somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হকিং, আইনস্টাইন ও মেরিলিন মনরো এবং নোবেল পুরস্কার

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


না, শেষ পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার পাওয়া হলো না স্যার স্টিফেন উইলিয়াম হকিং-এর। মারা যাবার পর তাঁর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সকল সম্ভাবনাও রদ হয়ে গেল। কারণ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার প্রথম শর্তই হলো জীবিত থাকা!
আর একটু সময় পেলে হয়তো হকিং নোবেল পুরস্কার পেলেও পেতে পারতেন। বছরখানেক আগের কিছু কিছু ঘটনা ও পরীক্ষার ফলাফল দেখে মনে হয়েছিল ২০১৮/২০১৯ এর মধ্যে ঘটনাটি ঘটতেও পারে।
নোবেল পুরস্কার নিয়ে হকিং-এর আগ্রহের কথা অনেক শোনা যায়। সর্বশেষ বছর কয়েক আগের কথা। এক বড় মিলনায়তনে বক্তৃতা করছেন হুইল চেয়ারের বিজ্ঞানী। স্লাইডের পর স্লাইড আসছে, কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ করে সবাই নড়েচড়ে বসলেন। কারণ পর্দায় বড় করে একটা নোবেল পুরস্কারের ছবি!!! শোনা গেল হকিং-এর ধাতব কন্ঠস্বর - যদি কম-ভরের কৃষ্ণগহবর আবিস্কৃত হয়, তাহলেই আমি নোবেল পুরস্কার পেয়ে যাবো।"
আলফ্রেড নোবেল যখন তার পুরস্কারের উইল করেছিলেন তখন সেখানে কয়েকটা শর্ত জুড়ে দেন। বড় অংশ জুড়ে ছিল "ব্যবহারিকভাবে প্রমাণিত" এই বাক্যটি। আর এই কারণে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানীদের এই পুরস্কারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘদিন। আইনস্টাইনও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। নোবেল কমিটি আইনস্টাইনকে পুরস্কার দিয়েছে ১৯২২ সালে, ১৯১৯ সালের সূর্যগ্রহণের সময় আর্থার এডিংটনের পর্যবেক্ষণের পর এবং শেষ পর্যন্ত পুরস্কারের বর্ণনায় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আলোর তড়িৎ ক্রিয়ার ব্যাপারটাও জুড়ে দেন। বিশ্বখ্যাত টাইমস ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক মন্তব্যে হকিং ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে বলেছিলেন - তিনি এমনভাবে কাজ করছেন, যাতে কৃষ্ণ গহবরকে নিয়ে তার কাজটা সত্য বলে প্রমাণিত হতে পারে। একই বছর আগস্টে নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক নিবন্ধের ফলাফল সত্য হলে হকিং-এর এই অপেক্ষার পালার অবসান হতে পারতো।
নোবেল পুরস্কার ছাড়া আর সব পুরস্কার ও স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর একটি আবক্ষ মূর্তি আছে, ওনার নামে একটা ভবনও আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনেও তাঁর একটি মূর্তি আছে। এল সালভাদরের রাজধানী সান সালভাদরের বিজ্ঞান জাদুঘরটির নাম স্টিফেন হকিং বিজ্ঞান জাদুঘর। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রানি তাঁকে অর্ডার অব দ্যা ব্রিটিশ এম্পায়ার এবং অর্ডার অব দ্যা কম্প্যানিয়ন অনারে ভূষিত করেছেন। আমেরিকার আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পদক। পেয়েছেন অনেকগুলো আন্তর্জাতিক পুরস্কার, যার মধ্যে রয়েছে তত্ত্বীয় পদার্থবিদদের সর্বোচ্চ সম্মান অ্যালবার্ট আইনস্টাইন পদক। ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে, তাঁর পুরোনো অক্সফোর্ডসহ। আর ১৯৭৯ সালে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হকিংকে বানায় গণিতের লুকাসিয়ান প্রফেসর, এক সময় যে পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। ২০০৯ সালে আবারএ এই পদে যোগ দেন। এর আগে ১৯৭৪ সালেই রাজকীয় বিজ্ঞান সমিতির ফেলো হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালে পেয়েছেন বিবিভিএ ফাউন্ডেশন ফ্রন্টিয়ার অব নলেজ এওয়ার্ড।
সত্যি কথা বলতে কী কেবল নোবেল পাওয়াটাই বাকি ছিল তার, সেটি আর হবে না!
হকিং-কে নোবেল পুরস্কার দিতে না পারার একটা কারণ হলো বাস্তবে একটা ব্ল্যাকহোল থেকে হকিং বিকিরণ বের হয়ে আসছে কী না সেটা মাপার মতো কারিগরি দক্ষতা এখনো মানুষের আয়ত্ব হয়নি। তাহলে বাকী থাকে ল্যাবরেটরিতে একটা ব্ল্যাকহোল বানানো!!! সেটার একটা সম্ভাবনা ছিল ইউরোপের সার্নে অবস্থিত লার্জ হেড্রণ কলাইডারে। সেখানে কণাদের মারামারি-ধাক্কাধাক্কিতে খুবই ছোট ব্ল্যাহহোল সৃষ্টি হতেও পারে। যদিও এখণো তার কোন আলামত পাওয়া যায়নি।
একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল কিছুদিন আগে। ১৯৮০ সালে ভ্যাংকুভারে ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী বিল আনরু হকিং বিকিরণ পরীক্ষা করার একটা ভিন্ন পদ্ধতি প্রস্তাব করেন। তিনি এমন একটি মাধ্যমের কথা ভাবলেন যা কিনা ত্বরিত গতিতে চলমান। জলপ্রপাতের বেলায় এটি দেখা যায়। জলপ্রপাতের একটি নির্দিষ্ট স্থানে পৌছলে কোন সাতারুই এমন গতিতে সাতার কাটতে পারে না যা জলপ্রপাতের আকর্ষনকে নাকচ করতে পারে। ফলে, সে যেমন সাতারু হোক না কেন তাকে জলপ্রপাতে আত্মসমর্পন করতেই হয়। আনরুর বক্তব্য ছিল এটিই একটি ঘটনা দিগন্ত। কাজে শব্দের জন্য যদি কোন “ব্ল্যাকহোল” বানানো যায় তাহলেই হকিং বিকিরণ সেখানেও দেখা যাবে।
২০১৬ সালে বিজ্ঞানী স্টেইনহওয়ার ঠিক এই কাজটা করেন। তিনি রুবিডিয়াম পরমাণুর একটি মেঘমালার তাপমাত্রাকে নিয়ে গেলেন পরম শূন্যের (-২৭৩ ডিগ্রী কেলভিন) সামান্য ওপরে। ফলে রুবিডিয়াম পরমাণুর মেঘমালাটি চলে যাচ্ছে বোস-আইনস্টাইন ঘনায়ন (BEC- Bose-Einstein Condensate) নামের এক কোয়ান্টাম স্তরে। সেগুলোকে দিয়ে বানানো হলো সিগারের মতো লম্বা একটি আকৃতি যা কিনা মাত্র কয়েক মিলিমিটার লম্বা। এতে শব্দের গতিবেগ দাড়ালো সেকেন্ডে আধা মিলিমিটারের মতো। তারপর তিনি ঐ পরমাণুগুলিকে ত্বরণ দিয়ে এমন অবস্থায় আনলেন যার ফলে কোনো কোনো কণার গতিবেগ হয়ে গেল সেকেন্ড এক মিলিমিটারের বেশি। ফলে, তৈরি হয়ে গেল শব্দের জন্য একটা ঘটনা দিগন্ত! আর ঐ স্বল্প তাপমাত্রায় বিইসি খুবই দুর্বল কোয়ান্টাম চাঞ্চল্যের ভেতর দিয়ে যায়। এর ফলে সেখানে তৈরি হয় শব্দের জোড়া কণা, ফোনোন। ব্ল্যাকহোলে যেমনটি হয় ফোটন কণা। আর এই ফোনোন কণার একটা হারিয়ে যাচ্ছে বিইসির এক পাশে আর অন্যপাশে আবির্ভুত হচ্ছে অপরটি। স্টেইনহওয়ারের মতে এর একটাই অর্থ বিইসি থেকে বের হয়ে আসছে হকিং বিকিরণ!!!!
বিজ্ঞানীরা স্টেইনহওয়ারের এই ব্যাপারটাতে নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে, সবাই এটি মেনেছেন যে, স্টেইনহওয়ারের পরীক্ষা সফল হওয়ার মানেই হচ্ছে হকিং বিকিরণ প্রমাণিত হওয়া। আর তাই অনেকই এই পরিক্ষণটি নিজেরা করবেন বলে ঠিক করেছেন, অনেকই শুরুও করেছেন। কিন্তু গত আড়াই বছরে আর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

হকিং-এর নোবেল না পাওয়ার বেদনার ক্ষত কিছুটা মেটে যখন আমরা জানি মেরিলিন মনরোও ককণো একাডেমি এওয়ার্ড পান নি। সত্যি কথা বলতে কি বেচারীকে কখনো মনোনয়নও দেওয়া হয়নি।
অথচ মেরিলিনের জীবনী নিয়ে বানানো সিনেমার নায়িকা যে কিনা মেরিলিনের ভূমিকায় অভিনয় করেছে তিনি কিন্তু নমিনেশন পেয়েছে!



কা তব কান্তা। এ জগতের সবই মায়া।


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫১
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×