somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

আমাদের অনেক পিএইচডিধারী কেন অন্ধবিশ্বাসী?

২৭ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের পদার্থবিদ্যার এক দুর্বল শিক্ষক পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে আসলে কৌতুহলবশত জানতে চাইলাম, স্যার আপনি কি নিয়ে পিএইচডি করলেন? স্যার খুবই ক্ষেপে গেলেন। রেগে বললেন, ‘তুমি পিএইচডির কি বুঝ? তুমি কি পিএইচডি করেছ?’ পরে আরেকজন শিক্ষক আমাকে বললেন, ওনি পরিবার পরিকল্পনার উপর পিএইচডি করেছেন। ওই শিক্ষক ঠিকমতো পড়াতে পারতেন না অথচ তিনিও পিএইচডিধারী হলেন! এটা পদার্থবিদ্যার শিক্ষকের কি কাজে লাগবে? এখন ওনি ওয়াজ নসিহত করে বেড়ান। অতি ধর্মান্ধ ও প্রতিক্রিয়াশীল মানুষ। অনেকেই ওনার সাথে যোগাযোগ রাখেন। উপরের লেভেলে তার ভাল হাত রয়েছে। আল্লামা ডক্টর শমশের আলী স্যারও খুবই ধার্মিক মানুষ। তিনি কোয়ান্টাম মেথডের পক্ষে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান। অনেকেই তাদের উদাহরণ দেন। দেখুন পদার্থবিদ্যার শিক্ষক হয়েও বিবর্তনবাদকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমাদের আরেক শিক্ষক জীববিজ্ঞানের গাজী আজমল স্যারের বিবর্তনবিরোধীতার কথা আগেও বলেছি।

কয়েক বছর আগে খুব হইচই পড়ে যায় একটি খবর পড়ে যে, ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রিধারীদের ধরতে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুধু ডিগ্রিধারী নয়, যারা এ সনদ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত তাদের আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে সংস্থাটি। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের হিসেবে দেশে সাড়ে আট হাজারের মতো ব্যক্তি ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। তাদের অনেকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। দুদক বহু আগেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিল। তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তা নেবে দুদকের এ সংক্রান্ত তদন্ত টিম। তদন্তের খবর আর পড়ার সুযোগ হয়নি। তবে এটা বুঝেছি এই ভুয়া পিএইচডিধারীদের অনবরত পরলৌকিক শক্তির কাছে ফরিয়াদ জানাতেই হয় যেন, এই জীবনে ধরা না পরি, তুমি ইজ্জ্বত দিয়েছ, রক্ষার মালিকও তুমিই। তাদের অন্ধবিশ্বাসী হতেই হয়। তার উপরে যদি কিছু মৌলবাধী সংগঠনের সাথে জড়িত থাকা যায় তবে তারাও রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান এবং অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের বেশ কয়েকটি গবেষণা নিবন্ধে চৌর্যবৃত্তির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এগুলো প্রকাশিত হলে, বিভিন্নভাবে গলা ফাটাচ্ছেন সামিয়া রহমান। তিনি এক নারীর দিকে আঙুল তুলে দাবি করছেন সবই ষড়যন্ত্র। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল, ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ প্রবাদটির কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আবারও এক অধ্যাপিকা গবেষণা পত্র চুরি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। এবার অভিযোগের তীর বিশ্ববিদ্যলয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের দিকে। এ ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করতে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের কাছে দাবি জানিওয়েছেন বেশ কএয়কটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ। ৩ মার্চ ২০২১ তারা উপাচার্য বরাবর এই অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগ পত্রের সাথে অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের ‘চৌর্যবৃত্তির আশ্রয়ের’ প্রমাণও দেওয়া হয়। গত বছরই অভিযোগ উঠে ৯৮ শতাংশ হুবহু নকল পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের (থিসিস) মাধ্যমে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীর। গত তিন বছরে পত্রিকায় শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধেই এমন জালিয়াতির বহু ঘটনা উঠে এসেছে।

২৫ মার্চ ২০২১ তারিখেও প্রথমআলোতে একটি কলাম প্রকাশিত হয়েছে যার শিরোনাম ‘জালিয়াতির পিএইচডি লইয়া আমরা কী করিব’। এই পিএইচডি লইয়া আমাদের কোন ফায়দা নাই তবে পিএইচডিধারীদের নিয়ে আমরা খুবই বিপাকে রহিয়াছি। তাহারা অহরহই ডিগ্রিটির ব্যবহার করিয়া আমাদিগকে বড়ই বেকায়দায় ফালাইয়া দেয়। তাহারা বলিতে চাহে, ‘অলৌকিকতাই সব’, ‘পরমই সত্য চরম’, ‘বিজ্ঞান লুক্কায়িত রহিয়াছে প্রাচীন গ্রন্থসমূহে’, ‘বিজ্ঞানের সবই আসিয়াছে ঐখান হইতে’। ইহা শ্রবণ করিয়া ছাগুগণ লাফাইয়া উঠে, ‘আরে দেখ পিএইচডিধারী কহিয়াছেন!’ আমরা সাধারণ মানুষ এই ভুয়া পিএইচডিধারীদের যন্ত্রণায় মহাবিড়ম্বনায় রহিয়াছি।

গত ১৩ মার্চ ২০২১ দৈনিক কালেরকণ্ঠ পত্রিকায় ‘টাকায় পিএইচডি জালিয়াতিতে ভরা গবেষণা’ শীর্ষক এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে লেখা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের গবেষণা জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পর এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ উঠছে। রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে ৮০/এ/১ সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে অবস্থিত লিংকন হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট। এই প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি ও মাস্টার্স অব ফিলোসফি (এমফিল) ডিগ্রি দেওয়া হয়। আমেরিকান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ডিগ্রি তারা দিচ্ছে চার লাখ টাকায়। এ ছাড়া তারা মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব গ্রিন ওয়াইজ, লন্ডনের লিংকন ইউনিভার্সিটিসহ আরো একাধিক ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ডিগ্রি দেয়। তার জন্য আরো বেশি টাকা খরচ করতে হবে। ভর্তি হওয়ার প্রথম চার মাস প্রতি শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ক্লাস। দুই বছরে পিএইচডি ডিগ্রির নিশ্চয়তা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

আমাদের শিক্ষার মান যে প্রশ্নবিদ্ধ তা নিয়ে বহুবারই কথা উঠেছে। শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আর অসংখ্য পিএইচডিধারী অথচ বৈশ্বিক জ্ঞানসূচক ২০২০-এ বাংলাদেশের অবস্থান ভুটানেরও নিচে!
গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, বর্তমানে ভুয়া পিএইচডি রয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি।এতো ভুয়া, নকল, জালিয়াতিপূর্ণ গবেষক আমাদের ভাবতেও কষ্ট হয়। আবার এদের কারণেই দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার বিরুদ্ধে সামাজিক ভাবাদর্শ গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। এরা অনবরত অন্ধবিশ্বাসের পক্ষে কথা বলে মূর্খ ছাগুদের লাফানোর সুযোগ করে দেয়। ছাগুরা মনে করে কত পিএইচডি তাদের পক্ষে রয়েছে। এদের দমন করা প্রকৃত পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের জন্যও প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৪৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যর্থ হলে উপদেষ্টাবৃন্দই তোপের মুখে পড়বেন সবার আগে

লিখেছেন এমএলজি, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:০০

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একটা লক্ষ্যণীয় পার্থক্য হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সরকারি অফিস আদালতে দুর্নীতিবাজরা ভীষণ অস্বস্তিতে পড়েছিল; কিছুদিনের জন্য দুর্নীতি প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলা চলে।

এদিকে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অথবা শরৎকাল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:১০


রোদ হাসলে আকাশের নীল হাসে।
গুচ্ছ গুচ্ছ সাদা মেঘ দল ব্যস্ত হয়ে
দূর সীমাহীন দিগন্তে ছুটে।

লিলুয়া বাতাসে তোমার মুখে এসে পড়া চুল আর
ঢেউ খেলানো আঁচলের সাথে—
কাশবনে সব কাশফুল নেচে যায়।
নিভৃতে একজোড়া অপলক... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গঃ স্কুলে ভর্তি.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৪০

প্রসঙ্গঃ স্কুলে ভর্তি.....

সেই ষাট সত্তর দশকের কথা বলছি- আমাদের শিক্ষা জীবনে এক ক্লাস পাস করে উপরের ক্লাসে রেজাল্ট রোল অনার অনুযায়ী অটো ভর্তি করে নেওয়া হতো, বাড়তি কোনো ফিস দিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন্দির দর্শন : ০০২ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি পূজা মন্ডপ ও নাচঘর বা নাট মন্দির

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের জমিদার বাড়িগুলির মধ্যে খুবই সুপরিচিত এবং বেশ বড় একটি জমিদার বাড়ি। পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি সম্পর্কে একটি লেখা আমি পোস্ট করেছিলাম সামুতে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে কলকাতা থেকে রামকৃষ্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদিন সবকিছু হারিয়ে যাবে

লিখেছেন সামিয়া, ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



একদিন সবকিছু ফিকে হয়ে যাবে,
সময়ের সাথে হারিয়ে যাবে স্মৃতি।
মনে থাকবে না ঠিক ঠাক কি রকম ছিল
আমাদের আলাদা পথচলা,
হোঁচট খাওয়া।
মনে থাকবে না
কাছে পাওয়ার আকুতি।
যাতনার যে ভার বয়ে বেড়িয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×