somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[রং=ৎবফ][গাঢ়]শাহ আলম[/গাঢ়][/রং]

২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৬ রাত ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শাহ আলম। প্রতিভাবান এক তরুণ। সিলেটের সামপ্রতিক শিল্প চর্চার এক অপরিহার্য চরিত্র। নিপাট ভালো মানুষ এই ধ্যানি যুবক ছিলেন [ইটালিক]সিলেট প্রতিদিন'[/ইটালিক]র শিল্প নির্দেশক। সিলেটের সংবাদপত্র জগতে আমাদের জানামতে এই প্রথম শিল্প নির্দেশকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এবং এটি শুধুমাত্র শাহ্ আলম-এর জন্য। কারণ তিনি এই পদ ধারণ করার মত যোগ্যতরজন ছিলেন।

হ্যাঁ, 'ছিলেন' লিখতে হচ্ছে। কারণ শাহ্ আলম এখন আর নেই। আমাদের এই প্রিয় মানুষটি চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

শাহ্ আলমের মৃতু্য [ইটালিক]সিলেট প্রতিদিন'[/ইটালিক]র জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত হয়ে দেখা দেয়। কারণ শাহ্ আলম এর ভাবনার কাছাকাছি আসতে পারেন এমন কাউকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি অথবা খোঁজার চেষ্টা করা হয়নি।

আমার সাথে শাহ আলম এর সম্পর্কের কোন বর্ননা আমি দিতে পারবনা। তাঁর সাথে যখন পরিচয় হয় তখন আমরা কেউই আলাদা মানুষ হয়ে উঠিনি। কৈশোর উত্তির্ণ। শাহ আলম সবে তুলির আচড় দেয়া শিখছেন। আমি এবং আমার বন্ধুরা সংস্কৃতির নানা শাখায় হাত পাকানোর চেস্টা করছি। সাথে টুকটাক রাজনীতি।

1996 সালের এপ্রিল। 12 অথবা 13 তারিখ সম্ভবত। এম. সি. কলেজে উচ্ছাস এর বর্ষবরনের কাজ আটকে আছে। কেন। কারন শাহ আলম আসছেনা। সময় যাচ্ছে, মেজাজ বিগড়াচ্ছে। হঠাৎ করেই আরিফ ভাই ( আরিফ জেবতিক ) বল্লেন শাহ আলমকে ধরে নিয়ে আসতে পারবে কে। উত্তেজনার চোটে বল্লাম 'আমি'। নিয়ে আসার অনুমতি পেলাম। তখন খেয়াল হল ওকেত চিনিনা। বর্ননা পেলাম, 'ছোটখাট কালো লোকটার মাথায় লম্বা চুল। মুখে দাড়িও আছে।'

মেজরটিলার টেক্সটাইল মিল এলাকায় ছুটে গেলাম মোটর সইকেল নিয়ে। খুঁজতে হলনা। মিলের ফটকেই মিলে গেল শাহ আলম। হাতে কয়েকটা তুলি, পেন্সিল নিয়ে দাড়িয়ে। যেন আমার অপেক্ষায়ই ছিলেন। যে রাগ নিয়ে গিয়েছিলাম তা আর থাকলনা। শাহ আলম ক্যাম্পাসে এলেন এবং তিন দিন টানা কাজ করে বাড়ি ফিরলেন।

আমার সাথে সেই শুরু। শাহ আলমকে কবরে শুইয়ে শুরুর সমাপ্তি টানতে হয়েছে। এর ফাঁকে [ইটালিক]সময়, চ্যানেল-এস[/ইটালিক], সর্বশেষ [ইটালিক]সিলেট প্রতিদিন[/ইটালিক], যেখানেই আমি কাজ করেছি সাথে পেয়েছি শাহ আলমকে। শাহ আলম আমার বন্ধু। আমার বড় ভাই এবং আমি কিছুটা হলেও তার ছায়াসঙ্গি।

[ইটালিক]সিলেট প্রতিদিন[/ইটালিক] সিলেটের একটি নতুন দৈনিক। এখানে সর্বশেষ কাজ করেছেন শাহ আলম। বাজারে আসা পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যায় আমাদের কাছের একজন আ. স. ম. মাসুম আলম ভাইকে নিয়ে লিখেছিল। সেই লেখাটা তুলে দিলাম ব্ল্ল্লগে।

------------------------------------------------
[গাঢ়]আমাদের শাহ আলম[/গাঢ়]

[ইটালিক]আ.স.ম মাসুম[/ইটালিক]

সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সবাই গর্ব করে বলতো আমার শাহ্ আলম। সেই আমার শাহ আলম হঠাৎই আমাদের শাহ্ আলম হয়ে গেল! শাহ্ আলম নেই! ব্যাপারটা কারোই বিশ্বাসযোগ্য নয়। সবারই মনে হয়, এই হয়তো দেখা যাবে ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো একমুখ দাড়ি নিয়ে শাহ্ আলম ঘুরে বেড়াচ্ছে।

দু'হাত ভরে আঁকতো শাহ্ আলম ভাই। সবশেষ...। 29 মে দিবাগত রাত একটায় শাহ্ আলম ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। শেষ কথা হয় আমার সাথেই লাইফ কেয়ার কিনিকে। ইশারায় বললেন_বসো। জিজ্ঞেস করলাম, কেমন লাগছে? ইশারা হলো শুধু। ইঞ্জেকশন পুশ হলো। তারপরই... এতো দ্রুত পরির্বতন... জোরে জোরে শ্বাস... লাইফ কেয়ার থেকে ওসমানী মেডিকেল... নিতে নিতেই সব শেষ। বাপ্পা দা, অপু ভাই'র ফোনে সিলেটের সকল সংস্কৃতিকর্মী রাত দেড়টায় জড়ো হলেন ছুটাছুটি করে। কিন্তু যে বিরাট শিশু এ বিশ্ব নিয়ে খেলে, আমাদের শত সহস্র ছুটাছুটিতে তাঁর কিছুই যায় আসে না। তিনি সবার কাছ থেকে ছিনিয়ে শাহ্ আলম ভাইকে নিজের করে নিলেন...। সবকিছুই ভয়াবহ অবাস্তব... এই যে লিখছি শাহ্ আলম ভাই নেই, এ যেন দুঃস্বপ্ন... কিছুতেই সত্যি নয়। যে শাহ্ আলম ভাই আমাদের জন্য দু'হাত ভরে অাঁকতো আজকে তাঁর জন্য লিখতে হচ্ছে!

হবিগঞ্জের সুলতানশী গ্রামে জন্ম শাহ্ আলম ভাইয়ের। সুলতানশী গ্রাম আমারও দেখা। তাই কতো গল্পই না হতো, গ্রামের... মহরম... সাহেব বাড়ি...। যেদিন শাহ্ আলম ভাই চলে গেলেনে সেদিন হঠাৎই দুপুরে এলো চ্যানেল এস অফিসে, ঢুকেই বললো আমি মনে হয় বেশিদিন বাচঁবো না। বুক জ্বলে। আমরা মানে আমি, রাজীব দা, সুবীর দা বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দিলাম। এরপর কতো কথা... আমরা 3 জন কাকতাড়ুয়া নামের নতুন টি-শার্ট, ফতুয়া বাজারে ছাড়বো... রাজা ম্যানশনে শো রুম... হান্নান ভাই ও মুকুল ভাইয়ের পছন্দের ফন্ট আদর্শলিপি এঙ্পান্ড... শনিবার আমার সাথে সুনামগঞ্জ যাবে... বাবু ভাইয়ের মটর সাইকেল... নূর ভাইয়ের সাথে কাজ করে মজা... লায়েক ভাই সিলেটের ডাকের ইন্টিরিয়র... টুকুদা নজরুলের ছবিটা এভাবে ফেলে রাখলো... চ্যানেল এস'র সেট ডিজাইন... সিলেট প্রতিদিনের আইডিয়া... ইত্যাদি ইত্যাদি। চোখে ভাসে সেই সব দৃশ্য। সন্ধ্যায় আসার কথা ছিল আবার, আর আসেনি....

প্রত্যেক দিন সন্ধ্যার পর দেখা হতো সিলেট প্রতিদিনে। আড্ডায় মাতি রাহমান ভাই, বাপ্পাদা, অপু ভাই, মুকিত ভাই, হাবিব ভাই ফজল ভাই, রেনু ভাই, কখনো সম্পাদক নূর ভাই নিজে। সেদিনও ছিল। আমি আগে চলে আসায় পাইনি। দশটায় নূর ভাই বলছেন_আমি একটু বের হবো। এসে যেন তোমাকে পাই। নূর ভাই এসে পাননি। রাত সাড়ে এগারোটায় সর্বশেষ কথা হয় নূর ভাইয়ের সাথে। সেটা সিলেট প্রতিদিন সংক্রানত্দ। এতো চমৎকার আইডিয়া ছিল শাহ্ আলম ভাইয়ের সিলেট প্রতিদিন নিয়ে। মারা যাবার পর তার বুক পকেটে পাওয়া গেছে এসবের খসড়া।

আমার কাছ থেকে কিছু বিদেশি ডকুমেন্টরি নিয়েছিল শাহ্ আলম ভাই। একটি ছিল ইড়ৎহ রহ ঃড় ইৎড়ঃযবষং. দেখে কি উচ্ছ্বাস! ঘুম থেকে উঠেই চলে এসেছে প্রতিক্রিয়া জানাতে। এতোটাই শিল্প পাগল ছিল শাহ্ আলম ভাই। কোনো কাজ পেলে উজাড় করে দিত নিজেকে। তাইতো বাবু ভাই, টুকুদা, মুকুল ভাই, রাজীব দা, অপু ভাইদের দেখেছি কাজ দিয়ে নিশ্চিনত্দ হয়ে ঘুরতে।

আমাকে বলতো এক বছরের মধ্যে বাসা বদলাবে। বড় বাসা নেবে। যেখানে থাকবে হোম স্টুডিও। বউ ডলির গল্প করতো খুব। বলতো, আমি খুব ভাগ্যবান। বিয়ের জীবনটা খুব সুখে কাটিয়েছে আলম ভাই। কতদিনই বা সে সুখ! শেষ বিদায়ের তিনদিন আগে ছিল প্রথম বিয়ে বার্ষিকী।

শিল্পকলার শিক্ষতা, চারুকলির সভাপতি, সিলেট প্রতিদিন'র শিল্প নির্দেশক, চ্যানেল এস'র সেট ডিজাইনার, নতুন কুঁড়ির বিচারক, আবার অনুরোধের ঢেঁকি স্টেজ অনুষ্ঠানতো আছেই। কখনোই কোনো দিকে ফাঁকি দেয়নি আলম ভাই। এইবার শুধু দিল। একেবারে জীবনের ক্যানভাস থেকে...

ছোট ভাই শাহীন শিল্পী। কত টেনশন করতো তাকে নিয়ে। কতোবার রাজীব দা'র কাছে বলতে শুনেছি_শাহীনকে তুমি বুঝিয়ে চালাও। ওতো বুঝে কম। প্রচন্ড ভালোবাসা ছিল শাহীন ভাইয়ের প্রতি।

টাঙ্গুয়ার হাওড়ে যাবে... পুরোনো কাঁথায় ক্যানভাস করবে... ভেজা বালুর ওপর এঁকে ছবি তুলবে... লিটন ভাইয়ের মুখের অর্ধেক রাঙিয়ে ছবি তুলবে... বাপ্পা দা'র বাসায় কাজ করবে... কাকতাড়ুয়া বানাবে... চ্যানেল এস'র জন্য সেট বানাবে... সিলেট প্রতিদিনের জন্য আঁকবে... অসংখ্য কাজ রেখে চলে গেল শাহ্ আলম ভাই! আর কোনোদিনই তাঁর তুলির আঁচড়ে রাঙাবে না সিলেট! এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

চ্যানেল এস... রিকাবীবাজার... শিল্পকলা... সময়... সিলেট প্রতিদিন... চারুকলি... বইপত্র... বাংলো... প্রাচ্য, সবকিছুরই সেতুবন্ধন ছিল শাহ্ আলম ভাই। সেতুটাই নাই!

রাতে সিলেট প্রতিদিন অফিসে যাই। নূর ভাই, মুকিত ভাই, অপু ভাই, বাপ্পা দা, আবদুর রাহমান ভাই, ফজল ভাই, রুমন... কোনো তাল নেই কোনোখানে। কোনো কাঠামো গড়ে উঠে না আমাদের মাঝে, না আয়তেেত্র... না বর্গেেত্র... না ত্রিভূজ... না বহুভূজ। আমাদের একটি বাহু যে আর নেই! আমাদের শাহ্ আলম ভাই নেই... চলে গেল... কোন্ অভিমানে... কোন্ দেশে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০০৭ দুপুর ১২:৪৩
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রবাসীর মৃত্যু ও গ্রাম্য মানুষের বুদ্ধি!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০



একজন গ্রামের মানুষের মাথায় ১০০ জন সায়েন্টিস্ট, ৫০ জন ফিলোসফার, ১০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৫ জন ব্লগারের সমপরিমাণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এসব লোকজন বাংলাদেশের এক একটি সম্পদ।

বিস্তারিত:... ...বাকিটুকু পড়ুন

×