somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষাব্যবস্থা মানেই বাণিজ্য ! শিক্ষা মানেই প্রফেসারদের পকেট গরম।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধুটি অনেকদিন থেকেই তার ভার্সিটিতে যেতে বলে। কিন্তু সময় এবং সুযোগের অভাবে যেতে পারিনি। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এর সময় সুযোগটা মিলে গেল। বিকেলের মধ্যে শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছে গেলাম। সেই সাথে ঢাকায় অবস্থানকারী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত আরো কয়েকজন স্কুল জীবনের বন্ধুরাও চলে আসল। রাতভর আড্ডা দিয়ে ফজরের পর আমরা ঘুমাতে গেলাম। ওর হলের রুমে গিয়ে আমিতো হতবাক। একটা রুমে তিনটি মশার কয়েল জ্বালিয়ে রেখেছে। বললাম, বন্ধু ঘটনা কি? সে বলল, শুয়ে পড়। একটু পরেই পুরো ঘটনার রহস্য ভেদ করতে পারবা!

সেইদিন যতগুলো মশার কামড় খেয়েছি তাতে আমার ডেঙ্গু হবার আশংকা জন্মেছিল। বেশ কিছুটা ভয়ও পেয়েছিলাম। মাঝদুপুরে ঘুম থেকে উঠে টয়লেট এ গিয়ে আর এক ভিমরি খাওয়া অবস্থা! এটা কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের টয়লেট নাকি আম জনতার পাবলিক টয়লেট। টয়লেট নিয়ে চিন্তাভাবনার দ্রুত সমাধান করে লাঞ্চের জন্য ছুটলাম ডাইনিং এ। বন্ধু বলল, চল ক্যান্টিনে যাই। ডাইনিং এ খাইতে পারবা না। আমি তো আর এক নাছোড় বান্দা! বহুদিন পর যখন সুযোগ পেয়েছি তখন সেই সুযোগ মিস করি কি করে! আনলিমেটেড ভাত ডাল এর সাথে ২০ টাকার তরকারি! সেই তরকারিগুলোকে তরকারি না বলে অন্যকিছু বলা উচিত ছিল। হাফপ্লেট ভাত ডাল দিয়ে কোন রকমে গলাধকরন করে বের হয়ে আসলাম। ভাবলাম, এর চেয়ে হয়তো শাহবাগের মোড়ের ৩০ টাকা প্যাকেজের খাবার ফেরিওয়ালাদের তরকারি অনেক মানসম্মত এবং সুস্বাদু।

এরকম অস্বাস্থ্যকর এবং রুচিহীন পরিবেশ থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার গ্রাজুয়েট পাশ করে বের হচ্ছে। সেই গ্রাজুয়েটদের মধ্য থেকেই হয়তো কেউ না কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েছেন। যিনি চাইলেই যে কোন পদক্ষেপ নিয়ে এইসব সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু কেউ তো করল না! মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, তারা হয়তো প্রতিশোধ নিচ্ছে! আমরা মশার কামড় খেয়ে,ভরা টয়লেট এ পেট খালি করে ভার্সিটি থেকে পড়াশুনা করলাম, আর তোমরা রাজার হালে থাকবা! তা কি করে হয় বাছাধন! তোমরা মশার কামড় খেলে আমাদের গায়েল জ্বালাটা একটু হলেও কমে! কেন জানি মনে হয়, এটাও সেই অসুস্থ পরিবেশে থাকারই ফল। তারা অসুস্থ পরিবেশে থাকতে থাকতে মানসিকতাটাও নষ্ট হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবই জানে, সবই দেখে। তারপরও বলতে হয়, দেখিয়াও যেন হইল না দেখা শেষ! চলছে যখন চলুক না। আমার তাতে কি! আমার উদর পূর্ণ হচ্ছে, এতেই আমার লাভ।

এতো গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের কথা। কিন্তু একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলেও হাজারটা ঝামেলা পোহাতে হয়। সেরকমই একটা ঘটনা বলি। আমাদের বাড়িটা মফস্বল শহরে। এখনো মফস্বল শহরের মানুষরা ইট কাঠ পাথরের মত যন্ত্র হয়ে যায় নি। তারা আশে পাশের মানুষের কিছু খবরাখবর রাখে। আমাদের স্থানীয় কলেজের তুখোড় ছাত্র মওলা ভাই। মওলা ভাই এর মেধা নিয়ে কারো বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। নিজের একক প্রচেষ্ঠায় পড়াশুনা করে এইচ,এস,সিতে এ প্লাস পেলেন। মেডিকেল ভর্তি কোচিং করবেন সেই সামর্থ মওলা ভাই এর বাবার কখনোই ছিল না। তাই অগত্যা নিজেই বাড়িতে হ্যান্টনোট তৈরী করতেন আর সেগুলো পড়তেন। এভাবে চলতে চলতে ভর্তি পরীক্ষার সময় চলে আসল। মওলা ভাই এর বন্ধুরা মেডিকেলসহ আরো বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম পূরণ করল। কিন্তু মওলা ভাই এর শুধুমাত্র মেডিকেল ভর্তি ফরম পূরণ করার জন্য মওলা ভাই এর আব্বাকে সুদের উপর টাকা ধার নিতে হল! গ্রামাঞ্জল আর এক আজব জায়গা। যেখানে সুদ ছাড়া একটি টাকাও কর্য পাওয়া যায় না।

ঐ মেডিকেলের ভর্তি ফরমটাই মওলা ভাই এর একমাত্র সম্বল। এছাড়া তিনি আর কোথাও পরীক্ষা দিতে পারবেন না। অর্থাৎ তার অর্থনৈতিক সামর্থই তাকে পরীক্ষা দিতে দিতে দিবে না। মেডিকেল পরীক্ষা হয়ে গেল। আমরা কেউই আশ্চর্য হই নি। মওলা ভাই সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এ চান্স পেলেন। কিন্তু তারপর ঘটে আর এক বিপত্তি। মেডিকেলে ভর্তি ফি দেবার একবিন্দুও সামর্থ নেই মওলা ভাই এর। আবার ভর্তি ফি না দিলেও মওলা ভাই এর মেধার মূল্যায়ন কলেজ কতৃপক্ষও করবে না। নাহ! মওলা ভাই বা মওলা ভাই এর আব্বাকে হতাশ হতে হয় নি। ঐ যে বললাম, মফস্বলের মানুষরা এখনো যন্ত্র হয়ে যায় নি। এখনো তারা আশে পাশের মানুষের কিছুটা খবর রাখে। আমাদের এলাকার মানুষরাই নিজ উদ্যোগে মওলা ভাই এর ভর্তির জন্য টাকা সংগ্রহ করলেন। সেই টাকায় ভর্তি হয়ে মওলা ভাই আজ এমবিবিএস ডাক্তার। তার নামের পিছনে এখন লেখা থাকে ডাঃ আশেক মওলা, এমবিবিএস।

এরকম হাজারো আশেক মওলা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, তাদের মেধার মূল্যায়ন পরীক্ষাতে অংশ নেবারই অর্থনৈতিক সামর্থ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরমগুলোর দাম আজ আকাশচুম্বী। আজ ভর্তি ফরম দিয়েও মানুষের সাথে শ্রেণী বৈষম্য করা হচ্ছে। তোমার বাবার টাকা আছে। ১৫০০ টাকা দিয়ে ভর্তি ফরম কিনে ভর্তি পরীক্ষা দাও। তোমার বাবার টাকা নাই, তোমার মেধারও সামান্যও দাম নাই। ফরম কিনতে পারবা না। তাহলে পাবলিব বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমার জন্য না। যাও বাড়ি গিয়ে ঘুমাও। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কবে ভর্তি পরীক্ষা হবে তার খোজ খবর রাখো! তোমাদের স্থান জাতীয়তেই। গরীব মিসকিনদের জন্য পাবলিশ বিশ্ববিদ্যালয় নয়।



ধরুন এইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দেয়। এরা সকলেই যদি ১৫০০ টাকা দিয়ে ভর্তি ফরম কিনে তাহলে মোট টাকার পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা। একটি ভর্তি পরীক্ষা নিতে বড়জোর ২০-৩০ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। আর বাকি ৬০ লাখ টাকা যায় কোথায়?

আমাদের যেসব শিক্ষকরা ক্লাসে বসে নৈতিকতার বুলি আওড়ান তাদের পকেটেই কিন্তু এই টাকাগুলোর একটি বড় অংশ স্থান করে নেয়। নৈতিকতার শিক্ষাদাতা শিক্ষকরা এই টাকাগুলো নিজের অধিকার মনে করেই নিজের ব্যাংক একাউন্টে জমা করে রাখেন। অথবা নিজের বউ বাচ্চাকে নিয়ে মরিশাস অথবা মালওয়েশিয়া থেকে হাওয়া পরিবর্তন করে আসেন। তখন আর নৈতিকতাবোধটা শাহারা মরুভূমির বুকে হারিয়ে যায়। যেখান থেকে নৈতিকতা নামক এই আজব বস্তুটাকে খুজে বের করতে গেলে নিজেকেই মরতে হবে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী মহাদয় ২০ তম কাউন্সিলে বলেছেন, উন্নয়নের জোয়ার দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। হ্যা কথা সত্য। টাকা ওয়ালাদের পকেটের উন্নয়নের গতি ঠিকই দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। মাঝখান থেকে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্তের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও দুর্বার গতিতে হ্রাস পাচ্ছে। তাদের পড়াশুনা অধিকারটাও অঘোষিতভাবে হরণ হচ্ছে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আপনাদেরকে জ্ঞানের কথা বলবার মত দুঃসাহস আমার মত সাধারণ জনতার না দেখানোই ভাল। কারণ ভয় করে! লঘু পাবে আবার যদি গুম করে দেন। একটি দেশের উন্নয়ন রাস্তাঘাটের মাঝে লুকিয়ে থাকে না। শিক্ষা এবং মানুষের মাঝে লুকিয়ে থাকে। চীন দেশে একটি প্রবাদ আছে, “তুমি যদি একশ’ত বছরের পরিকল্পনা কর তবে গাছ লাগাও। আর যদি হাজার বছরের পরিকল্পনা কর, তবে মানুষ তৈরী কর”। তাই বলছি, শিক্ষাব্যবস্থাটাকে বাণিজ্যিক কেন্দ্র না বানিয়ে মানুষ তৈরীর কেন্দ্র বানান।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:০১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×