
বর্তমান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে সমস্ত ক্ষমতার একমাত্র ও একচ্ছত্র মালিক হয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এখন পর্যন্ত যতগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রস্তাবনা, প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবনা এবং বুদ্ধিজীবীদের প্রস্তাবনা আমি যতদূর পর্যবেক্ষণ করেছি তাতে সারবত্তা বলার মত খুব বেশি নাই। একইসাথে অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের পর আমাদের দাবী-দাওয়া সীমা অতিক্রম করে গেছে। একটি ইউটোপিয়ান রাজ্যেও এত দাবি-দাওয়া, অভিযোগ, চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। কিছু মৌলিক বিষয় নিয়ে মোটাদাগে নিশ্চয় কিছু সংশোধন তাঁরা করতে পারবেন এবং এই বিশ্বাস এখন পর্যন্ত আমার মধ্যে আছে।
আমি জানিনা ঠিক কোথা থেকে কানে এলো ‘Proportional Representatives in Democracy (PR)’ বিষয়টি নিয়ে। এই প্রস্তাবটি এখন পর্যন্ত আমার কাছে সেরা প্রস্তাব বলে মনে হয়েছে। শুধু আমার কাছে নয়, আমি যেটুকু সামান্য অনলাইন সোর্চ পেলাম সেখানেও এই ‘PR’ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনেক প্রশংসা করা হয়েছে। কিন্তু এই ‘Proportional Representatives in Democracy (PR)’ মূলত কি? কীভাবে ফাংশন করে? কীভাবে আমরা বাংলাদেশী হিসেবে এক ধরণের ‘Reconciliation (সমন্বয়সাধন)’ এর দিকে এগিয়ে যেতে পারবো? শুধু তাই নয়, ‘PR’ এর মাধ্যমেই শুধুমাত্র তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিতে বা সংসদে প্রবেশ করতে পারবেন।
ধারণ করার কিছুই নেই আমরা একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে থাকতে চাই। সুতরাং একটি অনুমান নির্ভর ‘Proportional Representatives (PR)’ নিয়ে কথা বলা যাক। এখানে মোট সিট সংখ্যা ধরে নিচ্ছি ১০০টি (হিসেবের সুবিধার্থে)। মোটাদাগে মোট দল সংখ্যা ধরে নিচ্ছি ৫টি। এখন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ভোটের শতাংশ এই ৫ দলের মধ্যে ভাগ করে নিচ্ছি,
১. দল – ক: ৩৫% শতাংশ ভোট পেয়েছে
২. দল – খ: ২৫% শতাংশ ভোট পেয়েছে
৩. দল – গ: ২০% শতাংশ ভোট পেয়েছে
৪. দল – ঘ: ১৫% শতাংশ ভোট পেয়েছে
৫. দল – ঙ: ৫% শতাংশ ভোট পেয়েছে
এখন সিট কীভাবে বিভাজিত হবে? কারণ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মডেলে যিনি বা যে দল বেশি শতাংশ ভোট পাবেন তারাই মেম্বার অব পার্লামেন্ট হবেন এবং সরকার গঠন করবেন। কিন্তু ‘Proportional Representatives (PR)’ আমার মতে অনেক বেশি গণতান্ত্রিক। কারণ ৩০% শতাংশ ভোট নিয়েও একদল কোনো পদ পাবেন না সেটা বৈষম্যের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। যাকগে, এখন এই ৫টি দল উপরের দেওয়া মোট ভোটের শতাংশ অনুযায়ী এবং ‘PR’ গণতান্ত্রিক মডেল অনুযায়ী সিট পাবেন যথাক্রমে,
১. দল – ক: ৩৫টি সিট
২. দল – খ: ২৫টি সিট
৩. দল – গ: ২০টি সিট
৪. দল – ঘ: ১৫টি সিট
৫. দল – ঙ: ৫টি সিট
বাংলাদেশে এই ‘পিআর (PR)’ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কেন প্রয়োজন? খুব সম্ভবত আমার এই প্রশ্নের উত্তর দেবার প্রয়োজন নাই। তারপরেও, এখানে এতগুলো দল ও মত সময় সময় নির্দিষ্ট বিষয়ে একসাথে লড়াই করলেও এই সম্পর্ক কোনোভাবেই দীর্ঘস্থায়ী হবে না। এবং আমরা ‘সমন্বয়ক’ দের থেকে যে ‘Reconciliation (সমন্বয়সাধন)’ চাচ্ছি তা আজীবন স্বপ্নই থেকে যাবে। একই সাথে এখানে শুধুমাত্র ‘Left’, ‘Right’ ও ‘Centre’ নামক ৩ ধরণের দল থাকলেও হত! এখানে আছে পর্যায়ক্রমে অতিলঘু, লঘু, I Hate Politics, কড়া, অতি কড়া (Left, Right, Centre) দলগুলো... বাকি আপনি সমঝদার।
এখন আসা যাক ‘Proportional Representatives (PR)’ এর বেনিফিট মানে উপকারীতা কী কী?
১. অন্তর্ভুক্তি (Inclusivity): শেষের মানে ৫ নং দল মাত্র ৫% শতাংশ ভোট পেয়েও তবুও তাদের ৫ জন সাংসদ থাকবেন। আর এই ৫ জন সাংসাদ তাদের হয়ে কথা বলতে পারবেন। আওয়াজ উঠবে, কতাও কবে! (কি জানি ছাত্রদের রাজনীতিতে এভাবেই হাতেখড়ি হতে পারে।)
২. কোয়ালিশন বিল্ডিং (Coalition Building): বাংলাদেশের মত গণতান্ত্রিক দেশে কোনো একক পার্টি বা দল ৫০% শতাংশ+ ছাড়িয়ে যেতে আজ পর্যন্ত সক্ষম হয় নাই। মানে যেগুলো অন্তত নির্বাচন বলে ধরা যায় সেগুলোতে। তাহলে সরকার গঠন করতে হবে ব্যাপক আপোষ ও আফসোসে। একক ভাবে রাজার রাজ্যে সবাই গোলাম এই দেশে আর ঘটানো সম্ভব হবে না।
৩. প্রতিফলিত শাসন ব্যবস্থা (Reflective Governance): যেহেতু সব অংশ থেকেই কথা উঠবে এবং সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব সংসদে থাকবেন সেহেতু বিপক্ষের কার্যকরী ভূমিকা আরো শক্তপোক্ত হবে। যেকোনো সিদ্ধান্ত বা আইন করার ক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট খুব সহজে আর মিলবে না।
যদিও এখানে ছোটখাটো কিন্তু ভারি চ্যালেঞ্জ থাকবে। কারণ ৪০% শতাংশ ভোট নিয়েও নেগোসিয়েশন করতে হবে ছোট বা ক্ষুদ্র দলের কাছে। আমার মতে, অন্য দেশে এটা চ্যালেঞ্জ হলেও বাংলাদেশে পান্তাভাত। সুতরাং এই চ্যালেঞ্জ ব্যক্তিগত ভাবে আমি খারিজ করছি। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ নিয়ে চিন্তিত থেকে গেলাম যে, পলিসি মেকিং এ ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ সম্মতি মেলা কঠিন হওয়ায় একটি সামান্য আইন পাশ করতেও একাধিকবার সংসদে ডায়ালগ চলবে। যদিও ব্যক্তিগত ভাবে আমি এটাকেও স্বাগত জানাই।
কোন কোন দেশ এই ‘Proportional Representatives (PR)’ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে চলে?
১. জার্মানি
২. সুইডেন
৩. নেদারল্যান্ডস
৪. নরওয়ে
৫. ফিনল্যান্ড
৬. ডেনমার্ক
৭. সুইজারল্যান্ড
৮. বেলজিয়াম
৯. লুক্সেমবার্গ
১০. নিউজিল্যান্ড
১১. আর্জেন্টিনা
১২. ব্রাজিল
১৩. চিলি
১৪. দক্ষিণ আফ্রিকা
১৫. উরুগুয়ে
এই ছিলো আমার আজকের আলোচনা। কেমন ছিলো? আশা করি আপনাদের কাছে আরো ভালো প্রস্তাবনা আছে। আমি অপেক্ষায় থাকলাম। ধন্যবাদ
Also Read It On: বাংলাদেশের গণতন্ত্রে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representatives): একটি প্রয়োজনীয় পরিবর্তন
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



