somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পথশিশু ও কিছু কথা

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন আগের কথা, একটা কাজে বাইরে গিয়েছি রাতে। এক বন্ধুর জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। ফুটপাত, সামনে কতগুলো পান, সিগারেটের দোকান।
আমি ফুটপাতে দাঁড়িয়ে মানুষের আনাগোনা দেখছিলাম। তো একসময় দেখি যে কতগুলো বাচ্চা ছেলে, টোকাই এল। এসে সেই দোকান গুলো থেকে সিগারেট কিনে নিয়ে গেল। সারাদিন কাজ করে দিন শেষে যা কামিয়েছে তা দিয়েই বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিবে, সিগারেট ফুকবে। এভাবেই চলতে থাকবে দিনের পর দিন। বয়স তাদের কতই আর হবে। ৯/১০ অথবা বড়জোর ১২। হয়ত বাপ মা আছে, হয়ত নেই, হয়তবা থেকেও নেই। দারিদ্র্য যেঁকে ধরেছে ছোট্ট এই বাচ্চাদের। হাতে থেকের কথা ছিল বই খাতা। আর তাদের হাতে একটা বস্তা। পথেঘাটে ঘুরে ঘুরে টোকাবে মানুষের ফেলে দেয়া জিনিস, সহ্য করবে শত বঞ্চনা। এসব যেন তাদের কাছে নিতান্তই স্বাভাবিক। মানুষের লাথি গুতো কে তারা যেন নিয়তি হিসেবেই মেনে নিয়েছে। দিন শেষে সকল ক্ষোভ, বিতৃষ্ণা উড়িয়ে দিবে সিগারেটের ধোঁয়ায়।
এটা গেল তো শুধু এই কয়টা ছেলের গল্প। সারা দেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন লাখো টোকাই পথশিশু, শিশুশ্রমিক। তাদের হাতে পৌঁছে না বই খাতা, অন্তরের ধারেকাছেও যায় না শিক্ষার আলো। তাদের জন্য আমাদের শুধুই ঘৃণা। পৃথিবীতে জন্মানোই যেন তাদের নিকৃষ্ট অপরাধ। এই অপরাধবোধ থেকেই যেন ওরা সকল গঞ্জনা, ঘৃণা মাথা পেতে নেয়। বাবা মার সাথে করে স্কুলে যাওয়া, ভালমন্দ কিছু খাওয়া শুধু যেন স্বপ্নেই সম্ভব।
অন্ধকারে তাদের জন্ম। আলো কখনো পৌঁছায় না তাদের জীবনে। এদের মাঝ থেকেই জন্ম হয় ছিচকে চোর, ছিনতাইকারী, পকেটমার, চাঁদাবাজ, এমনকি ভাড়াটে খুনীর মত অপরাধী। সমাজের কীট।
আচ্ছা অপরাধ টা কি ওদের? কেউ কি অপরাধী হয়ে জন্মায়? নাকি বস্তিতে জন্মানোটাই তাদের পাপ? এই সমাজ কতটুকু দায়ী, আমরা যারা সমাজের সুশীল শ্রেণীর লোকজন তারা কতটুকু দায়ী? ভেবে দেখেছি কি কখোনো?
রাজনীতিবিদেরা তো নিজেদের পকেট ফুলাতেই ব্যাস্ত। পথশিশু দের আবাসনের প্রকল্প, শিক্ষার প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা শুধু কাগজে কলমেই সঠিক জায়গায় ব্যয় হয়। সিংহ ভাগ ই চলে যায় তথাকথিত নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবীদের হাতে। আর সমাজ সেবক দের কথা নাই বা বলি। শিশুশ্রম, সবার জন্য শিক্ষা নিয়ে তারা আগুন ঝড়া বক্তৃতা দেয় কিন্তু নিজের বাসায় যে কাজের মেয়েটি আছে তাকে কি স্কুলে পাঠায়? সমাজের বিত্তশালী যারা আছে তারা কতটুকু অবদান রাখছে এদের জন্যে? সমাজের জন্যে? তারা উঁচু প্রাসাদে থাকে, দেশের সবচেয়ে দামী গাড়িতে চড়ে, বাস্তবতা টা তাদের পর্যন্ত পৌঁছায় না। নিচের দিকে তাকালে তাদের ভ্রু কুচকে যায়, ঘৃণা জন্মায়। কোন সহানুভূতি আসে না।
সরকার শিশুশ্রম বন্ধ করছে, সবার জন্য উন্মুক্ত প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাবস্থা করেছে। হ্যা কিছুটা অগ্রগতি হয়ত হচ্ছে। এসব উদ্যোগের সাধুবাদ জানাই। হাতে গোনা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করছে এদের নিয়ে। কিন্তু কতটুকু কাজে লাগছে এসব উদ্যোগ? সমাজের বিত্তশালী রা কতটুকু অবদান রাখছে? কিছু সংখ্যক বিত্তশালী হয়ত এগিয়ে আসছে কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। কিছু ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে। এভাবে সমাজের প্রতি অবদান রাখতে সক্ষম এমন সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাতে চাই। ছোট ছোট এমন উদ্যোগ ই পারে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে দেশকে এগিয়ে নিতে।
এই দেশ, সমাজ আমাদের অনেক দিয়েছে। প্রতিদানে সমাজের জন্য আমরা কি করছি?? ওহ!! ভুলেই তো গিয়েছিলাম। আমাদের দেশপ্রেম তো ফেসবুক, আর বক্তৃতার মঞ্চ পর্যন্তই।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×