somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

আন্তঃধর্মে বিবাহঃ মানবিক সমাজের সম্ভাবনা!

০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিক্রমপুরের একটি উচ্চ শিক্ষিত মুসলিম পরিবারের পরিচিতি পুস্তিকা দেখে মুগ্ধ হলাম। তাদের তিন ভাই বিয়ে করেছে ভিন্নভিন্ন তিন ধর্মের নারীকে। জাপান প্রবাসী বিয়ে করেছেন জাপানিজ বৌদ্ধ, রাশিয়ায় ডাক্তারি পড়তে গিয়ে আরেকজন বিয়ে করেছেন রাশান খৃস্টান এবং আরেক ভাই আমেরিকায় বিয়ে করেছেন মার্কিন ইহুদি। তাঁর ভাইদের মধ্যে একজন মাত্র ধর্মবিশ্বাসী। তারই মেয়ে বিয়ে করেছেন দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মণ ছেলেকে। এই পরিবারের কয়েকজনের সাথেই আমার ঘণিষ্ঠতা রয়েছে। তারা সকলেই সুখে আছে। তাদের সন্তানরাও একেকজন ‍উচ্চ মাত্রার মেধাবী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করছে। আমার যে হিন্দু বন্ধু অসীম কুমার হোসনে আরাকে বিয়ে করে অষ্ট্রেলিয়াতে বসবাস করছে তাদেরও রয়েছে এক সন্তান। সেও খুবই মেধাবী ও অষ্ট্রেলিয়ার একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। ওরা একটি সুখি পরিবার।

বারাক ওবামা ও স্টীভ জবস পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবী মানুষদের দুজন। বারাক ওবামা নিগ্রোয়েড মুসলিম পিতার সন্তান হয়েও মেধার জোরেই আমেরিকার দুই টার্মের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন। বলা হয়, নির্বাচন করার সুযোগ থাকলে তিনি তৃতীয় টার্মেও প্রেসিডেন্ট হতেন। তাঁর মা ছিলেন ককেশীয় (সাদা ইউরোপীয় অর্থে) খৃস্টান। সংসারও বেশিদিন টিকেনি। ওবামার মেধার বিকাশে তা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি। আরো কঠিন জীবন ছিল স্টীভ জবসের। তাঁরও বাবা ছিলেন সিমেটিক মুসলিম আর মা ককেশীয় খৃস্টান। ছাত্র-জীবনে ভালবাসাবাসি করতে গিয়ে সন্তানের জন্ম হলে তাকে ত্যাগই করতে হয়। মা-বাবাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পালক পিতার আয় বেশি ছিল না। স্টীভ জবসের পড়াশোনাও সম্পন্ন করতে পারেনি। কিন্তু তাঁর মেধাকে আটকেও রাখা যায়নি। তিনি এ্যাপল প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীর তাবত মানুষের জীবন যাপনই পাল্টে দেন। সহজ করে দেন জীবন, বেঁচে যায় কোটি কোটি কর্মঘণ্টা। এমন অনেক উদাহরণই দিতে পারি। এখনো বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী এবং ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ নিজে ককেশীয় ইহুদী হয়ে সংসার করছেন মঙ্গোলিয়াড বৌদ্ধ প্রিসিলা চ্যানের সাথে। জুকারবার্গ ইহুদি ও বৌদ্ধ দুই ধর্মের প্রতিই আগ্রহ দেখিয়েছেন। যদিও বাস্তবিক তাঁরা ধর্মবিশ্বাসী নন।

বাঙালি বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যেও আমরা এমনটা দেখি। এদের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশি নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনুছ বিয়ে করেছিলেন রাশিয়ান খৃস্টান ভেরা ফরোস্টেনকোকে। তাদের ৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের সন্তান মনিকা ইউনুস একজন সঙ্গীত শিল্পী। ইসলাম ত্যাগকারী প্রখ্যাত লেখক স্যার সালমান রুশদী ৫টি বিয়ে করেন। এরমধ্যে একজনও মুসলিম নেই। একজন ভারতীয় পদ্ম লক্ষ্মী- যার সাথে তিন বছরের দাম্পত্যজীবন ছিল। ভারতীয়দের মধ্যে দুজন অর্থনীতিতে নোবেল পান, দুজনই বাঙালি। দুজনকেই বিপেজি খুবই অপছন্দ করেন। সুযোগ পেলেই তাদের বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন তুলেন গোচনাপায়ী বিজেপির বর্বর নেতারা। অমর্ত্য সেনের প্রথম স্ত্রী ছিলেন হিন্দু সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেন। পরে তিনি খৃস্টান ও ইহুদী নারীকে বিয়ে করেন। বর্তমান স্ত্রী অধ্যাপক এমা জর্জিনা রথচাইল্ড লন্ডনের বিখ্যাত ইহুদী রথচাইল্ড পরিবারের মেয়ে। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী খৃস্টান অর্থনীতিবিদ ইভা কলোনির ১৯৮৫ সালে মৃত্যুর ৬ বছর পরে ১৯৯১ সালে তৃতীয় বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের সাথেও তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। নবনীতা দেবসেনও গত বছর মৃত্যুবরণ করেছেন। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বিজেপি আক্রমণ করে এ কারণে। তাঁরও প্রথম স্ত্রী ছিলেন ভারতীয় হিন্দু ডা. অরুন্ধতী তুলি ব্যানার্জি। তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তিনি ২০১৫ সালে বিয়ে করেন অধ্যাপক এস্তের দুফ্লোকে। এস্তের একজন ফরাসী অর্থনীতিবিদ। তারা যৌথভাবেই নোবেল পান। প্রখ্যাত ফরাসী গণিতবিদ মাইকেল দুফ্লোর কন্যা এস্তের দুফ্লোকে বর্তমান বিশ্বের সেরা ১০০ বুদ্ধিজীবীর একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। অমর্ত্য ও অভিজিৎকে বিজেপি ঘৃণা করার কারণ হল- তারা দুজনেই বিজেপির ভ্রান্ত অর্থনীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন।

ভারতের বহু নায়ক নায়িকাও আন্তঃধর্মে বিয়ে করেছেন। ভারতের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মনসুর আলি খান পতৌদি বিয়ে করেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী রবীন্দ্রনাথের পরিবারের মেয়ে শর্মিলা ঠাকুরকে। তাদের মধ্যে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে সমস্যা হয়নি। তাদের সন্তান সাইফ আলি খান ও সোহা আলি খান হিন্দি সিনেমায় অভিনয় করেন। সাইফের প্রথম স্ত্রী প্রখ্যাত অভিনেত্রী অমৃতা সিং ছিলেন হিন্দু। ১৩ বছরের দাম্পত্য জীবন ২০০৪ সালে বিচ্ছেদ হলে এর ৮ বছর পরে বিয়ে করেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী হিন্দু কারিনা কাপুরকে। সোহা আলি খান বিয়ে করেন অভিনেতা হিন্দু পণ্ডিত পরিবারের কুণাল খেমুকে। শাহরুখ খান ও আমির খানের স্ত্রীও হিন্দু। শাহরুখ খান স্ত্রী গৌরীকে নিয়ে সুদীর্ঘকাল ধরেই সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন। আমির খান রিনা দত্তের সাথে ডিভোর্সের পরেই বিয়ে করেন পরিচালক কিরণ রাওকে। দুজনেই হিন্দু। বাংলাদেশে মুনির চৌধুরী ও কবীর চৌধুরীর বোন অভিনেত্রী ফেরদৌসী চৌধুরী রামেন্দু মজুমদারকে বিয়ে করে ফেরদৌসী মজুমদার হন। তাদের সন্তান ত্রপা মজুমদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। অভিনয়ও করতেন। বর্তমানে ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ও নির্মাতা। তাদের ধর্ম কি? তাদের যেমন কোন ধর্মও নাই, কোন সমস্যাও নাই। শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস বিয়ে করেছিরেন। বাংলাদেশের চিত্রজগতে বিয়ে ও যৌনতা নিয়ে ঢাকঢাকগুড়গুড় আচরণ রয়েছে। অপু বিশ্বাস মা হলেও তা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারেনি। তাদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হলেই মানুষ জানতে পারে। শাকিব খান এ বিষয়ে সর্বশেষ বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁর সংসার ভেঙ্গেছেন। দুজনের প্রেম-ভালবাসা থাকলে যেমন বিয়ে করার অধিকার তৈরি হয় আবার বনিবনা না হলে ডিভোর্সেরও অধিকার তৈরি হয়। একই ধর্মে বিয়ে করার পরওতো আলমগীর ও তাহসানসহ অনেকে সংসার টিকেনি। তাহসানের সাথে ডিভোর্সের পরে মিথিলা বেছে নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু নির্মাতা সৃজিতকে। সমী কায়সার হিন্দু রিঙ্গোকে মুসলিম বানিয়ে বিয়ে করার পরেও সংসার টিকেনি। সংসার করার সময় যদি না-মিলে তবে তা না টেকানোইতো উচিত। সহ্য না হলে সে কষ্টকর জীবন যাপন করাইবা কেন? ভালবেসে আন্তঃধর্মে বিয়ে না-করার জন্য এগুলো অজুহাত হতে পারে না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৩৫
১৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×