somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিউশনির গল্প

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিউশনি করার সুবাদে একটা পরিবারের সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক হয়েছিল। এবং এতটাই গভীর সম্পর্ক হয়েছিল তা মনে হয় চরম আঘাত পাওয়ার জন্যই!!!

যাইহোক, ঐ বাড়িতে অন্য সবকিছুর পাশাপাশি একটা বিবাহ উপযোগী সুন্দরী কণ্যাও ছিল।
তার সাথে আমার প্রণয় ছিল কি না জানি না তবে কেন জানি একদিন তাকে এক নজর না দেখলে ভালো লাগত না। আবার ঔ আমি একদিন না গেলে আমার সাথে বাঝে আচরন করত সুযোগ বুঝে। উল্লেখ্য আমার ছাত্রটি ছোট ছিল ফলে কিছু বুঝত না।

এভাবে চলছিল বেশ কয়েক মাস।
তো একদিন বিকেলে পড়াতে গিয়ে দেখি- বেশ কিছু নতুন মানুষ এবং স্পেশাল খাবারের আয়োজন।
আমার বুঝতে বাকি থাকলো না যে কি হতে চলছে?

যাইহোক বাড়ীর সবাই আমাকে অতিথিদের সাথে কথা বলতে এবং আপ্যায়ন করাতে বলল। আমিও সুবোধ ছেলের মতো প্রফুল্ল চিত্তে তাদের সাথে ইতিবাচক কথা বার্তা ও খাবার খেতে সহযোগিতা করতে লাগলাম।

কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমার জ্বলে যাচ্ছিল। যাইহোক একএকসমদেখি ওকে ওকে শাড়ী পরিয়ে অল্প সাজিয়ে অনেকটা জোর করেই অতিথিদের সামনে আনা হচ্ছে!!
আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওর চোখে আমার চোখ পরে গেল। আমি অবোধ হলেও সে চোখের ভাষা পড়তে মোটেও ভুল করিনি।
মনে হলো- আমি যেনো ওর শরীরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছি পারলে ও যেনো আমাকে দৃষ্টি দিয়ে পুড়িয়ে দেবে!!!!!

যাইহোক অতিথিগণ ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়ে চলে গেল এবং আমাদের খাওয়ার পর ছাত্র কতৃক আহুত (ডাক পেয়ে) ভিতরে ওর ভাবীর কক্ষে চলে যাই। এবং ভিতরে গিয়ে দেখি ওর ভাবী আর ও বসে আছে। ভাবী বেরিয়ে গেলে ভয়ংকর এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো!!!!

তখন ও সম্ভবত ওর মধ্যে ছিল না। আমাকে একের পর এক যৌক্তিক/ অযৌক্তিক প্রশ্ন বাণে জর্জরিত করল লাগলো এবং সাথে সাথে পুরোনো কিছু কথা স্মরণ করিয়ে দিতে লাগল।

এর পূর্বে কেন আমি আমাদের ও ওদের বাড়িতে বিয়ের কথা বলি নাই, অতিথিদের সাথে কেন কৌশলে নেতিবাচক কথা বললাম না ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ছিলাম নির্বাক পাথরের মতো দাঁড়িয়ে। কেননা নেহায়েত আবেগী ভালোবাসার চেয়ে ঐ বাড়ির মান মর্যাদা আমার কাছে অনেক বড় মনে হচ্ছিল!!!!!

পরিস্থিতির এক পর্যায়ে ও আমার খুব কাছে চলে এসেছিল কোন অভিপ্রায়ে তা আমি আজও জানি না। কিন্তু ঠিক ঐসময়ে ওর মা আমাদের কাছাকাছি অনাকাঙ্খিত অবস্থায় দেখে ফেলে!!!
তারপর কি ঘটেছিল আমি প্রকাশ করতে চাই না- তবে একটা কথা শুধু বলছি "দুনিয়ারতে নাকি এমন কেউ আর নেই যাকে বিশ্বাস করা যায়!!!!!'

হায় রে অবুঝ আবেগী ভালোবাসা!!!
হায় রে নারীর বুদ্ধি!
সেদিন যদি আজকের মত করে ও বুঝত যে- ভালবাসার চেয়ে বাস্তবত অনেক বড় তাহলে সেদিন আবেগে তাড়িত হয়ে একটা ভুল করে আমার মুখে কলঙ্কের কালিমা লেপন করে সেদিন ঐ বাড়ি ছাড়তে হত না।

ও ছিল আমার দেখা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমতী রমনী।
আমি যতদিন ঐ বাড়িতে পড়িয়েছি সবার সামনে এমন আচরণ করত, যা দেখে কারো মনে হবে না যে আমাদের মধ্যে গভীর প্রণয় চলছে।

দেখা গেল- ওর মা যদি কখনও বলত স্যারকে এ খাবার (মিষ্টি/চা/বিস্কুট/ফল) দিয়ে আয়।
ও তখন বলত- "তোমার ছেলে কিংবা তোমাদের স্যার হতে পারে সুতরাং সেবা যত্ন করা তোমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পরলেও আমার মধ্যে পরে না।"

বাহ্যিক দৃষ্টিতে এ কথা আমার জন্য ছিল চরম অপমান জনক। কিন্তু এমন কথা বা আচরণের আসল উদ্দেশ্য শুধু আমরা দুজন (আরও একজন) ছাড়া কেউ জানত না।

আবার দেখা যেতো- যখন বাড়িতে স্পেশাল খাবার আয়োজন হতো তখন ওর মা হযতো পাশের রুমে আমাকে দেয়ার জন্য প্লেটে বা পিরিচি তুলছে। তখন ও বলত- "বাড়ীতে কিন্তু আরও জনপ্রাণী আছে! সবাইকে এত্তো করে দিতে পারবে তো? আর যাইহোক আমার যেনো কম না পরে।

এরকম আরও অসংখ্য সময়ে অসংখ্য কাজে এমন আচরণ ও কথা বলত যা শুধু আমিই জানতাম!!!!
আসলে ও সবার সামনে আমার সম্পর্কে যাই বলুক না কেন ভিতরে ভিতরে ছিল আমার জন্য চরম প্রেমময়ী! !!!!!!

আজ আমি তাকে পাইনি ঠিক, কিন্তু কি করে ও দিব্যি সংসার করে যাচ্ছে? আমিও তো বেশ আছি! প্রতিদিন ভোর, দুপুর, সন্ধ্যা ও রাত হচ্ছে। পৃথিবীর কোনো কিছুই তো থেমে থাকছে না। অথচ আমাকে ছাড়া ওর এবং ওকে ছাড়া আমার এতোটা স্বাভাবিক থাকার কথা ছিল না। মনে পড়ছে- একদিন তো আত্মঘাতীর সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম যদি জাহান্নামের ভয় অন্তরে না আসত!

সবশেষে বলতে হয়- আমাদের মাঝে হঠাৎ চিরতরের ছন্দপতনের পূর্বাতিহাস খুঁজতে বসে মনে হচ্ছে, তার কি দোষ ছিলো? নাকি ছিল না? আমার তো বারংবারংমনে হচ্ছে- আমারই সম্ভবত দূর্বলতা ছিল। কেননা ও আমাকে অনেক দিন বলেছিল সাহস করে সব সত্য প্রকাশ করতে। কিন্তু সে সময় সে পরিস্থিতি ও সৎ সাহস ছিল না। আমি নাকি ভীতু কাপুরুষ ছিলাম! সে কথা ভাবতে হাসিও পায় আবার কষ্টও লাগে।
সাহস এবং ধৈর্য কোনো কালেই আমার কম ছিল না। কিন্তু বিয়ের কথা বলতে পারি নাই অনেক যৌক্তিক কারণেই। বিষয়টা প্রকাশ হলে হয়তো ওর বাবা মা ভাবত- "এতো বিশ্বাস করে একজনকে ছেলের মতো বাড়িতে এনে তারই এক ছেলেকে পড়ানোর জন্য নিয়ে আসলাম। সেও মান সম্মান নিয়ে খেলা করল"! যেই ভয়ে আমার ভালবাসা কোরবানী করেছি কিন্তু সেই একদিনের পাগলামীতে শেষ রক্ষা হয়নি।

আমি জানি না, ও কখনও দ্বৈবক্রমে আমার এ লেখাটি পড়বে কি না? যদি পড়েই ফেলে তবে সে যেনো রাখে- তাকে না পাওয়ার আক্ষেপ থাকলেও তার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।

ছোটবেলার একট ইংরেজি কবিতা পরেছিলাম। কিন্তু কে জানত? ঐ কবিতার মূল ভাবটাই আমার জীবনের চরম সত্য হয়ে দেখা দেবে-
Humpty Dumpty
Sat on a wall.
Humpty Dumpty
Had a great fall.
All the kings horses and all the kings men,
Couldn't put Humpty
Together again.

Humpty & Dumpty দুজনে একটা দেয়ালে বসে ছিল। হঠাৎ তারা ভূপাতিত হলো দুদিকে। রাজার সমস্ত ঘোড়া ও সৈন্য মিলে চেষ্টা করেও তাদের পুনরায় একত্রিত করতে পারল না।

আজ আমার সবচেয়ে বড় সান্তনা হচ্ছে রাসুল সাঃ এর একটা পবিত্র বাণী- "যেনে রেখো তোমার জীবনে যা কিছু এসেছে তা কখনও না আসার নয়। আবার যা আসে নাই তা কখনোও আসারও নয়"

ওকে আমার জীবনে পাওয়ার ছিল না জন্যেই পাইনি। এবং এটাই চরম সত্য বাস্তবতা।

"তেল নিঃশেষিত তৈল প্রদীপটি দপ করে একবার জলে উঠে চিরতরে নিভবার জন্যেই।"
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১২
১৩টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×