somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবাবিল

১৬ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ ফেইসবুক ইনবক্স। আসল সূত্র জানতে পারিনি।

বিশিষ্ট সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী, অসহায়ের সম্বল,শীতার্তের কম্বল ওয়ার্ড কমিশনার হাজী সাদেকের মন গতকল্য হইতে যৎপরোনাস্তি বিষণ্ণ। ফিলিস্তিনিদের কষ্টে তাহার ছাতি ফাটিয়া যাইতেছে। ইজরাইলের মনুষ্যগণ কোনো মনুষ্যের জাতই নহে। তাহারা তাহার চাইতেও জালিম। তিনি জমিজিরাতের দ্বন্দ্বে মাত্র তিনজন অরি কে দমন করিয়া অরিন্দম হইয়াছেন। ইজরাইলিরা অরিকে দমন করিতে করিতে নিজেরাই অরি হইয়া উঠিয়াছে। ইহা সাদেক সাহেবকে বড়ই পীড়া দিতেছে।

মসজিদ কমিটির হওয়ায় বরাবরের ন্যায় তিনি জুম্মার নামাজে সকলের সামনে ইমামের পেছনে বসিলেন। জুম্মার বয়ানে ইমাম সাহেব জালিম জাতির ধ্বংসের উদাহরণ টানিলেন। আদ জাতি কীরূপে মাটির সহিত মিশিয়া গেছে, আবাবিল পাখি কীরূপে এক বিশাল হস্তীবাহিনীকে মাটির সহিত মিশাইয়া দিলো তাহা সুর করিয়া বর্ণনা করিলেন। বর্ণনা শুনিয়া সাদেক তাহার হৃদমাঝার হইতে আবাবিলের প্রত্যাবর্তনের তাগিদ অনুভব করিলেন। জুম্মার নামাজ শেষে তিনি ফেইসবুকে একখানা স্ট্যাটাস দিলেন, "ইয়া আল্লাহ।তুমি ফিলিস্তিনকে রক্ষা করো।" কিন্তু কোনো এক অবুঝ, নাদান, বেত্তমিজ সেইখানে কমেন্ট করিলো, "নামাজ পড়ে দোয়া করেন মিয়া। আল্লাহ ফেইসবুক চালায় না। ওনার কোনো আইডি নাই।" এই কমেন্টখানার শত শত স্ক্রিনশটে হাজী সাদেকের ইনবক্স ভরিয়া গেল। তাহারা সকলে এই বেত্তমিজের সমুচিত শাস্তি দাবি করিলো। রাতের বেলা "আল্লাহর অপমান সহ্য করা হবে না।" এই মর্মে ঘোষণা দিয়া এই বেত্তমিজকে ঘাড় ধাক্কা দিয়া আপন বাটী হইতে খ্যাদাইয়া দিয়া সেই বাটী দখল করিতে মোবাইল ফোনে নির্দেশ দিলেন তাহার একনিষ্ঠ ভক্ত ক্যাঙ্গারু পারভেজকে। পারভেজ বলিলো "তথাস্তু"। অত:পর তিনি প্রশান্ত চিত্তে ঘুমাইয়া পড়িলেন।

হাজী সাদেকের সমস্ত শরীর রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত হইয়া গিয়াছে। তিনি হামাসের সহিত কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া হাতে কোষমুক্ত তরবারি লইয়া ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছেন। তরবারি লইয়া তিনি ইসরাইলের আধুনিক ক্ষেপনাস্ত্রের সহিত পারিয়া উঠিতেছেন না। তিনি আল্লাহর নিকট সাহায্যের আবেদন জানাইলেন। হঠাৎ করিয়া তাহার দিব্যচক্ষু খুলিয়া গেল। তিনি দেখিতে পাইলেন অতিদূর সমুদ্রের পথে ডানা মেলিয়া যে পাখি হারায়েছে দিশা,উহারা আবাবিল। তাহারা সাদেককে সাহায্য করিবার নিমিত্তে হাজার হাজার মাইল পথ উড়িয়া আসিতেছে। তাহারা আসিলেই সাদেকের বিজয় সুনিশ্চিত। ইজরাইল মাটির সহিত মিশিয়া যাইবে।কিন্তু তাহারা আসিতে দেরি করিতেছে। কেন দেরি করিতেছে? সাদেক তাহার দিব্যদৃষ্টি দিয়া দেখিতে পাইলো, অন্যান্য আবাবিল পাখিগণ তাহাদের সর্দার পাখিকে বলিতেছে " এই সমুদ্রের মাঝখানে খাদ্যের অভাবে আমাদের প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। শরীরের শক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে।"

পাখিদের এই আর্তনাদ শুনিয়া সাদেকের ঘুম ভাঙিয়া গেল। ক্ষুধার জ্বালায় পাখিরা কষ্ট পাইতেছে ইহা তিনি মানিয়া লইতে পারিলেন না। ইহার আশু ব্যবস্থা প্রয়োজন। তিনি সাথে সাথে এই গভীর রজনীতে ইমাম সাহেবকে ফোন করিলেন। মসজিদ কমিটির সভাপতির ফোন পাইয়া ইমাম সাহেব ফোন না ধরিয়া পারিলেন না। তিনি সাদেকের মুখে সমস্ত স্বপ্ন বৃত্তান্ত শুনিয়া কাঁদিয়া কাটিয়া সারা হইলেন। কাঁদিতে কাঁদিতে তাহার হেঁচকি উঠিয়া গেল। তিনি সাদেকের হস্ত-পদচুম্বন করিতে চাইলেন। এমন সৌভাগ্য সকলের ললাটে থাকে না। পৃথিবীতে এত মনুষ্য থাকিতে আবাবিল পাখিগণ সাদেকের নিকট খাদ্য প্রার্থণা করিয়াছে। এমন মহামানবের সংস্পর্শে আসিয়া তাহার জন্ম সার্থক হইয়াছে।

হাজী সাদেকের স্বপ্নের কথা সারাদেশে রাষ্ট্র হইয়া গেল। সাদেকের সৌভাগ্যে আশ্চার্যান্বিত হইবার সাথে সাথে কেহ কেহ ঈর্ষান্বিতও হইয়া গেল। বহু লোক সাদেককে সাহায্য করিতে চাহিলো। সাদেক না পারিয়া তাহার বিকাশ, নগদ, রকেট সব নাম্বার ফেইসবুকে প্রচার করিয়া উহাতে সাহায্য পাঠাইতে বলিলো। সাথে সাথে লাইক, কমেন্ট, শেয়ারে ভরিয়া গেল সেই পোস্ট। বহু সাহায্য আসিলো। কিন্তু তাহা বড্ড অপ্রতুল। সাদেকের কথায় পরের জুম্মায় ইমাম সাহেব সাদেকের স্বপ্নের কুদরত, হিকমত সুর করিয়া বর্ণনা করিয়া আবাবিল পাখির খাদ্যের নিমিত্তে দান করিতে বলিলেন। দান করিবার ফলে বহু লোককে জান্নাতে বাড়ি পাইবার আশ্বাস দিলেন। লোকে হাত ভর্তি করিয়া দান করিলো। আরো কিছুকাল তাহার বিকাশ, নগদ, রকেটে সাহায্য আসিতে লাগিলো। সাহায্যের সংখ্যার অংক যখন যখন আটের ঘর অতিক্রম করিলো তখন সাদেকের খুশি আর শেষ হইতে চাহে না। অতঃপর সেই সাহায্যের টাকা হইতে থানার ওসি, ইমাম সাহেব, তাহার প্রধান ভক্তকূলকে কিছু সাহায্য করিয়া বাকি টাকা স্ত্রী, পুত্র, কন্যা নামক কতিপয় আত্মীয়ের নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রাখিয়া আবাবিল পাখিদের ধন্যবাদ দিয়া সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলেন।


সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪০
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×