somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

জেনোম থেকে আমরা যা শিখি?

১৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কোনও জীব প্রজাতির প্রতিটি স্বতন্ত্র জীব যেসব বংশগতিমূলক তথ্য (জিন) বহন করে, তাদের সমষ্টি বা সামগ্রিক অনুক্রমকে জেনোম বলে। বিজ্ঞানীরা মানুষ, শিম্পাঞ্জি, বানর থেকে শুরু করে আজকের আলোচিত করোনাভাইরাসের জিনোমের অনুক্রমই সমাপ্ত করেছেন। বিজ্ঞানীরা হাজার হাজার রকমের জিনের তথ্যভাণ্ডারে অনুসন্ধান করে দেখেছেন সবই হচ্ছে বিবর্তনের খেলায়। তারা ইতিমধ্যে দেখেছেন কেমন করে আমাদের পূর্বপুরুষদের জেনোম পরিবর্তিত হযয়েছে, যখন তারা প্রাইমেট থেকে ভিন্ন শাখায় বিবর্তিত হতে শুরু করেছিল।

এই যুগটাকে বলা যায় জেনোমের যুগ। বিজ্ঞানীর সুযোগ পেয়েছেন পর্যবেক্ষণ করার। তারা বুঝতে পারছেন কেমন করে সাধারণ আদি পূর্বপুরুষ থেকে প্রজাতির উৎপত্তি হয়েছে। সাধারণ পুর্বপুরুষ থেকে কিভাবে আজাকের প্রজাতি এসেছে তার ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে তাদের ডিএনএ তে। যা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বয়ে বেড়ায়। সুপারকম্পিউটার এবং উন্নত পরিসংখ্যানীয় মডেল ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে ডিএনএ বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রজাতিদের মধ্যে আন্তসম্পর্কের স্বরুপ সংক্রান্ত বিবর্তনবাদ পরীক্ষা করার সুযোগ পেয়েছেন। তারা সক্ষম হয়েছেন বিবর্তনবাদকে প্রমাণ করতে। বিবর্তনের দিক থেকে আমাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী সম্পর্কযুক্ত জীবিত জলজ প্রাণী হলো লাংফিস আর সিলোকান্থ, এর সত্যতা জীনতত্ত্ববিদরা ইতিমধ্যেই প্রমান করেছেন ডিএনএ প্রযুক্তির মাধ্যমে। আমাদের প্রাইমেট জ্ঞাতিগোষ্ঠীর মধ্যে শিম্পাঞ্জিকে শনাক্ত করা হযয়েছে আমাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী জীবিত আত্মীয় হিসাবে।

বিজ্ঞানীরা গণনা করেছেন সেই সব জিনগুলো যা দুর্ঘটনা বশতঃ অনুরুপ সদৃশ প্রতিলিপি হিসাবে মানুষের বংশধারায় বিস্তার করেছে। প্রাইমেটদের জেনোমের তুলনায় আমাদের জেনোমে সে জীনগুলোর বর্তমানে একাধিক অনুলিপি বিদ্যমান। বিজ্ঞানীরা সেই সব জিন শনাক্ত করেছেন যা পরিবর্তিত হয়েছে ‘সিউডোজিনে’ এবং মানুষের কিছু জিন যার শুরু প্রাইমেটদের জেনোমে ননকোডিং অংশ হিসাবে। বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন তিনটি প্রোটিন যা মানুষের শরীরে রয়েছে কিন্তু শিম্পাঞ্জীর মধ্যে নাই। তারা এই তিনটি প্রোটিনকে কোড করা জিনকে খুঁজে বের করেন যা প্রায় হুবুহু শিম্পাঞ্জীর জেনোমের ননকোডিং ডিএনএ অনুক্রমের কিছু অংশের সাথে মিলে যায়। কোন মিউটেশনই এই ননকোডিং জীনের অংশকে প্রোটিন তৈরীতে সক্ষম সক্রিয় জিনে রুপান্তরিত করেছে। এভাবেই বিবর্তনকে প্রমাণ করা হয়েছে।

ডিএনএ কোন যাদুর কাঠি নয় যে মুহূর্তের মধ্যে আমাদের সব প্রশ্নের সমাধান দেবে। জীবনের বিবর্তনের কোন একটা পর্যায়ে, অনেকগুলো বংশধারা বিবর্তিত হয়েছে অপেক্ষাকৃতভাবে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে। অনেক প্রধান প্রধান গোত্রের প্রাণি যা বর্তমানে জীবিত আছে তারা মোটামুটি ৫৫ কোটি বছর আগে, প্রায় ৫ কোটি বছর ধরে বিবর্তিত হয়েছে। পৃথিবীতে জীবনের ইতিহাসে এই সময়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া বেশ কঠিন। জিন সবসময়ই প্রজাতির সীমানা গ্রাহ্য করে না। এটি বেশি প্রযোজ্য ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য অনুজীবের ক্ষেত্রে, যেখানে জিন এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে অনায়াসে যাতায়াত করে। এককোষী প্রাণিদের বিবর্তন বোঝার জন্য, বিজ্ঞানীরা কোন একটি নির্দিষ্ট জিনের প্রতি বেশী করে নজর দিচ্ছেন এবং দেখতে পাচ্ছেন বিবর্তন কিভাবে ঘটে। তাদের চোখের সামনে উঠে আসছে প্রাণের বিকাশের এক মহাইতিহাস।

আমাদের জেনোম আরো অন্যভাবেও অনেক স্বতন্ত্র, যদিও খুব সুক্ষ তা সত্ত্বেও এই স্বতন্ত্রতা গুরুত্বপুর্ণ। যদিও আমাদের প্রোটিন তৈরীর প্রায় সকল জিন আর শিম্পাঞ্জীর অনুরুপ জিনের তেমন কোন পার্থক্য নেই। তাদের মুল ডিএনএ বেসের অনুক্রমের মধ্যে মাত্র ১.৩% পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এই পার্থক্য জীববিজ্ঞানীয় দিক থেকে অর্থহীন। জীনের দুটি সংস্করণেরই কোড করা প্রোটিন সমানভাবেই কার্যকরি দুই প্রজাতির ক্ষেত্রে। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নির্বাচন তার কাজ করে যায়। বিজ্ঞানীদের হাতে এখন জিনের ভাণ্ডার। তা বিশ্লেষণ করে তারা সুষ্পষ্ট প্রমান পেয়েছেন আমাদের পুর্বপুরুষদের মধ্যে কোন মিউটেশনগুলো তাদের প্রজনন সাফল্যকে তরান্বিত করেছে। প্রাইমেট থেকে আমাদের পুর্বপুরুষরা যখন থেকে পৃথক শাখায় বিবর্তিত হতে শুরু করেছিল তখন থেকে প্রাকৃতিক নির্বাচন তার চিহ্ন রেখে গেছে ননকোডিং ডিএনএ অংশেও। বিজ্ঞানীরা এখন সক্ষম হয়েছেন আমাদের প্রজাতির জন্য অনন্য ডিএনএর অংশগুলোর অর্থ বুঝতে। ডারউইন বিবর্তনবাদকে সামনে আনার দেড়শো বছর পরে আজ বহুভাবেই প্রমাণ হচ্ছে বিবর্তনবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৯:১১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×