somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি আমি আর গীটার.

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“বৃষ্টি আমাকে ভিজাতে পারে নি....।।

ভিজিয়েছ তুমি......
তোমার আঁখি জলে। ”

ল্যাপটপ এ আমার প্রিয় গানটা বাজছে।
হটাত করেই গানটা বন্ধ হয়ে গেল। স্কাইপি তে একটা অনেকদিনের পরিচিত কিন্তু অবহেলিত আইডি থেকে কল আসলো। দীর্ঘ ৫ টি বছর পর এই প্রথম। কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়েথাকলাম। আমাকে কল করার মতো কি কারণ থাকতে পারে তা ভাবতে ভাবতেই কল টা কেটে যায়। আরও ১০ মিনিট অপেক্ষা করলাম। আবার কল না আসায় নিজেই কল দিলাম। যদিও কলটা দিতে দ্বিধাবোধ করছিলাম। ২ বার কল হতেই ওপাশ থেকে রিসিভ হল।
“হ্যালো”
“হম”
“কল দিয়েছিলে?”
“হম”
“কেন? কোন দরকার ছিল?’
“আমি সামনের শনিবারবাংলাদেশ আসছি”
“ও আচ্ছা”
“welcome জানাবে না?”
“যাওয়ার সময় তো good bye বলি নি”
“হম তা ঠিক। তারপর কেমন যাচ্ছে?”
“এইতো যাচ্ছে বেশ ভালোই।আমি, আমার একাকীত্ব আর গীটার টা। বেশ ভালোই বলতে পারো।”
“এখনো গীটার বাজাও?”
“হম বাজাই, নিজের জন্য বাজাই। অন্যদের জন্য আমার গীটার আর বাজে না।“
১মিনিট নীরবতা......।
“হ্যালো”
“হম”
“আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করবে না?”
“ভালো থাকার জন্যই তো গিয়েছিলে। তাহলে এই প্রশ্ন করাটা কি অবান্তর না?”
“তুমি একটুও বদলাও নি। আগের মতই খোঁচা দিয়ে কথা বল।”
“তবুও ভালো। তোমার মতো বদলে তো আর যাই নি।”
.................................
কলটা কেটে গেল।


নিশ্চুপ হয়ে পুরাতন স্মৃতিচারনা করতে বসলাম। নীলার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো ভার্সিটিতে। প্রথম যেদিন ওকে দেখি সেদিন ও পরে ছিল সাদা পাড়ের একটিআকাশি শাড়ি। ওর মুখের স্নিগ্ধতার সাথে শাড়িটা কেমন যেন মানিয়ে গিয়েছিল। সেদিন শুধু দেখাই হয়েছিলো।একনজরের দেখা। আর তাতেই ওর প্রেমে পড়লাম। কিন্তু ওকে এরপর আর খুঁজে পেলাম না।
ফ্রেন্ড সার্কেলে আমিআধুনিক দেবদাস নামে পরিচিত ছিলাম। যদিও আমার কোন পার্বতী ছিল না এবং আমি মদ ও খেতাম না। পড়ালেখার থেকেগীটারটাই আমাকে টানত বেশি।
২য় দিন ওর সাথে দেখাহওয়ার ঘটনা আমি কখনো ভুলব না। সেদিন টি এস সি তে একটা কন্সার্ট ছিল। আমি ২ টা গান গেয়েছিলাম। গানের শেষে যখন স্টেজ থেকে নামি তখন পিছন থেকে কে জানি আমাকে ডাকে। ফিরে দেখি সেই মেয়ে সাদা পাড় আকাশি শাড়িরসেই মেয়ে। আজকে অবশ্য শুভ্র কালারের একটি শাড়ি পরেছে। এটাতেও ওকে অসাধারণ লাগছে।
আমার গানের প্রসংশা করলো অনেক। শেষে আমার কন্টাক্ট নাম্বার টা চেয়ে নিল। রাতের বেলায় ও কল দিল। অনেকক্ষণ কথা হল। কথার একপর্যায়ে ও আমার কাছে গীটার শিখতে চাইল। আমিও রাজিহয়ে গেলাম। পরেরদিন টি এস সি তে দেখা করতে বললাম।
এরপর থেকে প্রত্যেকদিন আমাদের কথা হত। কথা বলতে বলতেরাত কাভার হয়ে ভর হতো। বিকেল বেলায় টি এস সির পুকুর পাড়ে ওকে গীটার শিখাতাম। আস্তে আস্তে আমরা ঘনিষ্ঠ হলাম। ওরা বিরাট বড়লোকছিল আর আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাই ওকে ভালবাসার কথা বলতেও দ্বিধাবোধ করতাম। কিন্তু আমার মন মানছিল না। আমি ওকে অনেক ভালবাসতাম। মুখ ফুটে বলতে পারতাম না। একদিন ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা তোমাকে যদি কোন কাঙ্গাল এসে বলে আমার কাছে কিছু নেই তোমাকে দিবার মতো, কোন ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা নেই, নেই অর্থ সম্পদ, নেই কোন ঘর, আছে সুধুই ভালোবাসা, আকাশ ছোঁয়া ভালবাসা, পৃথিবীতে এমন কোন দাঁড়িপাল্লা হয় নি যেটা আমার ভালোবাসা পরিমাপ করতে পারবে। তুমি কি আমার সাথে যাবে? তখন তুমি কি বলবে?”
তুমি মুচকি হেঁসে বলেছিলে, “সেই কাঙ্গালটা কি তুমি? তাহলে অবশ্যই যাব।“
সেদিন আমি কত খুশি হয়েছিলাম তুমি জানো? জীবনে আমি প্রথমবার সারারাত গীটার বাজিয়েছি সেদিন। হাতের আঙ্গুল কেটে রক্ত পড়ছিল তবুও বাজিয়েছি। খুশি প্রকাশ করার এটাই যে আমার একমাত্র ভাষা।
বেশ হাঁসি খুশিই ছিলাম আমরা। আনন্দ, হাঁসি, গান, অভিমান, কষ্ট, রাত জাগা, ক্লাস ফাকি দিয়ে প্রেম, তোমারচুলের ঘ্রাণ জিনিসগুল অনেক উপভোগ করতাম। ফ্রেন্ড রাও আমাকে আর দেবদাস ডাকতো না। ভালোই তো যাচ্ছিল সব তাহলে হটাত করেই কেন সব ধ্বসে পরে গেল?
৪ বছর প্রেম করার পর তুমি একদিন এসে বললে তোমার ভিসা ঠিক হয়ে গেছে। তুমি চলে যাবে আমেরিকা। আমার থেকে ১২ ঘণ্টার দূরত্ব থাকবে তোমার। সবসময়। আরও বললে আমাদের সম্পর্কটারাখা আর সম্ভব না। আমার মতন বেকার যুবকের সাথে তুমিঅনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর পথে পা বাড়াতে চাও না।

আচ্ছা তুমি কি সেদিন ভুলে গিয়েছিলে যে এই তুমিই তো একদিন বলেছিলে এই কাঙ্গালের সাথে যেতে তোমার সমস্যা হবে না। সব ভুলে গিয়েছিলে? ভুলে গিয়েছিলে আমাদের সোনালি মুহূর্ত গুলো? কিভাবে ভুললে? আমি সেদিন কিছুই বলি নি। চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। তোমার গমনপথে চেয়ে। সত্যিকারের দেবদাস বানিয়ে দিয়ে গেলে তুমি।
এরপর ৫ টি বছর কেটে গেল। আমি কখনো আর তোমার খবর নিতে চেষ্টা করিনি। তুমি আমার খবর নিতে নিয়মিত। আমি জানি। রাকিব আমার সব খবর তোমাকে দিত। আমি শুধু শুনেছিলাম তোমার বিয়ে হয়েছে একজন আমেরিকানের সাথে। ওখানেই সেটেল্ড তুমি। এর থেকে বেশি কিছুই জানি না। জানতে চেষ্টাও করিনি। সব পুরনো জিনিস আমি স্মৃতি থেকে বাদ দিয়েছি বাদ দেই নি শুধু আমার গীটার টা। আমার সব সুখ দুঃখের সাথি। যেদিন তুমি গিয়েছিলে সেদিন আমি কাদিনি। কাঁদিয়েছিলাম আমার গীটারকে। সারারাত কাঁদিয়েছি। গীটারের তার ছিঁড়ার আগ পর্জন্ত থামি নি।
.
.
.
.
.
.
.
ক্রিং ক্রিং...... রাকিবের কল আসলো। রাকিব আমার কোম্পানির জিএম+আমার ভার্সিটি ফ্রেন্ড।
“হ্যালো”
“হ্যালো দোস্ত থুক্কু স্যার নতুনগীটার গুলো বানানো শেষ। তুই থুক্কু আপনি এসে একটু চেক করে যাইয়েন।“
“আচ্ছা। করব। রাখ।”
হ্যাঁ আমিই রাহাত। রাহাত’স গীটার এন্ড কোং এর মালিক। একদিনেরকাঙ্গাল রাহাতের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আজ সুনিশ্চিত কিন্তু একদিনের সুখান্বেষী নিলা আজ অসুখী। বড্ড অসুখী। কেউ বলে নি আমায় তবুও আমি জানি। অনেক অসুখী।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×