somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঔষধি গাছ শ্বেত চন্দন চাষ করে হতে পারেন কোটিপতি

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের কৃষকদের আর্থিক উন্নতির একটাই উপায় আর তা হল স্বল্প ব্যয়ে আরও বেশি মুনাফা অর্জন। ক্ষুদ্র থেকে বড় প্রতিটি কৃষকের লক্ষ্য কৃষি কাজ করে উপার্জনের সাথে সাথে নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি। দেশের বেশিরভাগ কৃষক এখনও ঐতিহ্যবাহী কৃষিকাজের সাথে যুক্ত। আবার এমন কিছু কৃষক আছেন যারা ঐতিহ্যবাহী চাষ থেকে দূরে সরে যেতে চান এমন কিছু জিনিস চাষ করার জন্য যা তাদের ভাল লাভ দিতে পারে। এ জন্য দেশের কৃষকরা প্রতিদিন কৃষিতে নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছেন। মূল ফসলের সাথে তারা সাথী ফসল চাষ করেন অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য।

তেমনই এক গাছের নাম শ্বেত চন্দন (White sandalwood) । কম পানি সেচ, কম পরিচর্যা ছাড়াও বাঁচতে পারে এই গাছ। তাই খরা প্রবণ এলাকাতেও শ্বেত চন্দনের চাষ হতে পারে। যেহেতু শ্বেত চন্দনের ঔষধি গুণ অসাধারণ তাই এই কাঠের দামও বেশি। বর্তমানে এই কাঠ প্রায় ১৫ হাজার টাকা কেজি।

চন্দন গাছের প্রকারভেদঃ
সাধারণত তিন প্রকারের চন্দনের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে দুই প্রকারের চন্দনের অস্তিত্ব¡ পাওয়া যায়। তিন প্রকার চন্দন হল সাদা চন্দন বা শ্বেতচন্দন, রক্ত চন্দন বা লাল চন্দন, পিত চন্দন। তবে পিত চন্দনের কথা শোনা গেলেও এর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।

শ্বেত এবং রক্ত চন্দন দুটিই ঔষধ ও প্রসাধনী শিল্পে ব্যবহার হয়। এর মধ্যে শ্বেত চন্দন এর মূল্য বেশী। শ্বেত চন্দন এর বোটানিকাল নাম সান্টালুম এ্যালবাম (Santalum album)। জানুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কাটিং পদ্ধতিতে চারা করার উপযুক্ত সময়। তবে পরিপক্ক চারা বছরের যে কোন সময় রোপন করা যায়। চারা রোপনের ক্ষেত্রে একটু উচু জায়গা নির্ধারন করতে হবে। চন্দন সাধারনত একটু সৌখিন ও ক্ষড়াসহিষ্ণু গাছ। আমাদের দেশের সব এলাকাতে এর চাষ করা সম্ভব। শ্বেতচন্দন গাছের তেমন কোন রোগবালাই নেই। চন্দন কাঠের সুগন্ধ মানুষের কাছে আকর্ষনীয় হলেও পোকামাকড়ের কাছে আকর্ষনীয় নয়। শীতের শুরুতে শ্বেতচন্দন গাছের পাতা ঝড়ে যায়।

চন্দন কাঠের চাষ সম্ভাবনাঃ
চন্দন কাঠের চাষ বেশ লাভজনক, উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হ’ল আমাদের দেশের পাশাপাশি বিদেশেও এর চাহিদা ভালোই রয়েছে। সেই প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আজও এর চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। চন্দন কাঠের চাষে আপনাকে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে, তার বহুগুণ বেশি অর্থ আপনি উপার্জন করতে পারবেন। অর্থাৎ এটি বেশ লাভজনক। তবে এর জন্য আপনাকে কমপক্ষে ১৫-২০ বছর দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হবে। এতে ব্যয় হয় প্রায় এক লাখ টাকা এবং এতে মুনাফা হয় ৬০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত। শ্বেত চন্দন গাছগুলিকে চিরসবুজ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এর থেকে উত্পাদিত তেল এবং কাঠ ঔষধ তৈরি করতেও ব্যবহৃত হয়। শ্বেত চন্দন কাঠের তেল সাবান, প্রসাধনী এবং আতর সুগন্ধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

কত দিনের মধ্যে চন্দন গাছ প্রস্তুত হয়ঃ
চন্দন গাছ দুটি উপায়ে প্রস্তুত করা যায়- প্রথমটি জৈব চাষ এবং দ্বিতীয়টি ঐতিহ্যবাহী উপায়ে চাষ। জৈব পদ্ধতিতে এবং প্রচলিত উপায়ে চন্দন গাছ প্রস্তুত হতে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগে। অন্যান্য গাছের তুলনায় চন্দন গাছ বেশ ব্যয়বহুল। তবে আপনি যদি একবারে অনেকগুলি গাছ কিনে থাকেন তবে এটি গড়ে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় পাবেন। শ্বেতচন্দন গাছ চাষ করা যেমন সহজসাধ্য, তেমনি অত্যন্ত লাভজনকও। এই গাছ চাষে তেমনভাবে কোনও খরচও নেই। সেচও লাগে কম। প্রথম দুই বছর গাছের সামান্য যত্ন নিতে পারলেই আর কোনও অসুবিধা নেই।

শ্বেত চন্দন চাষে কত লাভ হতে পারেঃ
গাছের বয়স ২০ হলেই প্রায় পরিণত এই গাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি কাঠ দেবে। মাটির উপরের ভাগের কাঠের দাম বর্তমান বাজারে যা ১৫ হাজার টাকা প্রতি কেজি৷ তবে ২০ বছর পর আরও দাম বাড়ার সম্ভাবনা। এমনকি মাটির ভিতর শিকড় ইত্যাদি কাঠও পাওয়া যেতে পারে নয় নয় করেও প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার। অর্থাৎ বর্তমানে কোনও গাছ রোপণ করলে ২০ বছর পর অনায়াসেই আপনি গাছের সংখ্যা অনুযায়ী ৬০ লক্ষ থেকে কোটি টাকার মালিক হয়ে যেতে পারেন।

শ্বেত চন্দনের ঔষধি গুনাগুনঃ
সব চন্দন কাঠই উপকারী তবে শ্বেত চন্দন যেমন দামী তেমনী মানব স্বাস্থের জন্যও উপকারি অসাধারন একটি দুর্লভ ভেষজ। সাদা চন্দনের গাছ থেকে পাতন ব্যবস্থায় তেল নিস্কাশন করে প্রসাধনী, ঔষধ ও দামী আতর শিল্পে ব্যবহার করা হয়। শ্বেতচন্দন আমাদের কাছে সুগন্ধি কাঠ হিসেবে পরিচিত হলেও চন্দন কাঠের নির্যাস সাবান, পাউডার, আতর, ক্রিম, দাত মাজার পেষ্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। আধুনিক ভেষজ শাস্ত্রে শ্বেতচন্দন বহু রোগের জন্য ব্যবহার করা হয়। যেমন অতিরিক্ত রক্তচাঁপ, ব্রঙ্কাইটিস এছাড়া পেনিসিলিন আবিস্কারের বহু আগেই ভেষজ চিকিৎসকরা গনোরিয়া রোগের জন্য শ্বেতচন্দন ব্যবহার করেছেন। তখন চন্দনের তেলের সংগে অন্য দু’একটি ভেষজ মিশিয়ে ঔষধ বানানো হত। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সর্বত্রই এটি গনোরিয়ার ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হত। এছাড়া খাদ্য হজম, ডায়রীয়া, আমাশয়, ঘামাচি, বসন্ত, হিক্কা সহ বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে চন্দনের বিভিন্ন ব্যবহার হয়েছে বর্তমানেও হইতেছে। রুপচর্চায় শ্বেত চন্দন ব্যবহারে যাদুকরি উপকার পাওয়া যায়।

তাই একজন মানুষ এক একটি চন্দন গাছ রোপন করলে ১০-১৫ বছর পরে তিনি পেনশনের মত করে এই গাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পেতে পারেন।
তথ্য সূত্রঃ এগ্রোবাংলা ডটকম


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৫৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×