somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাওড় ভ্রমণ ১

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লকডাউন তুলে দেওয়ার পর থেকেই কোথাও বেড়াতে যাবার জন্য মন আকুপাকু করছিলো। কিন্তু পর্যটন এলাকা খোলা- বন্ধ নিয়ে এক ধরণের সিদ্ধান্তহীনতা চলছিলো বেশ অনেকদিন ধরে। অবশেষে কুরবানি ঈদের তৃতীয় দিন এলো সেই কাঙ্খিত লঘ্ন। রাত দশটায় সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জের বাসে চেপে বসলাম। গন্তব্য টাঙ্গুয়ার হাওড়। ভোরের আলো ফোঁটার আগেই পৌঁছে গেলাম সুনামগঞ্জ। পানসী রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তায় ডিম খিচুড়ী খেয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম ভোরের আলো ফোঁটার। বাইরে কিছুটা ফর্সা হতেই লেগুনা চেপে রওনা করলাম তাহিরপুরের দিকে ।
তাহিরপুর ঘাটে আগে থেকেই আমাদের "জলযাত্রা" অপেক্ষা করছিলো। ঝটপট উঠে গেলাম জলযাত্রায়। নৌকা ছাড়তেই হাওড়ের নির্মল বাতাস শরীর জুড়িয়ে দিলো। কিছুদূর যাবার পর একটা লোকাল বাজার দেখে নৌকা ভিড়ানো হলো। বাজার থেকে হাওড়ের তাজা মাছ, দেশী মুরগী আর অন্যান্য বাজার সেরে শুরু হলো আমাদের আসল যাত্রা। গন্তব্য ওয়াচ টাওয়ার। যদিও সকাল তবু ধীরে ধীরে বাড়ছিলো রোদের তেজ। নৌকার ছাদে দাঁড়ানো যাচ্ছিলো না অগত্যা সবাই নৌকার মধ্যেই আশ্রয় নিলো। গল্প আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চললো গান আর লেবুর শরবতের হাত বদল।
ঘন্টা দেড়েক চলার পর আমরা পৌঁছে গেলাম হাওড়ের মূল অংশ মানে ওয়াচ টাওয়ারের কাছে। ওয়াচ টাওয়ারে ইতিমধ্যেই প্রায় দশ-পনেরোটা নৌকা ভিড়েছে। ভিড় এড়াতে আমরা কিছুটা দূরে নোঙর করলাম।


মাথার উপর কড়া রোদ আর তীব্র দাবদাহ সবাইকেই অস্থির করে তুলেছিলো। ঝটপট জলে নামার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেলো সবাই। লাইফ জ্যাকেট পরে কে কার আগে জলে ঝাপিয়ে পরবে সেই প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেলো। আমি যেহেতু সাঁতার পারি তাই ওসবের বালাই ষাট বলে নেমে পরলাম হাওড়ের সবুজ ঠান্ডা জলে। শরীর জুড়িয়ে গেলো নিমিষেই। হাওড়ের জলে সাপ আছে বলে অনেকেই ভয় দেখিয়েছিলো ট্যুরে যাওয়ার আগে। জলে নেমে প্রথমে সেটাই মনে পরলো। অন্য সময় হলে সাপ আছে জানার পরে সেই জলে কেউ আমাকে নামাতে পারতোনা কিন্তু সব ভয়কে জয় করে হাওড়ে দুই ঘন্টা সাঁতার কাটলাম।


দুই ঘন্টা সাঁতারের পর যে ক্ষুধাটা লেগেছিলো সেকথা বলাই বাহুল্য। নিমিষেই দুই প্লেট ভাত সাবরে দিলাম আলু ভর্তা, ডাল আর হাওড়ের পাবদা মাছ দিয়ে। এরপর হিজলের ছায়ায় নৌকার পাটাতনে ঘন্টা দুয়েক আরামে ল্যাটানোর পরে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য শহীদ সিরাজ লেক ওরফে নীলাদ্রি লেক। নীলাদ্রির সৌন্দর্যের কথা লিখে বর্ণনা করা অসম্ভব। যে লোক নীলাদ্রি না গেছে তাকে এই সৌন্দর্য বোঝানো যাবেনা।

মনে হচ্ছিলো আমি হয়তো সুইজারল্যান্ড চলে এসেছি। একপাশে ছোট ছোট টিলা আর অন্য পাশে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের মাঝখানে এই ছোট কিন্তু অসম্ভব গভীর হৃদটি। এতো সবুজ আর ঝকঝকে এই নীলাদ্রি যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয়না। নৌকা নিয়ে খানিকক্ষন লেকে ঘুরাঘুরি করলাম আমরা। লেকের পাশ ঘেঁষেই ভারত। আমরা নৌকায় ঘুরে ঘুরে ওপারের লোকেদের বরশি দিয়ে মাছ ধরা দেখলাম। এরপর টিলার উপরে কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি আর ছবি তোলা শেষে ভাড়া করা মটরসাইকেলে করে রওনা করলাম লাকমাছড়ার দিকে।

লাকমাছড়া একটা ঝিরির মতোন জায়গা। ভরা বর্ষায় অনেক পানি থাকে শুনেছি কিন্তু আমরা যখন গেছি তখন পানি খুব বেশী ছিলোনা। পানি অল্প হলেও স্রোতের গতি ছিলো অনেক বেশী। ঝর্নার ঝকঝকে ঠান্ডা সেই পানি খাওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে আজলা ভরে খেয়ে নিলাম খানিকটা। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে আসছে। লোকাল দোকানে গরুর দুধের চা আর গরম গরম পুরি খেয়ে আমরা ফিরে এলাম নৌকায়। সন্ধ্যার পরপরই হলুদ থালার মতো বিশাল চাঁদ উঠলো আকাশে। আমরা এমন হিসাব করেই ট্যুরের ডেট ফেলেছি যেন হাওড়ের পূর্নিমাটা উপভোগ করতে পারি। আমাদের নৌকাটাকে তীর থেকে সরিয়ে নিয়ে হাওড়ের মাঝামাঝি একটা জায়গায় নোঙ্গর করা হলো। চাঁদের আলোয় নৌকার ছাদে বসলো আমাদের গানের আসর। একটু দূরে দূরেই অন্য নৌকাগুলিও ভেসে বেড়াচ্ছিলো। সেসব নৌকায়ও চলছিলো গান। এক নৌকার সাথে অন্য নৌকার গানের প্রতিযোগীতা চলছিলো অঘোষিতভাবেই। রাতে গরম গরম ভাত, আলু ভর্তা আর হাঁসের মাংস দিয়ে জম্পেশ ডিনার সেরে নৌকার ছাদেই ঘুমানোর আয়োজন করলাম আমরা। যদিও নৌকার মধ্যে ঘুমানোর জন্য চমৎকার বিছানা ছিলো কিন্তু একটা রাত হাওড়ে ভাসতে ভাসতে খোলা আকাশের নীচে ঘুমানোর এই সুযোগ আমরা কেউই মিস করতে চাচ্ছিলাম না।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৪
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×