প্রশ্ন হাজার মনের ভিতরে। দুজনই যেনো পুরোনো সব দিনে ফিরে গেলো। এসএসসির পর তিনটা মাস ওদের জীবনকে ওলটপালট করে দিয়েছিল। তখন থেকেই হয়তো শুরু হয়েছিল ওদের দূরে যাওয়া।
মিতু কথা বলা শুরু করল সায়েম ভাইয়ের সাথে ফোনে। সায়েম কখনোই পাত্তা দেয়নি মিতুকে। কিন্তু মিতুকে সে কঠোর ভাবে বলতেও পারেনি যে সে চায় না মিতু তাকে ফোন করুক। হ্যা, সায়েমও তো একটা ছেলেই , তাইনা? একটা মেয়ে ওকে এতো পাত্তা দিচ্ছে । ও থামাতে পারেনি ওর কৌতুহল। বয়সেরই দোষ হয়তো। নাহলে সায়েমের মত কঠিন ছেলেও থামাতে পারেনি রাতের পর রাত কথা বলতে। মিতু বকবক করেই চলত সারারাত, আর সায়েম শুনে যেত। মাঝে মাঝে মিতুর আওয়াজ ওর কানে ঢুকত না। শুধু রিমার চোখ দুটোকে মনে পড়ত। রিমার কথা ভাবত ও। কি করছে এখন রিমা? হ্যা, রিমা সেদিন এসেছিল। সায়েম বুকের ভিতরের সব ভয়গুলো দূর করে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল," রিমা, আমি তোকে আজকে যা বলব তা আমি অনেকদিন থেকেই বলতে চেয়েছি। কিন্তু পারিনি। আজ আমি না বলে আর থাকতে পারব না। আমি তোকে অনেক ভালোবাসি। তোকে হারালে আমি হয়তো নিজেকেও হারিয়ে ফেলব।" রিমা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। সায়েমের মনে হয়েছিল যেন যুগের পর যুগ কেটে গেছে ওভাবে। রিমা মুখ খুলল," দেখ সায়েম। আমি আসলে এমন কিছুই তোকে নিয়ে ভাবিনি। আর সামনে আমাদের পরীক্ষা। আগে কোথাও ভর্তি হই আমরা, তারপর দেখা যাবে।" খুব কষ্ট পেয়েছিল সায়েম। কিন্তু মেনে নিয়েছিল রিমার কথা।
তারপর মিতু প্রায়দিনই সায়েমকে ফোন করত। তখন সায়েমের ল্যাব পরীক্ষা চলছিল। সায়েমের হাতে তাই সময়ও ছিল অনেক। আর রিমাকে ফোন করা যাবে না এটা সায়েম জানতো। তাই মিতুর আবোলতাবোল কথা শুনে ওর রাত গুলো কেটে যেত। ওপাশের মানুষটার এত অবহেলাকেও কিন্তু মিতু সহ্য করে নিয়েছিল। তবুও তো সেই মানুষটার সাথে কথা বলতে পারছে যে দিনরাত তার স্বপ্নের জগতে বিচরণ করছে। মিতুর সান্ত্বনা অতোটুকুই। একদিন রাতে মিতু অনেক সাহস নিয়ে ফোন দিল সায়েমকে। আজকে যেন কোনো কথাই আর মাথায় আসছিল না। শুধু বলল," আচ্ছা, আপনি কি কাউকে পছন্দ করেন?" রিমার কথাটা বলতে গিয়েও মুখে আটকে গেলো সায়েমের। ফ্যামিলির সাবার সামনে ওর ইম্প্রেশন খুব ভালো। যদি রিমার কথা মিতুকে বলে দিলে মিতু কথাটা সবাইকে বলে দেয়, তাহলে ওর কি হবে? ওর ইমেজটা কোথায় দাঁড়াবে? আর ও নিজেই একটু কৌতুহলী ছিল কিভাবে এই পাগল মেয়েটা ওকে কিভাবে কথাটা বলে তা শুনার জন্য। তাই বলে ফেলল,"না!"। এই একটা কথা যেন মিতুর জীবনের সবথেকে বড় কথা ছিল। মিতুর জীবনের সব থেকে বড় মিথ্যে ছিল যে কথাটা। আসলে কেউ কি জানে কোন কথাটা আমাদের জীবনকে পাল্টে দিবে? জানেনা। মিতু বলল,"আমি আর পারছি না। আমি জানতে চাই । আমি উ্ত্তর চাই।" "কিসের উত্তর?" " আপনি কি কিছুই বুঝেন না? কিছুই জানেননা?" মিতুর কণ্ঠে অভিমান ঝড়ে পরে। চোখ ফেটে পানি আসতে চায়। " আমাকে খুলে বলো। আমি এসব প্যাচের কথা বুঝি না।" " আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করি। আমি কি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো?" "তুমি কি আমাকে প্রপোজ করছো? আমাকে প্রথম কেউ করছে।" "হুমম। আই লাভ ইউ। কিছু বলুন।" "ভালোই লাগছে শুনতে, আরেকবার বলতো", তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল সায়েম। কিন্তু ওপাশের পাগলী মেয়েটির কাছে তখন তাচ্ছিল্যও যেনো ভালোবাসা। ভালোবাসা যে অন্ধ মিতু তা আবারও প্রমাণ করল।
" দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ ৭"
" দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ ৬"
" দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ ৫"
(**হরতাল খাচ্ছিলাম। অলস মানুষ, তাই ঘুমই জীবন। লিখতে দেরি হয়ে গেলো। **)