বৃষ্টি ভাবায়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
রাতের অন্ধকার ঠেলে ট্রেন এগিয়ে চলেছে ঢাকার দিকে। পেছনে ফেলে যাচ্ছে একের পর এক স্টেশন... ম্রিয়মান বাড়িঘর... বিদ্যুতের পোল... আকাশের এক কোণে একটু পরপর থমকে থমকে বিদ্যুত চমকাচ্ছে। নাহ, বৃষ্টি হবে না। এমন মেঘ শুধু গর্জনেই সন্তুষ্ট থাকে, বর্ষে আর না। খুব ভালো করেই জানি কাল সকালে যখন কমলাপুরে গিয়ে ট্রেনটা ভিড়বে তখন আর আকাশে কোথাও এক চিলতে মেঘও দেখতে পাবো না। বরং অর্ধেক ঘুমের রাতের পর সকালে মুখের ওপর আছড়ে পড়া রোদটা বেশ অসহ্যই লাগবে। ঘেমে না উঠলেও, তেতে উঠবে শরীরটা। এমন বিরক্তিকর ভাবনাটা মোটেও আর ভাবতে ইচ্ছে করছে না। তার চাইতে আমার ম্রিয়মান বাড়িঘরই ভালো।
দিনের বেলায় ট্রেন জার্নির একটা অনুভূতি বোধহয় খুবই কমন। অচেনা জায়গা, অচেনা শহর-গ্রামের রেলপথ দিয়ে জার্নির সময় আশেপাশের বাড়িঘরগুলোকে খুব মায়াবী বলে মনে হয়। সামান্য একটা খালি চায়ের দোকান দেখেও লোভ হয়। মনে হয় ওখানে বসে চা খাই। কিংবা ঘন গাছপালার ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে একটা অর্ধেক শুকানো পুকুর আর পাশে একটা তার চাইতেও বেশি উদ্ভিদ জর্জরিত একটি বাড়ি। খুব ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগে মনটা, ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কি যেন নেই। হয়তো ওই বাড়িটার উঠোনে দাঁড়িয়ে সবুজের মুগ্ধতা দেখার সুযোগ। হয়তো নেই সে বাড়িরই কোনো এক শোবার ঘরের বিছানায় চিটচিটে চাদরে শুয়ে জীর্ন কাঁথা গায়ে বাইরের ঝুম বৃষ্টি দেখার সুযোগ। রোদ ওঠার বালাই নেই, শুধু ওভাবে বৃষ্টি দেখা বাদে জীবনে যেন আর কোন কাজ নেই। অমন ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা ভেজা পরিবেশে কেউ একজন আমার পাশে থাকবে বা থাকলে কি করবে – এইসব ভাবনা যতোটা না ভালো লাগায় তার চাইতেও বেশি আফসোসে পোড়ায়। একটু ভেবেই তাই আর ভাবতে ইচ্ছে করে না। চোখ চলে যায় কলাগাছে। ট্রেন লাইনের পাশে অনেক কলাগাছের সন্ধান পাওয়া যায়। গ্রামের ব্যাপার-স্যাপার বেশ অদ্ভূত। শহরে একটা গাছে ফল নামের কিছু একটা ধরলে আর দেখা লাগে না। সবারই মাথায় মধ্যে কিভাবে পেড়ে খাওয়া যায় এমন একটা চিন্তা কাজ করে। প্রতিষ্ঠানের গাছ হলে নিম্নশ্রেণীর কর্মচারীরা, বাসার গাছ হলে বাড়ির কর্তা আর নেহায়েত রাস্তার দিকে ঝুলে পড়া গাছ হলে রাস্তার মানুষজন বা এলাকার বখাটেরা। কাঁচা হোক, পাকা হোক – কোন পরোয়া নেই। কারও যেন ফল ঝুলছে এমনটা দেখার ইচ্ছে নেই। শুধু নিরন্তর খাই খাই একটা ভাব। ভাবনাটা যখন এমন হয়ে যায়, তখন আর গ্রামকে অদ্ভূত মনে হয় না। বরং শহর জায়গাটাকেই বেশ বিদঘুটে লাগে।
আচ্ছা, আমি ট্রেন নিয়ে কেন লিখছি? আপাতদৃষ্টিতে কোন কারণই নেই। বরং এ লেখাটা নিয়ে যখন লিখছি, তখন বাইরে বৃষ্টি। বাসায় কারেন্ট নেই, কিন্তু ভেজা বাতাস হঠাৎ-হঠাৎ হানা দেয়ার ফলে ঘরের তাপমাত্রায় তার প্রভাব পড়ছে না। বাতাসের দমকটা ধারবাহিক হচ্ছে, তীব্রতা বাড়ছে – ঠিক যেন শীতকালের বাতাস। আমার ঘরে আর সব জায়গায় পর্দা থাকলেও বারান্দার দরজায় নেই। থাকলে সেটা এতোক্ষণে দিশেহারা হয়ে এলোপাথারি উড়তো সে ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। জানালার লুটোপুটি খাওয়া পর্দা ফাঁক দিয়ে বাইরের মেঘাক্রান্ত আলো আসতে গিয়েও থমকে যাচ্ছে। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ানোটা ফরজ হয়ে গিয়েছে। দাঁড়াতেই বৃষ্টির চিরপরিচিত গন্ধ। ভেজা গ্রিলের সাথে মাথাটা লাগাতেই যোগ হলো জং-ধরা গ্রিলের সাথে পানি মেশা একটা গন্ধ। অনুভূতিগুলো তীব্র হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ একজন এখনই ফোন দিলো বলে। বৃষ্টি-বাতাসের হা-হুতাশের শব্দে বাধা ফেলে ফোনটা ঠিকই বেজে উঠলো, Owl City'র Fireflies টিউনটায় -
"You would not believe your eyes...
If ten million fireflies...
Lit up the world as i fell asleep..."
২৯টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।
হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।
ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে
ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি
গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন
জানা আপুর আপডেট
জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।
বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন