স কোম্পানির অফিসে। তাকে বইরে বসিয়ে মণি ভেতরে গেলেন। ৫ মিনিটের মধ্যে মণি এসে টাইপ করা একটি কাগজ তার হাতে দিয়ে মনি আবারো ৫ মিনিটের জন্য ভিতরে গেলেন। এর মধ্যে তিনি দুবার কাগজটি পড়লেন। সামনে থাকা চা খাওয়া হল না। আবেগে মনির ফেরত আসার অপেক্ষা না করেই তিনি বেরিয়ে গেলেন। ইকবাল হলে এসে নিউক্লিয়াসের বাকি দুই সদস্য রাজ্জাক ও আরেফকে দেখালেন। তারা বহুবার পড়লেন ৬-দফার প্রস্তাব। তাদের কাছে এটি ছিল স্বাধীনতার প্রস্তাব। তাদের ম্যাগনা কার্টা বা অধিকারের দলিল। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার প্রশ্নে যে অনেক দূর এগিয়ে ছিল সেটা তার লেখায় আসেনি। বঙ্গবন্ধুর কৌশলও তিনি প্রকাশ করেননি। ছয় দফাকেই আমরা বলি স্বাধীনতার মূল ভিত্তি। খটকাতো লাগেই- এটা প্রনয়ণের বিষয়ে সিরাজুল আলম খান জানতেনই না। তাই বলতেই পারি তার স্বাধীনতার স্বপ্ন আরো অনেকেই দেখেছেন এবং সে পথেও তারা ছিলেন।

বইতে তিনি দাবি করেছেন- আওয়ামী লীগকে ব্রিটেনের লেবার পার্টির মতো করে গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন। মনে হবে বঙ্গবন্ধু যেন তার অনুরোধেই আওয়ামী লীগকে ব্রিটেনের লেবার পার্টির মতো করে গড়ে তুলেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেন, ব্রিটেনের লেবার পার্টির মতো শ্রমিক-কৃষকদের প্রাধান্য দিয়ে দলকে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য শ্রমিক এবং কৃষকদের মধ্যে দলকে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেশটাকে ব্রিটেনের মতো কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। বঙ্গবন্ধু গভীর বিশ্বাস নিয়ে তাকে বললেন, ‘তুই-ই পারবি’। তার অহমিকাই প্রকাশ পেয়েছে এখানে। মনে হবে শেষ পর্যন্ত যে বাকশাল গঠিত হল তা সিরাজুল আলম খানের সেই পরামর্শেই। বিজয়ের পর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে তিনি দেশ পরিচালনার জন্য ১৫ দফা প্রস্তাবের ১ম দফাতেই বলেছেন- বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠনের জন্য। মজার ব্যাপার হল, সিরাজুল আলম খান বাকশালেরও বিরোধীতা করে বলেছেন- বিপ্লবী জাতীয় সরকার আর বাকশাল এক নয়। তার অহমিকা প্রকাশের আরেকটি নজির দিচ্ছি। তিনি লিখেছেন- চতুর্থবার দেখা হওয়ার সময় যাদু মিয়া ও তোয়াহা সাহেবের সামনে মওলানা ভাসানী বলেন, ‘তোমরা যদি একজনও সিরাজের মতো হতে পারতা তাহলে আমি অনেক কিছু করতে পারতাম। মুজিবের শক্তিই তো হলো সিরাজ।’ এটুকু পড়লে মনে হবে- শেখ মুজিব যা করেছেন সবই সিরাজুল ইসলাম খানের শক্তির জন্য। তিনি যদি এতোটাই বলশালী হতেন তবে স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু তাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতেন। সিরাজুল আলম খান বিভিন্ন স্থানে বলেছেন, অমুকের আমার সাংগঠনিক দক্ষতা এবং চিন্তা-ভাবনার গভীরতার ওপর আস্থা ছিল। এ বিষয়টাও আমার কাছে খুব হালকা লেগেছে। কর্ম দিয়েই বুঝিয়ে দিতে হয় দক্ষতা ও চিন্তা-ভাবনার গভীরতাকে। স্বাধীনতার মতো একটি বড় জায়গায় কারো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে খাটো করা যায় না।

১১ দফা নিয়ে তিনি লিখেছেন- ১১-দফা আন্দোলনের পরিরকল্পনা এবং এর সাংগঠনিক বিস্তারে বলতে গেলে নিউক্লিয়াস এর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠকরাই নেপথ্যে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১১-দফা কর্মসূচি প্রণয়ন এবং আন্দোলন পরিচালনার জন্য সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনে নিউক্লিয়াস নেতাদের তথা তার ভূমিকাই প্রধান ছিল। জয়বাংলা শ্লোগানটি বাস্তবায়নেও তার মূল ভূমিকা ছিল। স্বাধীনতার ইশতেহার প্রণয়নের কাজটি সম্পাদন করার দায়িত্বও তাকে দেয়া হয়। দীর্ঘ আলোচনা শেষে তিনিই বলেন, আমার সোনার বাংলাই হবে আমাদের জাতীয় সংগীত। ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আব্দুর রউফকে নিয়ে তিনিই স্বাধীনতার ইশতেহারের খসড়া প্রস'ত করেন যা রাতের মধ্যেই প্রেস থেকে ছাপানো হয়।

বইয়ের শুরুতে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের চিন্তা কেন তার মধ্যে আসলো তার একটি ঘটনার কথা বলেছেন। তিনি চাচার কাছে দিল্লি বেড়াতে গিয়ে দেখেন ওখানে সবকিছুই বড়বড়, অথচ ঢাকায় তেমন কিছুই নাই। দিল্লির তুলনায় খুবই মামুলি। শুনে তার চাচা বললেন, ‘ঢাকায় নাই কিন' করাচিতে আছে। রাজধানী না হলে বড় কিছু হয় না। আমরা তো প্রদেশ। সে কারণে আমাদের বড় কিছু নাই’। তার মধ্যে ভাবনা এলো- কোন দেশ যদি স্বাধীন না হয় তবে সে দেশে বড় কিছুই হয় না- এমন একটি ভাবনা তাকে সর্বক্ষণ তাড়িয়ে বেড়াতে থাকে। এরপরে যখন নিউক্লিয়াস গঠিত হয় তখন মনে হবে- ঢাকাকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন দেশ গঠনের সেই চিন্তারই বহিপ্রকাশ হল নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াস এতো কিছু করতো আর আমরা তা জানতে পারলাম বইটি প্রকাশের পরে। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এতোদিন গুপ্ত অবস'ায় রাখার কারণও বোধগম্য হয় না। বইটিতে তার কাজের সীমাবদ্ধতা যেমন প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি তার সাংগঠনিক দক্ষতা অতিরঞ্জিত হয়েই প্রকাশিত হয়েছে।

এমন খাপছাড়া নয় তাঁর কাছ থেকে সুলিখিত একটি সত্যনিষ্ঠ সুবিশাল রাজনৈতিক জীবনালেখ্যই প্রতাশা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১৭
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×