somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিনে স্বদেশি ভাষা মিটে কি আশা

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মধ্যযুগে এবং পরাধীন ইংরেজ আমলে মাতৃভাষা বাংলার গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে কবি ও মনীষীগণ এমন সিদ্ধান্ত লিখিত ভাষ্যে জানিয়েছেন যে, স্বদেশী ভাষা ছাড়া মনে আশা পূর্ণ হয় না। কবি রামনিধি গুপ্ত বলেন, নানান দেশের নানান ভাষা, বিনে স্বদেশি ভাষা মিটে কি আশা। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে নানা ভাষার পরিমণ্ডলে বসবাস করে সত্যটি আবার নতুন করে উপলব্ধি করা সম্ভব হচ্ছে। ১৯৪৮ সালে জিন্নাহর মতবাদের জোড়ালো প্রতিবাদ এবং ১৯৫২ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে বাংলার দামাল ছেলেদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও সকলের হৃদয়ে তা স্থান পায়নি। তার প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতিবছর ২১ শে ফেব্রুয়ারির শুধু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ দেখে। এখনো উচ্চ আদালতের রায় লেখা হয় ইংরেজিতে, উচ্চ শিক্ষার পঠন ও পরীক্ষণ পদ্ধতি ইংরেজি, গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো বাংলায় অনূদিত না হওয়া। বাংলাদেশে অবস্থান করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কোমলমতি শিশুরা বাংলা ভাষা শেখা তো দূরের কথা মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না। আমি ইংরেজি শেখার বিপক্ষে নই কিন্তু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে তাল মিলিয়ে বলতে হচ্ছে 'আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, তারপর ইংরেজি শিক্ষার পত্তন। ' শিশুদের সঠিক ও শুদ্ধভাবে বাংলা শেখার ক্ষেত্রে পাঠ্যবই, শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।তাই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি স্তরে বাংলা ভাষার শিক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ইংরেজি একটা অন্যতম আন্তর্জাতিক ভাষা এটা নিয়ে সন্দেহ নাই তাই বলে চীন ও জাপানের মতো উন্নত দেশ নিজের ভাষা বাদ দিয়ে ইংরেজী ভাষায় দক্ষ হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে নাই। আমরা বাঙ্গালীরা একটু হুজুগে মাতাল। তাই নিজের ভাষাকে পায়েদলে পরের ভাষা শিখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ যেন দেশের ঠাকুর ফেলিয়া বিদেশি কুকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। আমি প্রগতির পক্ষের লোক। আমাদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় লড়াই করতে হলে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজিকে আয়ত্ব করতে হবে এ ব্যপারে আমি শতভাগ একমত। কিন্তু বাংলাদেশের জনগনের কতভাগ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক বা ভাষা জ্ঞান ছাড়া অন্যান্য মাপকাঠিতে যোগ্য? সব জনগনের কথা বাদ দিলাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কতজন শিক্ষার্থী দেশের বাইরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। এদের সংখ্যা শতকরা এক ভাগের বেশি হবে না। একভাগ শিক্ষার্থীর জন্য নিরানব্বই ভাগ শিক্ষার্থীদের কেন বাধ্যতামূলক ইংরেজী মাধ্যমে শিক্ষন ও পরীক্ষণ পদ্ধতীতে অংশগ্রহণ করতে হবে ? শিক্ষার পদ্ধতি মাতৃভাষায় না হওয়ার কারনে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী তাদের পাঠ বুঝতে অক্ষম এবং কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করতে ব্যর্থ। এ ক্ষেত্রে কবির ভাষায় আবার বলা যায়, “নানান দেশের নানান ভাষা, বিনে স্বদেশি ভাষা মিটে কি আশা”। তাই অচিরেই উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দিতে হবে, সকল ধরনের বইয়ের বাংলা সংস্করণ থাকতে হবে , উচ্চ আদালতের রায় বাংলাভাষায় লেখাসহ বাংলাদেশের সর্বস্তরে বাংলাভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তবেই ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া স্বার্থক হবে এবং ৫২ সালে আত্মদানকারী ভাষা শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে নয় সারা বছরই বাংলাভাষাকে আমাদের হৃদয়ে স্থান দিয়ে সব জায়গায় ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর যারা বাংলাদেশে বসে বাংলাভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাধা প্রদান করে বিদেশি ভাষা ও কালচারকে এ দেশের মাটিতে রোপন করতে চায় সে সকল বাংলিশদের জন্য কবি আব্দুল হাকিমের কবিতার মাধ্যমে বলতে হয়,“ যে সব বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গবাণী, সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি? কবি আরও বলেন, "দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়/ নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়"। পঞ্চ কবির অন্যতম এক কবি অতুল প্রসাদ সেন বলেন, "মোদের গরব মোদের আশা / আ মরি বাংলা ভাষা"। আসুন সবাই, বাংলাভাষা হৃদয়ে ধারন করি,কর্মে মর্মে সোনার বাংলা গড়ি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:০৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অল্প পুঁজিতে অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসার সন্ধান, যে কেউ চাইলে শুরু করতে পারে

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৫



কেউ একজন জানতে চেয়েছেন ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কিভাবে মাসে ১/২ লাখ টাকা ইনকাম করা যায়? বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে দেখলাম বাংলাদেশে ১০/১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×