২০১৬ UNMUN এর একটা ডিবেটে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে আমি "UN WOMEN" কমিটিতে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম। ২ দিন চলছিল এই বিতর্ক। কমিটির সেটা বক্তাও হয়েছিলাম। সেই সেরা বক্তা হওয়ার জন্য আসলে শুরুতে পাকিস্তানকে সামনে রেখে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোতে নারীদের অবস্থান এবং সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বেশ অধ্যয়ন করতে হয়েছিল।
সেখানে পেয়েছিলাম নানান নতুন নতুন অজানা সব তথ্য। তথ্য প্রাপ্তির বিবেচনায় ভাল লাগলেও তথ্যে বিষয়বস্তু আসলে মোটেই আনন্দদায়ক ছিল না। বিশেষ করে পাকিস্তানের প্রেক্ষাপটে ধর্মের নাম দিয়ে মেয়েদের সামাজিক ভাবে এক হেনস্থা করা হয়ে থাকে যার সাথে ধর্মের বিন্দুমাত্র কোন সম্পর্ক নেই। মেয়ে অনেক শিক্ষিতা এটা যেমন অনেক সময় মেয়েটিকে সমাজের আর ৫টি মেয়ের থেকে আলাদা করে তেমনি আবার এর জন্যও তাকে বিদ্রুপের শিকার হতে হয়। আর বিবাহের ক্ষেত্রে তো মেয়েটি নিতান্তই একটি পন্য। মেয়েটিকে বিশ্ববিদ্যালয় অব্দি পাঠাতে মেয়েটি তার বাবার সব কিছু বিক্রি করে দিলেও বিয়ে দেয়ার সময়ে যৌতুক দিতে না পারায় কোন শিক্ষিত ছেলেও তাকে বিবাহ করে না। ছেলেটি চাইলেই তার সমাজ এটা হতে দেয় না। এক্ষেত্রে মেয়েটিকে হতে হয় কারো ২য় স্ত্রী কিংবা তার অবস্থানের থেকে অনেক ছোট কাউকে বিয়ে করতে হয়; যে কিনা আবার এই মেয়েটির উপরই নির্ভর করে চলে। এগুলো বানিয়ে বলছি না। এই ঘটনার স্বীকার মেয়েদের নিজ মুখ থেকে সাক্ষাতকার নিয়েই বলছি। আর তারাও এটাকে নিয়তি হিসেবেই মেনে নিয়েছেন।
আমার পরিচিত একজন বন্ধু আছে। ইস্তানবুলে থাকে। পিএইচডি'র ছাত্রী। মজা করে জানতে চেয়েছিলাম তুমি কবে বিয়ে করবে। সে কোন কথা লুকায় নাই। সব কিছু খুলেই বলছিলেন এভাবে যে, "আসলে পাকিস্তান আমার কোয়ালিটি দেখে না কিন্তু তাঁদের চাহিদার কোয়ান্টিটি আমার বা আমার বাবার কাছে নেই। সেই সাথে এখনও বয়স তো প্রায় ২৮"। হেঁসে বলছিলেন, "আসলে ১৮ পেলে ২৮ কেন বিয়ে করবে ছেলেরা" তবে তার এই বলা থেকে এক চাপা কষ্ট বের হয়ে আসছিল ছিল।
এবার ফিরে যাই আসিয়া বিবির কথায়। ধর্ম মতে সে একজন খ্রিস্টান। ২০০৯ সালে মুসলিম মেয়েদের সাথে ফল কুড়াতে গিয়েছিলেন। তার পানির পিপাসা লেগেছিল। মুসলিম মেয়েদের পানির পাত্র থেকে সে এককাপ পানি পান করেছিলেন। মুসলিম মেয়েরা এতে ক্ষেপে যান। সাধারনত বাঙালি হিন্দু পরিবারে যা দেখা যায়, "ছোয়া লাগে"। সেই মুসলিম মেয়েরা ঠিক এই শব্দই ব্যবহার করেছিলেন। "তুই খ্রিস্টান। আমাদের পাত্রের পানি খেলি খেয়েছ এখন আমরা পানি পাব কোথায়। তুই তো মুসলিম না"।
এবার ভেবে দেখেন তাঁদের ইসলামী জ্ঞান। আহালে বাইতের একটা গ্রুপের বিশ্বাসী এই আসিয়া। সামান্য পানি পানের জন্য তাকে মারধর শুরু করা হল। যদিও তারা বলেছে, "আগে আমাদের নবীকে অপমান করেছে এর পর আমরা মেরেছি"। তাকে সবাই মিলে মেরে পুলিশের কাছে তুলে দিল।
তাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, সে তার অন্যায় সাথে সাথে মেনে নেয়। সেই ফলের বাগান থেকে মামলা আসিয়াকে নিয়ে যাচ্ছিল ফাঁসির মঞ্চ অব্দি। তবে ১০ বছর পর সুপ্রিম কোর্ট তাকে সাজা মাফ করে দেয়। নির্দোষ প্রমানিত হয় আসিয়া। এর মাঝে প্রায় ১০ বছর সে জেলে কাটিয়েছে।
কিন্তু এর পরেও সে এখনও নারীকে পন্য বানানো সেই পাকিস্তানী সমাজ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। তার পরিবার পালিয়ে বেরাচ্ছে। আসিয়ার একমাত্র মেয়েটি তার মাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইসলামের দোহাই দিয়ে পাকিস্তানী সমাজ তাকে মুক্তি দিচ্ছে না। চার দেয়ালের বন্দী খানা থেকে সে এখন খোলা আকাশের বন্দি খানায়। তার আইনজীবিও হুমকিতে দেশ থেকে পালিয়েছেন।
ইসলামের প্রাক্টিক্যাল দাওয়াত তারা এভাবে বিশ্বের কাছে পৌছে দিচ্ছে। আর এটা থেকে ভয় পেলে আবার ইসলাম ফোবিয়া পশ্চিমাদের সৃষ্টী। এমন কিছু আসলে ইসলামে নেই। বলে তাঁদেরই দোষারোপ করে। আসলে এই ভয় সৃষ্টির পেছনে যে আমাদের নিজেদের ধর্ম নিয়ে নিজ নিজ ব্যাখ্যা দায়ী, আমরা যে আসলে তাঁদের কাছে ইসলাম তার সঠিক ম্যাছেজ পৌছাতে পারি নাই সেটা আমরা মেনে নিতে রাজি না।।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৪