somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আছিয়া বিবি আর পাকিস্তানের সমাজ!

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১৬ UNMUN এর একটা ডিবেটে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে আমি "UN WOMEN" কমিটিতে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম। ২ দিন চলছিল এই বিতর্ক। কমিটির সেটা বক্তাও হয়েছিলাম। সেই সেরা বক্তা হওয়ার জন্য আসলে শুরুতে পাকিস্তানকে সামনে রেখে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোতে নারীদের অবস্থান এবং সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বেশ অধ্যয়ন করতে হয়েছিল।


সেখানে পেয়েছিলাম নানান নতুন নতুন অজানা সব তথ্য। তথ্য প্রাপ্তির বিবেচনায় ভাল লাগলেও তথ্যে বিষয়বস্তু আসলে মোটেই আনন্দদায়ক ছিল না। বিশেষ করে পাকিস্তানের প্রেক্ষাপটে ধর্মের নাম দিয়ে মেয়েদের সামাজিক ভাবে এক হেনস্থা করা হয়ে থাকে যার সাথে ধর্মের বিন্দুমাত্র কোন সম্পর্ক নেই। মেয়ে অনেক শিক্ষিতা এটা যেমন অনেক সময় মেয়েটিকে সমাজের আর ৫টি মেয়ের থেকে আলাদা করে তেমনি আবার এর জন্যও তাকে বিদ্রুপের শিকার হতে হয়। আর বিবাহের ক্ষেত্রে তো মেয়েটি নিতান্তই একটি পন্য। মেয়েটিকে বিশ্ববিদ্যালয় অব্দি পাঠাতে মেয়েটি তার বাবার সব কিছু বিক্রি করে দিলেও বিয়ে দেয়ার সময়ে যৌতুক দিতে না পারায় কোন শিক্ষিত ছেলেও তাকে বিবাহ করে না। ছেলেটি চাইলেই তার সমাজ এটা হতে দেয় না। এক্ষেত্রে মেয়েটিকে হতে হয় কারো ২য় স্ত্রী কিংবা তার অবস্থানের থেকে অনেক ছোট কাউকে বিয়ে করতে হয়; যে কিনা আবার এই মেয়েটির উপরই নির্ভর করে চলে। এগুলো বানিয়ে বলছি না। এই ঘটনার স্বীকার মেয়েদের নিজ মুখ থেকে সাক্ষাতকার নিয়েই বলছি। আর তারাও এটাকে নিয়তি হিসেবেই মেনে নিয়েছেন।
আমার পরিচিত একজন বন্ধু আছে। ইস্তানবুলে থাকে। পিএইচডি'র ছাত্রী। মজা করে জানতে চেয়েছিলাম তুমি কবে বিয়ে করবে। সে কোন কথা লুকায় নাই। সব কিছু খুলেই বলছিলেন এভাবে যে, "আসলে পাকিস্তান আমার কোয়ালিটি দেখে না কিন্তু তাঁদের চাহিদার কোয়ান্টিটি আমার বা আমার বাবার কাছে নেই। সেই সাথে এখনও বয়স তো প্রায় ২৮"। হেঁসে বলছিলেন, "আসলে ১৮ পেলে ২৮ কেন বিয়ে করবে ছেলেরা" তবে তার এই বলা থেকে এক চাপা কষ্ট বের হয়ে আসছিল ছিল।

এবার ফিরে যাই আসিয়া বিবির কথায়। ধর্ম মতে সে একজন খ্রিস্টান। ২০০৯ সালে মুসলিম মেয়েদের সাথে ফল কুড়াতে গিয়েছিলেন। তার পানির পিপাসা লেগেছিল। মুসলিম মেয়েদের পানির পাত্র থেকে সে এককাপ পানি পান করেছিলেন। মুসলিম মেয়েরা এতে ক্ষেপে যান। সাধারনত বাঙালি হিন্দু পরিবারে যা দেখা যায়, "ছোয়া লাগে"। সেই মুসলিম মেয়েরা ঠিক এই শব্দই ব্যবহার করেছিলেন। "তুই খ্রিস্টান। আমাদের পাত্রের পানি খেলি খেয়েছ এখন আমরা পানি পাব কোথায়। তুই তো মুসলিম না"।
এবার ভেবে দেখেন তাঁদের ইসলামী জ্ঞান। আহালে বাইতের একটা গ্রুপের বিশ্বাসী এই আসিয়া। সামান্য পানি পানের জন্য তাকে মারধর শুরু করা হল। যদিও তারা বলেছে, "আগে আমাদের নবীকে অপমান করেছে এর পর আমরা মেরেছি"। তাকে সবাই মিলে মেরে পুলিশের কাছে তুলে দিল।
তাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, সে তার অন্যায় সাথে সাথে মেনে নেয়। সেই ফলের বাগান থেকে মামলা আসিয়াকে নিয়ে যাচ্ছিল ফাঁসির মঞ্চ অব্দি। তবে ১০ বছর পর সুপ্রিম কোর্ট তাকে সাজা মাফ করে দেয়। নির্দোষ প্রমানিত হয় আসিয়া। এর মাঝে প্রায় ১০ বছর সে জেলে কাটিয়েছে।
কিন্তু এর পরেও সে এখনও নারীকে পন্য বানানো সেই পাকিস্তানী সমাজ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। তার পরিবার পালিয়ে বেরাচ্ছে। আসিয়ার একমাত্র মেয়েটি তার মাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইসলামের দোহাই দিয়ে পাকিস্তানী সমাজ তাকে মুক্তি দিচ্ছে না। চার দেয়ালের বন্দী খানা থেকে সে এখন খোলা আকাশের বন্দি খানায়। তার আইনজীবিও হুমকিতে দেশ থেকে পালিয়েছেন।

ইসলামের প্রাক্টিক্যাল দাওয়াত তারা এভাবে বিশ্বের কাছে পৌছে দিচ্ছে। আর এটা থেকে ভয় পেলে আবার ইসলাম ফোবিয়া পশ্চিমাদের সৃষ্টী। এমন কিছু আসলে ইসলামে নেই। বলে তাঁদেরই দোষারোপ করে। আসলে এই ভয় সৃষ্টির পেছনে যে আমাদের নিজেদের ধর্ম নিয়ে নিজ নিজ ব্যাখ্যা দায়ী, আমরা যে আসলে তাঁদের কাছে ইসলাম তার সঠিক ম্যাছেজ পৌছাতে পারি নাই সেটা আমরা মেনে নিতে রাজি না।।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৪
১৪টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×