
অতীতকালে এক রতি সোনা মাপা হতো যে মাপন দিয়ে তার নাম কুঁচ বীজ। বাংলাদেশে এর আঞ্চলিক নামগুলো হচ্ছে: রতি, রত্তি, কুঁচ, কইচ গোটা। কুঁচের আরও যেসব নাম আছে সেগুলো হচ্ছে চূড়ামনি, শাঙ্গুষ্ঠা, গুঞ্জা, সৌম্যা, শিখন্ডী, কৃষ্ণলা, অরুণা, তাম্রিকা, রক্তিকা, কম্ভোজী, ভিল্লিভূষণা, মাণচূড়া, চন্দন । আর কুঁচের সাদা প্রজাতিটির নাম হচ্ছে শ্বেতগুঞ্জা, ভিরিন্টিকা, কাকাদনী।
‘কুচ বরণ কন্যা তোমার মেঘ বরণ কেশ’ প্রাচীন কাব্য গাঁথার কথা আজও হয়তো কারো স্মৃতির আয়নায় কখনো কখনো ভেসে ওঠে। তবে ধন রত্ন, সোনা গহনা পরিমাপের জন্য যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত কুচ এখন অতি বিরল শ্রেনীর উদ্ভিদের কাতারে নাম লিখিয়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রায় হারিয়ে গেছে অনেক দামি এই কুচ। শোধন করা লাল কুচ বা লাল গুঞ্জার দাম অনেক বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ জানান, কুচ এখন আর দেখা যায়না। আগে স্বর্ণকার বাড়িতে, আলমারির মাথায় সযত্নে লুকিয়ে রাখা নানির দাদির কৌটায়, ফেরিওয়ালার ঝুড়িতে যত্ন করে সাজানো এই কুচকে অনেকে ভাবতো রত্ন বা পাথর। ডিম্বাকৃতির এই ফল শুধু নিখুঁতই নয়, এর এক মেরুতে কালো একটা টিপ বসানো যেন। সেই টিপের মাপ এমন নিখুঁত, সব কুচের এক সমান। মাপলে সামান্যও এদিক-ওদিক হবে না।
কুচ লতা জাতীয় বর্ষজীবী উদ্ভিদ। ইংরেজিতে জিকুইনিটই, কারবাস আই, ইন্ডিয়ান আইকনিক ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম আবরুস প্রিক্রাটোরিউস। আগে বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব গাঁয়ের মাঠে-জঙ্গলে দেখা যেত। অনেক দিন হয়েছে যা আর বলতে গেলে দেখা যায় না। সাধারণত শুকনো মাটিতে জন্মায়। লতা অন্য গাছ বেয়ে ওঠে। ১০ থেকে ১২ ফুট লম্বা হয়। লতার রং সবুজ। লতা চিকন। মূল লতা আধা ইঞ্চির মতো মোটা হয়। লতার আধাফুট দূরে দূরে একটা করে গিঁঠ। প্রতিটি গিঁঠের গোড়া থেকে একটা করে পাতা বের হয়। কুচের পাতা চিরল-চিরল। তেঁতুলের পাতার মতো দেখতে। তবে তেঁতুলের পাতার চেয়ে কিছুটা বড়। বোঁটা বহুপত্রক। প্রতিটি পাতা আধা ইঞ্চি লম্বা হয়। পাতা সবুজ রঙের, পাতলা।
কুচের ফুল শীমফুলের মতো দেখতে। তবে আকারে কিছুটা বড়। ফুল সাদা রংয়ের। দুটো পাঁপড়ি আছে। দুই পাঁপড়ির মাঝখানে বাঁকানো কিশোর থাকে। পাপড়ির ভেতর দিকে বেগুনির রংয়ের ছোপ আছে। ফুল গুচ্ছকারে বের হয়। অর্থাৎ মঞ্জরি বহুপুষ্কক। কুচের ফল দেখতে প্রায় দেশি শীমের মতো। চ্যাপ্টা। আকারে শীমের চেয়ে বেশ ছোট।
কাঁচা ফল সবুজ রংয়ের, খোসা পুরু। পাকা বা শুকনো ফল কালচে ধূসর। ফলের ভেতর চার-পাঁচটা কুচ পাশাপাশি সাজানো থাকে। আমরা কুচ বলতে যা বুঝি, তা মূলত এর বিচি। বাংলাদেশে দু’জাতের কুচ দেখা যায়। সাদা আর লাল। লাল কুচ বাংলায় সর্বাধিক পরিচিত। কুচের বিচি ডিম্বাকৃতির। বিচির একটা মেরুতে কালো ফোঁটা আছে। কালো ফোঁটা বাদে বাকিটুকু লাল অথবা সাদা।
১ ভরি = ১৬ আনা= ১১.৬৬ গ্রাম = ১ তোলা = ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রবর্তিত একটি রৌপ্য মূদ্রার ভর
১ আনা= ৬ রতি = ০.৭২৮ গ্রাম
১ রতি = ১ কুঁচ বীজ = ০.১২১৪ গ্রাম
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



