আমাদের একটা বড় অভাবের কথা বলি ।
.
আইভরি কোস্ট – পুরো একটা দেশের সব কিশোর-তরুণ দ্রগবা হতে চায় । পেটে ভাত নাই, পায়ে জুতা নাই – কিন্তু চোখে স্বপ্ন আছে, সামনে একজন রোল মডেল আছে – দিদিয়ের দ্রগবা ।
.
একজন শচিন ছিলো তাই ভারতের সব কিশোর আজকে ব্যাটসম্যান হতে চায়, পাকিস্তানের অলিতে গলিতে তরুণেরা ওয়াসিম আকরামকে সামনে রেখে বোলিং করে । পর্তুগালে রোনালদোকে ঈশ্বর মানে, আর্জেন্টিনায় মাতম নামে মেসির অবসরে ।
.
আর আমি চারপাশে চোর দেখি । হাজার হাজার চোর, লক্ষ লক্ষ চোর ।
.
আমাদের একটা রোল মডেলের বড় অভাব।
.
এই অভাবের অন্ধকারে আমাদের একমাত্র জ্বলজ্বলে নক্ষত্র – মাশরাফি । আমাদের হাজার হাজার অবিশ্বাসের মাঝে একমাত্র বিশ্বাস । আমাদের লক্ষ লক্ষ চোরের মাঝে একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিক – যাকে শ্রদ্ধা করি – মন থেকে ।
.
তামিম ইকবালকে উদ্দেশ্য করে মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিল- রান করতে হবে না, ব্যাটিং কর। রান না করলে মরবি না। এইটা খেলা, জীবন না!
এই একটি কথা তামিম ইকবালের জীবনটাই বদলে দিলো। একসময় যে তামিম ইকবাল ব্যাটিং করতে নামলে সবাই স্কোর বোর্ডের উইকেটের দিকে তাকিয়ে ভাবতো-"এই বুঝি গেল, এই বুঝি গেল!" সেই তামিম ইকবালই একদিন বাংলাদেশের ব্যাটিং ভরসা হবে কে জানতো? হয়তো মাশরাফি ঠিকই জানতো...
.
আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে চিনি না, কিন্তু মাশরাফি ভাই যখন মাঠে ক্ষতবিক্ষত পা নিয়ে দৌড়ায়, মনে হয় এই লোকটা পতাকা নিয়ে দৌড়াইতেসে । পা ধরে যখন মাঠে পড়ে যায়, পুরো দেশের সব মানুষের মত আমারও চোখে পানি চলে আসে । গলার রগ ফুলায়ে যখন মাশরাফি চিৎকার দেয়, আমারও ইচ্ছা করে মানুষটার পিছনে গিয়া সর্বশক্তিতে একটা চিৎকার দেই ।
.
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেটকিপার এডাম গিলক্রিস্ট মাশরাফি সম্পর্কে একবার বলেছিলেন- "অধিনায়ক তো অনেকেই আছেন, মা আছেন কয়জন?
খেলার মাঠে বাকী দশজন খেলোয়াড়কে বুকের মাঝে আগলে রেখে সাহস যোগানো মা টাই হলো আমাদের মাশরাফি।
.
মাশরাফি সম্পর্কে মাশরাফির বাবা বলেছিলেন- আমার ছেলে শুধু ৫ ওয়াক্ত নামাজই না, তাহাজ্জুদের নামাজও পরে। আল্লাহর রহমতে ওর কোনো বাজে অভ্যাস নেই। ছেলে ইয়াং ছিল, আই সি এল খেলার জন্য ১৬ কোটি টাকা সাধলো, ছেলে বলল-"দেশের জন্য খেলে গরিব থাকলেও খুশি আমি!" পায়ে খুব ব্যাথা, কাউকে বুঝতে দেয় না, লুকিয়ে লুকিয়ে পেইন কিলার খেয়ে খেলতে নামে। ও খুব ইমোশনাল, বাংলাদেশ হারলে একা একা কাঁদে...
সবার মাঝে সাহস যোগানো মানুষটি দল হেরে গেলে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে। যাতে অন্যরা মনোবল না হারায়। জগতে লুকিয়ে কান্না করার চেয়ে বড় কষ্ট বোধহয় আর নেই...
.
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে, বাংলাদেশে একদল তরুণ আসবে । ক্রিকেটে, শিক্ষায় , গানে , সিনেমায় – সবকিছুতে তারা নেতৃত্ব দিবে পৃথিবীকে । আর তাদের রোল মডেল হবে অদ্ভুদ এক মানুষ । একজন নেতা । যে অপারেশনে ক্ষতবিক্ষত পা নিয়ে দৌড়াতো , দেশের জন্য । একটা জেনারেশনকে যে মানুষটা একলাইনে দাড়া করাইতে পারসিলো । আমরা যদি বেঁচে থাকি, গল্প শোনাবে পরবর্তী প্রজন্মকে – আমরা বেঁচেছিলাম মাশরাফি বিন মর্তুজার সময়ে ।
.
.
.
.
" ও ক্যাপ্টেন, মাই ক্যাপ্টেন !!"
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩০