somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব(Conspiracy Theory) ও ওভারশ্যুটিং(Overshooting) নিয়ে কিছু কথা

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আমি যেসব মতবাদ সম্পর্কে ইতোপূর্বে লিখেছি এবং যেসব তত্ত্ব নিয়েও লিখেছি তা সামগ্রিক অর্থে বিচার সাপেক্ষে খুবই নিচু মানের লেখা। আমি শুধু সে বিষয়ে ক্ষুদ্র ধারণা দেবার চেষ্টা করেছি মাত্র।

• Conspiracy Theory

১. এই শব্দটাকে যদি "ষড়যন্ত্র তত্ত্ব" বলি তবে কিছুটা হলেও ভুল হতে পারে। এর ভালো বাংলা এমন হতে পারে "দিকভ্রান্তির তত্ত্ব"। কারণ মানুষ/সমাজ/রাষ্ট্র যে কোন বিষয়ে যখন বিদ্যমান সমস্যার যৌক্তিক ব্যখ্যা দিতে পারেন না তখন এই তত্ত্বের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। এবং সেটা হয় তথ্য-উপাত্ত এবং কোনরকম যৌক্তিক ব্যাখ্যা ছাড়া-ই। বেশিরভাগ মনগড়া এবং কিছুটা সত্যর আশ্রয় নিয়ে গড়ে উঠা এই তত্ত্বে বেশ কিছু বিষয়ের উত্তর মিলে যাওয়ায় বেশ জনপ্রিয় তত্ত্ব এটি। মুশকিল হচ্ছে, আমরা যে কোনো বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাই। কেন ঘটলো? কী কারণে ঘটলো?... ইত্যাদি। কিন্তু সঙ্গত কারণেই মহাবিশ্বের অনেককিছুই আমাদের অজানা।

২. মানবজাতির সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই এই তত্ত্বের জন্ম বলে আমার মনে হয়। হয়তো সে সময় এই তত্ত্ব সম্পর্কে যথাযথ নাম বিধান করার মত বুদ্ধি আমাদের ছিলো না। বর্তমানে, কোভিড-১৯ মহামারী ঠিক এই তত্ত্বের কবলে পড়েছে বহুবার। যখন আলবার্ট কামূস তাঁর "প্লেগ" উপন্যাসে ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন কীভাবে একটি সমাজ বিপদে পড়লে সে জন্য অন্য যে কোনো কিছু বা যেটাই কনভিন্সিং তাকে দায়ী করতে দ্বিধা করেনি। ঘটনা বহুকাল পূর্বের হলেও বর্তমানের কোভিড-১৯ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

৩. ড্যান ব্রাউনের "দ্য ভিঞ্চি কোড", "এঞ্জেলস এন্ড ডেমন্স", "ইনফারনো", স্টিভ বেরির "অ্যাম্বার রুম", রেমন্ড খাউরির "লাস্ট টেম্পলার", ফ্রেডরিক ফরসাইথের "দ্য ডে অফ দ্য জ্যাকল" "দ্য অডেসা ফাইল", কেন ফলেটের "কোড টু জিরো", ক্রিস্টোফার সি ডয়েলের "দ্যা মহাভারত সিক্রেট", "দ্য মহাভারত কোয়েস্টঃ দ্য আলেকজান্ডার সিক্রেট", আরো অনেক অনেক বই এই তত্ত্বকে বেশ সুন্দরভাবে তুলে এনেছে বলে আমার ধারণা। এমনকি হলিউডে বহু মুভি নির্মিত হয়েছে এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে। কয়েকটি নাম উল্লেখ করা যেতেই পারে,

Executive Action (1973)
Conspiracy Theory (1997)
Wag the Dog (1997)
The Manchurian Candidate (2004)
Winter Kills (1979)
Three Days of the Condor (1975)
Seven Days in May (1964)
The Parallax View (1974)
JFK (1991)
They Live (1988)
Blow Out (1981)
Secret Honor (1984)
All the President’s Men (1976)
The Manchurian Candidate (1962)
Z (1969)

ইত্যাদি

৪. ধরুন, কোভিড-১৯ চায়নার আবিষ্কার। এবং এই বায়োলজিকাল অস্ত্র দিয়ে বিশ্বে "Depopulation" ঘটাতে চায়। কিন্তু, মুশকিল হচ্ছে আপনার হাতে এই অস্ত্র যে তারাই নির্মাণ করেছেন সে ব্যাপারে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই। এমনকি খোদ চায়না তাদের দেশের যে পরিমাণ জনসংখ্যা তার কত অংশ মেরেছেন এই অস্ত্র দিয়ে? পরিসংখ্যান এত কম যে ব্যাপারটা খেলো বলে চালিয়ে আমি দিতে চাই।

সুতরাং উপায়ান্তর না পেয়ে যেহেতু ওখান থেকে এই মহামারীর সূচনা তাই ব্লেমিং গেম শুরু হয়ে গেল। আজ অবধি তা থামানো যায়নি। অথচ আমরা নিজেদের সভ্য বলে দাবী করেই যাবো। এখানে আমাকে পক্ষপাতদুষ্ট মনে হলে আপনার প্রমাণ দেখতে চাইবো।

৫. যেহেতু আমাদের বুদ্ধিমান মস্তিষ্ক আছে সেহেতু আমাদের চারপাশে বিশ্বের নিদর্শন দেখতে হয়। এবং যদিও সেগুলি বোঝা যায় তা হল কীভাবে আমরা বিকাশ লাভ করেছি এবং বিকাশ লাভ করছি, কখনও কখনও আমরা সত্যগুলিকে এমন প্যাটার্নগুলিতে রূপান্তর করি যা বাস্তবে বিদ্যমান নেই। এ জাতীয় খিচুড়ি চিন্তাভাবনা পৃথক পৃথক সত্যের সেটকে ষড়যন্ত্র তত্ত্বে পরিণত করতে পারে। ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলি সমঝোতার পক্ষে শক্ত, উভয়ই সেই জ্ঞানীয় যুক্তির কারণে যা মানুষকে সেখানে নিয়ে যায় এবং এই জাতীয় তত্ত্বগুলির প্রকৃতির কারণেই। আমাদের মস্তিস্ক কেন ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলির জন্য পড়ে যায় তা বুঝা জটিল। তবে সাধারণভাবে, এটি নিশ্চিতকরণ পক্ষপাতের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে - কারণ আমাদের বিদ্যমান ধারণাগুলিকে সমর্থন করে এমন তথ্যগুলিতে মনোনিবেশ করার অভ্যাস এবং সেই ধারণাগুলির বিরোধী সত্যগুলিকে উপেক্ষা করা। এছাড়াও একটি ভূমিকা পালন করা "আনুপাতিকতা পক্ষপাত" - এই বিশ্বাস যে একটি বিশাল ঘটনা (যেমন জন এফ কেনেডি হত্যার ঘটনা বা ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসবাদী হামলা - Terrorist Attack) সমান বিশাল কিছুর কারণে হয়েছিল। ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রকৃতি হিসাবে, এখানে একটি বিশেষজ্ঞের মতামত হলো, "ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রতিভা হচ্ছে আপনি তাদের ভুল প্রমাণ করতে পারবেন না"।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি প্রতিদিন মেইনস্ট্রিম মিডিয়া প্রকাশ করতে থাকে কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া আপনার ব্রেইন এবং চোখের ক্ষতি করছে, হ্যাঁ কিছুটা বৈজ্ঞানিক তথ্য ও যৌক্তিকতা থাকবে তবে মনগড়া। রিপিট করা কিন্তু জরুরী। একদিন আপনার সচেতন মন হঠাৎ ফেসবুক থেকে সরে যাবে। একরকম প্রভাবিত হতে বাধ্য হবেন।

এবং এতে ফেসবুক পড়বে ভয়ানক ক্ষতির মধ্যে।

৬. অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা পিটার এলারটন বলেছেন যে, "ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলি সত্যের ভিত্তিতে ভয় এবং মানুষের ব্যক্তিগত মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে"।

উদাহরণস্বরূপ, বেক্সিমকোর ঔষধ নিয়ে মানুষের চিন্তাশক্তি লোপ পাচ্ছে। এমন তথ্য যদি মাঠে-ঘাটে ছড়িয়ে পড়ে তবে বেক্সিমকো অনেক বড় ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাবে এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু এমন ঘটনা নেহাৎ হয়তো কোন এক ব্যক্তির সাথে ঘটেছিলো যে পূর্বে থেকেই মস্তিষ্কের সমস্যায় ভূগছিলেন এবং যেহেতু ফার্মেসি সমূহের কিছু ঔষধের দাম আপনাকে পূর্বে থেকেই রাগিয়ে তুলেছিলো।

৭. আমাদের সবার জ্ঞানীয় পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। অন্য কথায়ঃ অন্ধকার, উদ্ভট ধারণা থেকে দূরে সরে আসার জন্য, সমালোচনামূলক-ভাবনা দক্ষতা এবং গবেষণার বিশ্বাসযোগ্য উৎসগুলি প্রয়োগ করুন। এবং কোনও অন্ধ বা যা ইচ্ছে তাই ধারণা বিশ্বাস করবেন না কারণ এটি আপাতদৃষ্টিতে অস্বীকার করা যায় না। এটি আপনার জ্ঞানীয় পক্ষপাত হতে পারে যা আপনাকে সত্যের কাছে অন্ধ করে দেয়।

• Overshooting

এ বিষয়ে খুব অল্প কিছু লিখতে চাই।

১. ওভারশ্যুটিং হচ্ছে, "যা নয় তা দাবী করে বসা, ফলে ব্যক্তি যিনি অন্যায় করেছেন তিনি অন্তত তার সর্বনিম্ন ভুল স্বীকার করতে বাধ্য হবেন"।

২. উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনি জানেন আপনার প্রেমিকা আপনার প্রতি যথেষ্ট খেয়ালী। তো হয়েছে কি, একদিন সে আপনার ফোন রিসিভ করেনি। ফলে পরেরদিন যদি আপনি তাকে বলেন,

"তোমাকে গতকাল এক ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে/পার্কে দেখলাম, আমার দেখার ভুলও হতে পারে। কিন্তু মনে হয় ওটা তুমি ছিলে।"

খেয়াল করুন, আপনি কিন্তু আপনার ফোনকল রিসিভ না করার জন্য অত্যন্ত খারাপ মুডে আছেন। কিন্তু বলছেন এমন কিছু যা মেয়েটার অনুগত্যে আঘাত করতে বাধ্য। ফলে হবে কি? মেয়েটা যেহেতু আপনাকে ভালোবাসে(ট্রুরু লাভ) তাই সে থতমত খেয়ে যাবে। আর সেদিন সে কেন ব্যস্ত ছিলো তার সমস্ত বিবরণী পেয়ে যাবেন।

সাবধান⚠ ! ব্যক্তি জীবনে প্রয়োগ করলে অনেকবার দুঃখিত বলা লাগতে পারে তাই এই হাতিয়ার রেখে দিন আসল যুদ্ধের সময়।

ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:২৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×