Dia
A Complete Mess
(Spoiler Alert!)
কন্নড় মুভি নিয়ে প্রথম লিখছি এমন নয়। মুভিটির প্রতি উচ্চাকাঙ্খা আমায় চরম ধাক্কা দিয়েছে।
“দিয়া” মুভিটির ব্যাপারে আমাকে আশান্বিত করে তুলেছিলো বিশেষ করে রেটিংস সমূহ দেখার পর। মুশকিল হলো, কোন ভাবাবেগে আপনি এটাকে রোমান্টিক ঘরানার মুভি বলছেন? আমি বরং যদি বলি এটি একটি Absurd Thriller/Adventure ঘরানার মুভি তবে বোধকরি ভুল হবে না।
দিয়া গল্পের মূল চরিত্র। সে এক লাইব্রেরিতে বই নিয়ে উইপোকার মত চড়ে বেড়াচ্ছে। গল্প কিছুই বলছে না, এক সময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে যখন দিয়া কিছু বললো ঠিক ততখানি অবধি। দিয়ার ইচ্ছে বা প্রত্যাশা বা স্বপ্ন যে, সে যখন বই থেকে একদিন মাথা তুলে সামনে তাকাবে তখন এমন একজন মানুষকে দেখবে যাকে দেখেই প্রেমে পড়ে যাবে। যদি গল্পটিকে ভেঙ্গে একটু বাংলা সিনেমায় আসি তাহলে এই অংশটুকু দেখবেন কলেজ ছাত্রী যখন সিঁড়ি বেয়ে নামছেন ঠিক সেই মূহুর্তে স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহের সাথে এক ধাক্কা। মানে তারপর প্রেম। যেহেতু ফিমেল প্রোটাগনিস্ট তাই ডিরেক্টর ভিন্ন ডাইমেনশনে নিয়ে যেতে চাইলেও টিপিক্যাল ভারতীয়দের মত করে দিয়াও মুখ ফুটে পুরো গল্প জুড়ে কিছুই বলছে না। না সে রোহিত কে নির্ধারণ করছে, না সে আদি কে নির্ধারণ করছে। মুশকিল হলো, প্রোটাগনিস্ট যখন এস্কেপিস্ট। গল্পের অল্প কিছু দূর যেতেই মনে হয়েছে, ডিরেক্টর গল্প হারিয়ে ফেলেছেন। আদি এর সাথে দিয়ার পুনঃ নতুন গল্প দর্শকদের অনেকদূর অবধি ধরে রাখতে সক্ষম। স্ক্রিনপ্লে চমৎকার বলতেই হয়। খুবই মসৃণ স্ক্রিনপ্লে। একই সাথে প্রচন্ড অস্পষ্ট। আদি এর বেড়ে উঠার গল্প প্রোটাগনিস্ট বলতেই ভুলে গেছেন যেন। “লাকি” একজন মায়ের ভূমিকা নিলেও আদি এর প্রকৃত মা নন। কিন্তু তিনি আদি এর জন্য অনেক কিছু করছেন। এমনকি আদির পছন্দের বাইক পর্যন্ত কিনে দেওয়া। নাটকীয়ভাবে দিয়া আত্মহত্যা থেকে বেঁচে যায় কারণ আদি তার ফোনে রিং করে আত্মহত্যার সাহসিকতা নষ্ট করে দিয়েছিলো। ঠিক যেমনটা বাংলা সিনেমায় নায়িকা বিপদে পড়লে নায়ক হঠাৎ উদয় হয়। তারপর ঢিশম...ঢিশম...
একজন বন্ধুর প্রকৃত গুণ হচ্ছে, সে তার বন্ধুর খেয়াল রাখবে! স্বাভাবিক, কিন্তু কোন এক্সটেন্ট পর্যন্ত? পাত্তা না পেয়ে আদি অন্তত লাপাত্তা হয়নি, উল্টো লেগে ছিলো। এটাকে আপনার আমাদের বাংলা সিনেমার নায়ক যখন নায়িকার পিছন পিছন ঘুরঘুর করে। ডায়ালগে মিষ্টি দুই লাইন বেশি বলেছে এখানে,
“Life is full of surprises & miracles.”
দিয়ার কাছে যদিও সেটা উল্টো। এখন ২০২০তে এসেও যদি ভারতীয় মুভি পুরনো মদ আবার খাওয়ায় তাহলে কেমন হয়ে যায় না। তাই মোবাইলে সস্তা ম্যাসেজ না করে জীবনবোধ নিয়ে দার্শনিক দুই লাইন আওড়ানোকে বেছে নেওয়া। বাকিগুলো পুরনো মদ। বার্থডে সারপ্রাইজ, হুটহাট পরিকল্পনায় একনজর কাছের মানুষকে দেখা এর বাহিরে কিচ্ছু নেই। সুন্দর সাজানো ও গাঁথা ডায়ালগ আপনাকে লেপ্টে থাকতে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু নতুন বোতলে পুরনো মদ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
এরপর আবার মনে হবে পরিচালক গল্প হারিয়ে ফেলেছেন। তাই গল্পে টুয়িস্ট হিসেবে রোহিতের পুনর্জন্ম মানে বেঁচে ফেরা। এখন কাস্টমার কেয়ার আদি সাইড নিবে সবার জানা। এখন আদি জাস্টিফাই, দর্শকদের সিম্পাথি আদির দিকে।
দিয়া আর রোহিতের বিয়ে হচ্ছে। আদি চাইলে সোহমের মত গান গাইতে পারতো, “বুঝে না সে বুঝে না...”। কিন্তু সেটা না করে “সানাম তেরি কাসাম” মুভির হিট গান, “তু খিচ মেরি ফটো...” এর থিম ধার করে রোহিত-দিয়া-আদি এর আশ্চর্যজনক ফটো তুলে ক্যামেরাম্যান ধন্য হলেন।
এই দৃশ্য দেখে যখন আমার ঘুম আসে আসে অবস্থা ঠিক তখনি লাকি মারা গেল। বুঝলাম না! মা তার সন্তানের কষ্টে কষ্ট পান সত্য। কিন্তু হ্যার্ট এট্যাক যেন আনোয়ার হোসেন সাহেব কে মনে করিয়ে দিলো। আদি আরো জাস্টিফাই এখন। দর্শকেরও বুঝে যাওয়া শেষ যে, এখন দিয়া আদির কাছে ফিরবে। মানে এই পরিমাণ প্রেডিক্টেবল।
পরিচালক ভাবলেন, হায়! টিপিক্যাল হয়ে গেল কেন? নতুন তামাশা কি দাঁড় করানো যায়? নিশ্চয়, তাই স্ক্রিপ্ট-রাইটার আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে আদি কে নিশ্চিহ্ন করে দিলেন।
প্রিয়তমার চোখে চোখ, ট্রেনের কথা মনে নেই। এমন মৃত্যু আসলেই আদি কে মৃত্যুঞ্জয়ী বানালো। আর দিয়া বুঝে গেল...
“Life is full of suffering and pain.”
জীবনে অর্বিটারি বা এলোপাথাড়ি বা বিচ্ছিন্ন কিছু মোমেন্টের সমষ্টি মাত্র। সে দর্শনকে করলো আরো উজ্জীবিত এবং খেলো। এই গল্পের পিছনে ইতিহাস নেই, আছে পরিহাস। বেদনা নেই, আসে সহানুভূতি এবং ক্রমিক আদর্শিক শৈল্পিক গল্প। যা বিচ্ছিনতাবাদে ভুক্ত হয়ে বাস্তবতা কে তুচ্ছ করেছে।
ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২৩