somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

এতো পীর কেন চর থেকে আসে?

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে পীরের সংখ্যা কতো? আমি দক্ষিণের একটি বড় শহরের একটি সড়কে গিয়ে তাজ্জব বনে গেলাম- সড়কের ধার ধরেই বহু পীরের নামের সাইনবোর্ড। আমার নামেও একজন পেয়ে গেলাম। শুনেছি দেশে পীরের সংখ্যা ২ লক্ষ ৯৮ হাজার! অনেকে বলেন, এরা হাক্কানি পীর নয়। হাক্কানি পীর আছে অল্প কয়েক জন! হাক্কানি কারা? কে তাদের নির্নয় করবেন? বাস্তবিক মুরিদদের কাছে একমাত্র তার পীরই হাক্কানি। পীরগণ দাবি করেন তারা এমন ওলি-আল্লাহ যারা কোন তরিকার প্রতিষ্ঠাতা বা খলিফা। পীরদের আমরা সাধারণত দক্ষিণ এশিয়া ও ইরান-ইরাকেই দেখি। পীর শব্দটি ফারসি অর্থাৎ এর ঠিক আরবি শব্দও নেই। অনেকে শায়খ/শায়েখ শব্দকে পীর বলে চালাতে চান। তবে শব্দ দুটির আলাদা অর্থই বহন করে। পীরগণ সবসময় দাবি করেন তারা মুরিদদের শাফায়ত করবেন। তাদের বক্তব্য শুনলে মনে হবে যেন তারা শাফায়াত করার দায়িত্ব পেয়েছেন। পীর না ধরে যেনো মুক্তি মিলবে না। অথচ কোরআন-হাদিসে পীর ধরার কথা বলা হয়নি। পীর ধরা ফরজ নয, সুন্নত নয়, নফলও নয়। ব্যবসায়ীদের কাস্টমার ধরার মতো বিষয়।

চরমোনাই পীরের একটি বইতে দেখলাম- হাশরের ময়দানে তার মুরিদদের জন্য জাহাজ আসবে। সেই জাহাজে করে মুরিদরা পুলসিরাত পার হয়ে যাবেন। অনেক পীরই দাবি করেন, তার মুরিদ হলে আখেরাতে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে। তিনিই যেহেতু আল্লাহর ওলি তাই তিনিই মহানবী (সা.) এর শাফায়ত পেতে সহায়তা করতে পারবেন। অনেক পীর মুরিদদের ধোঁকা দিতে একটি হাদিসের কথা বলেন, ‘যার পীর নাই, তার পীর শয়তান।’ আবার অনেকে এগুলোকে জাল হাদিসই বলেন। তাহলে এমনটা কেন বলেন? ব্যবসার জন্যই বলেন। বিস্মিত হই যখন দেখি পীরদের অধিকাংশরই জন্ম ৭টি জেলায়- ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, লক্ষীপুর ও চট্টগ্রাম। এর অধিকাংশই আবার চরাঞ্চলে। কেন এতো পীরের জন্ম চরাঞ্চলে?

পীরদের অন্ধ-অনুসারী দরকার হয় দুটি কারণে। প্রথমত যা বলবে তাই প্রশ্নহীন বিশ্বাস করে প্রচারণা চালানোর জন্য আর দ্বিতীয়ত বিপুল সংখ্যক অসচেতন দরিদ্র মানুষ নিয়ে দল ভারি করা। আমি একজন পীরের উত্থান দেখলাম সিরাজদিখানের চন্দনধুল গ্রামে। তাঁর মুরিদরা কয়েকটি অলৌকিক ঘটনার কথা প্রচার করলেন তার একটি এমন:
এক মহিলা গলায় ঘ্যাগ (গলগণ্ড) নিয়ে পীর ছাহেবের কাছে আসলেন। পীর ছাহেব গলায় ফু দিয়ে পুকুরে ডুব দিতে বললেন। মহিলা পুকুরে ডুব দিয়ে উঠে দেখে ঘ্যাগ নাই সাথে গলার স্বর্ণের চেইনও নাই। মহিলা বলল, ‘হুজুর চেইন ছাড়া গেলে আমার স্বামী মেরে ফেলবে’। পীর ছাহেব বললেন, ‘ঘরে রাখা কলসে হাত দিলেই পেয়ে যাবে’। মহিলা বিশ্বাস করল না। সে চেইন ফেরত চাইল। পীর ছাহেব মহিলাকে আবারো পুকুরে ডুব দিতে বললেন। ডুব দিয়ে উঠে দেখলো মহিলার গলায় স্বর্ণের চেইন ফিরে এসেছে, সাথে ঘ্যাগও।

এমন কয়েকটি ঘটনা বিপুলভাবেই ছড়িয়ে দেয়া হল। প্রতিদিন ২০/৩০ হাজার মুরীদ দোয়ার জন্য যেতো মোমবাতি ও আগিরবাতি নিয়ে। ২০/৩০ হাজার মোমবাতি+আগরবাতি (প্রতিজনের গড়ে ৭০/- টাকা) আবার চলে যেতো দোকানে। বছরে আয় কতো? ২০,০০০ জন × ৭০ টাকা ×৩৬৫ দিন= ৫১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। এক বছরের আয় দিয়েই তিনি বনানীতে বাড়ি কিনেছেন। অথচ আগে চালাতেন ছোট একটি চালের দোকান। কষ্টেসৃষ্টে সংসার চলতো। গলগণ্ড রোগ হয় আয়োডিনের অভাবে। অলৌকিকভাবে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন কারণই নেই। মানুষ প্রশ্ন তুলে না পীরের ভুয়া কেরামতির জন্য। পীরেরা প্রয়োজনে টাকা দিয়ে নাটক সাজায়। অল্প টাকায় তথাকথিত মুরীদদের দিয়ে মিথ্যা অলৌকিকতার প্রচার চালায়। অন্ধ বিশ্বাস রাখা ও প্রচার চালাতে এমন লোক পাওয়া সহজ হয় চরাঞ্চলে। চরাঞ্চলের মানুষ সাধারণত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকে, তাদের জীবন হয় কষ্টসাধ্য, তারা সচেতনতা অর্জন করে না। কাছাকাছি যখন একজন অলৌকিক ক্ষমতাধর মানুষকে পেয়ে যায় তখন শতভাগ বিশ্বাস করে প্রশ্নহীনভাবে। নদী ও প্রকৃতির হাত থেকে বাঁচতেও তাদের অলৌকিক শক্তি প্রয়োজন বলে মনে করেন। পীরের নির্দেশে তারা পীরের অলৌকিকতার গল্প হাটে বাজারে ছড়িয়ে দেয়। তখন শুধু স্থানীয় মানুষই নয়, দূরদূরান্ত থেকে হতভাগ্য মানুষ নিষ্কৃতি পাওয়ার আশায় তাদের কাছে আসে। সাজানো অনেক অলৌকিক ঘটনা দেখে তারা বিশ্বাস স্থাপন করে। পীর ছাহেব তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা প্রমাণ করতে প্রায়শই মুরীদদের মধ্যে উপকার পেয়েছে এমন মানুষদের ডাক দেয়। তার সাজানো লোকেরাই উঠে দাঁড়ায় এবং বলে, তাকে ঢাকার ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে ফেরত দিয়ে বলেছিল, আর ৩ মাস বাঁচবেন। হুজুরের দোয়ায় আজ ৩ বছর তিনি সুস্থ আছেন এবং রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। একজন মানুষের মধ্যেও প্রশ্ন জাগে না- এটা কি সাজানো? ওই রোগীকে কি টাকা দিয়ে অভিনয় করাচ্ছে?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×