অফিসের কাজের চাপের কারণে এই শীতকালেও একটু দেরিতে বাসায় ফিরতে হয়। অফিস থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম রাত ১০টায়, এমনিতে শীতকাল তারপর কটু বৃষ্টি হওয়াতে প্রচণ্ড ডান্ডা লাগতেছে। মতিঝিল শাপলা চত্বরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম বাসের জন্য কিন্তু বাস না পেয়ে রিক্সা ঠিক করলাম। রিক্সায় যখন উঠতে যাব তখন পিছন থেকে একটা টুকায় বলতেছে স্যার দুইডা টেহা দেন ভাত খামু।
.
আমি কিছু না বলে রিক্সায় উঠে বসলাম, এমনি দেখলাম রিক্সাওয়ালাকেও বলতেছে আমাকে ইত্তেফাকের মোড়ে নামাই দিবেন আমি রিক্সার পিছনে লটকি দিয়ে চলে যাব। পিছন থেকে আরেক রিক্সাওয়ালা বলতেছে তুই উপরে বসে যা, তোর টাকা লাগবে না। আমি যে রিক্সায় বসেছি সেই রিক্সাওয়ালা বলতেছে না তুই পিছনেই বস তোর ময়লা কাপড় থেকে ময়লা লাগবে স্যারের গায়ে। আমি টুকায়টাকে ডাক দিয়ে আমার পাশে বসালাম। তারপরঃ
.
কিরে তুই দুই টাকা চাইছিলি কেন?
ভাত খাইব
দুই টাকা দিয়ে কি ভাত খাওয়া যায়?
না স্যার ১০টেহা লাগে
কি কস ১০টাকায়ও ভাত পাওয়া যায়?
হ স্যার, যাত্রাবাড়িতে রাস্তার লগে বইসা ১০ টেহায় ভাত খামু।
তুই থাকিস কোথায়?
যাত্রাবাড়ী ফ্লাই ওভার ব্রিজের নিছে থাকি।
তোর মা বাপ নাই?
মা বাপ থাকলে কি আর ভিক্ষা কইরা খাইতাম!
অহ তাওত ঠিক, তবে তুই ঢাকায় আসলি কীভাবে?
আমাদের বাড়ি থাইক্কা টেইনের (ট্রেনের) পিছন দিয়া আইয়া ফরছি।
ভাল কথা,তুই এইভাবে ঢাকায় থাকিস ভিক্ষা না করে কোন কাজ করলেওত পারিস?
কেউ কাজ দেয় না
অহ, এত শীতে শুধু একটা কাপড় গায়ে রাইতে থাকিসযে শীত করে না?
শীত করলে কিতা করাম?
আচ্ছা তুই কি কোনদিন হিরাঝিল হোটেলে খেয়েছিস?
কিতা কন স্যার হেইডার নামও হুনি নাই।
তাইলে চল আজ তোই সেই হোটেলে আমার সাথে বসে ভাল ভাল খাবার খাবি।
আমার এত টেহা কইত্তে?
টাকার চিন্তা করিস না, আমি দেমু যা লাগে।
তাইলে আইয়েন হিদা লাগছে ভাত খামু।
.
রিক্সাওয়ালাকে আবার রিক্সা ঘুরিয়ে মতিঝিলে নিয়েগেলাম। সেইখানে তাকে সাথে নিয়ে ভাল খাবার খাওয়ালাম নিজেও খেলাম একসাথে। হোটেলটা যেহেতো একটু নামিদামী তাই সেইখানে সব বড় লোকের সাওয়ালরাই আসা যাওয়া করে। টুকাইকে সাথে নিয়ে খেতে বসতে মানা করতেছে হোটেলের এক কমর্চারী। বলতেছে স্যার আপনি তাকে যাকিছুই খাওয়ান কিনে দিয়ে দিন সে রাস্তার পাশে বসেই খাবে। এই কথা শুনে মেজাজটা এতই খারাপ হয়েছিল তখন কন্ট্রোল রাখতে পারলাম না। তাই রেগে গিয়ে বললাম এই বেটা সে টুকাই বলে কি তোর হোটেলে স্যারদের আশেপাশে বসে খেলে কারও ইজ্জত চলে যাবে নাকি? আমি উত্তেজিত হয়েগেছি দেখে পাশের এক ভদ্রলোক বলল এই মিয়া আমরাত কিছুই মনে করছিনা সে তাকে সাথে নিয়েই খাবে। আর তোমরা সবাই সাহেবগীরি না করে এই শীতে গরিব লোকদের কিছুটা হেল্প কর তাহলেই উনার মতো উদার মনের মানুষেরা এক টেবিলে বসে নিজেদের খাবার গরিবদের বন্টন করে দিতে হবে না।
.
যাইহোক ওখান থেকে খাবার শেষ করে, রাজধানী মার্কেটের পাশ থেকে একটা কাপড় দুকান থেকে ৪০০ টাকা দিয়ে একটা কম্বল কিনে দিলাম যাতে পিচ্ছিটা অন্তত কিছুটা হলেও শীতকে কভার করতে পারে।
.
আপনি আমি এত শীতের রাতে কম্বল গায়ে জড়িয়ে আরামে রাত কাটায় কিন্তু আমাদের আশেপাশের গরিব মানুষগুলো সামান্য টাকার জন্য শীতের রাতে ঘুমাতে অনেক কষ্ট করতে হয়। আর যারা রাস্তার মানুষ তাদের কথা আর কি বলব। ঝড় তুফান সবি তাদেরকে রাস্তায় মুকাবেলা করতে হয়। যাদের আল্লাহ অনেক টাকা পয়সা দিয়েছে তারা সামান্য একটু চেষ্টা করলেই হয়ত শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। আপনারা যে যার মতো পারেন গরিবদেরকে হেল্প করার চেষ্টা করেন। আমাদের দেশে যেই হারে বড় লোক দেখা যায় তারা যদি সামান্য টাকাও এই গরিবদের পিছনে খরচ করতে তাহলে দেশে দারিদ্রতার হার অনেকটাই কমে যেত। আর জাতী পেত একটা দারিদ্র মুক্ত দেশ।
অবশেষে একটা আফসুস রয়েই গেল, আল্লাহ আমাকে বিশাল একটা মন দিছে কিন্তু দনসম্পদ দেয়নি।