
হাওড়ে ভাসতে ভাসতে রাত ভোর হয়ে এলে আমাদের নৌকা আবারো নীলাদ্রিতে নোঙর করলো। সিদ্ধান্ত হলো সকালের নাস্তা এখানেই সেরে নিয়ে আমরা রওনা করবো শিমুলবাগানের উদ্দেশ্যে। যথারীতি ধোয়া ওঠা গরম খিচুড়ি আর হাঁসের ডিম ভাজা দিয়ে ভরপেট নাস্তা সেরে চা খেতে খেতে আমরা পৌঁছে গেলাম শিমুলবাগান।
যদিও শিমুলবাগানের সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করার পারফেক্ট সময় হলো শীতকাল। কেননা তখন গাছভর্তি থাকে রক্তরঙা শিমুল ফুল।
অবশ্য ফুলবিহীন শিমুলবাগানও কম সুন্দর না।

চারিদিকে এতো এতো সবুজ রঙ চোখগুলিকে এক অদ্ভূত শান্তি দেয়। এখানে পাশাপাশি দুটি নদী। সারি নদী আর জাদুকাটা নদী। পাশাপাশি হলেও পানির রঙ দেখেই দুটি নদীকে আলাদা করা যায় প্রথমবার দেখাতেই। সারি নদীর পানি ঘোলাটে অন্যদিকে জাদুকাটা নদীর পানি ঝকঝকে নীল। শিমুল বাগানে থেকেই দুটো নদীর সৌন্দর্যই উপভোগ করা যায়।

শিমুল বাগানে ঘোরাঘুরি শেষে আমরা চলে গেলাম বারিক্কা টিলায়। এখানে ছোট একটা টিলা মতো জায়গা। কিছুদূর গেলেই ইন্ডিয়ার বর্ডার। বর্ডারের আগে অল্প একটু জায়গা বাংলাদেশের মধ্যে। বারিক্কা টিলায় দেখার মতো বিশেষ কিছুই নেই। দেখার মধ্যে আছে শুধু পাহাড়ের ওপর থেকে জাদুকাটা নদীর ভিয়্যু আর বর্ডারের ওইপারে ইন্ডিয়ার সুউচ্চো পাহাড়গুলিই। এই জায়গা নিয়ে বলার মতো উল্লেখযোগ্য কিছুই নেই। তবে মজার ব্যাপার হলো এখানে এসে গরমে অতিষ্ট হয়ে একবসায় ৮ গ্লাস লেবুর শরবত খেয়ে ফেলেছিলাম। শুধু আমি একাই নই , টিমের সবাইই কেউ ১০ গ্লাস, কেউ ৭ গ্লাস, কেউ বা আরো বেশী লেবুর শরবত খেয়ে নিয়েছিলো।

এরপর আমরা চলে গেলাম জাদুকাটা নদীতে গোসল সারতে। জাদুকাটা এক অদ্ভূত নদী। যতদূরেই যাই না ক্যানো কোমড় সমান পানিই থাকে। সাঁতার না জানার কারনে যারা হাওড়ে খুব বেশী মজা করতে পারে নাই তারা এবার তিন গুন উৎসাহ নিয়ে নদীতে নেমে গেলো। আমরা প্রায় আধামাইল পর্যন্ত হেটে বেড়ালাম নদীর মধ্যে। নৌকা থেকে যখন দুপুরের খাবার তৈরি হয়েছে বলে জানানো হলো তখন আমাদের কারোরই পানি ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করছিলো না। অগত্যা নদীর মাঝখানে দাঁড়িয়েই লাঞ্চ সেরে নিলাম গরম গরম ভাত, নদীর সরপুটি, মুরগী আর ডাল দিয়ে।

এরপর ফিরবার পালা। আমাদের নৌকা যাত্রা শুরু করলো তাহিরপুরের উদ্দেশ্যে। আকাশে তখন কালো মেঘ। আমরা সবাই আফসোস করছিলাম এই বলে যে, দুটো দিন হাওড়ে রোদ আর গরমে এতো কষ্ট করলাম আর এখন যখন ফেরার সময় হলো তখনই কিনা আকাশে মেঘ করলো। আমাদের নৌকা যখন আমাদেরকে তাহিরপুরে নামিয়ে দিলো তখন দেখা মিললো এক জোড়া রংধণুর সাথে।

নৌকা থেকে নেমে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে সিএনজি নিতে না নিতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। এক মুহূর্তে হাওড় যেন রীতিমতো সমুদ্রে পরিণত হয়ে গেলো। কি সেই ঢেউ যেন এক মিনি কক্সবাজার চলে এসেছি আমরা। যদিও তখন আর হাওড়ে থাকার উপায় নেই আমাদের, রাতের বাসে ফিরতে হবে ঢাকায়।
শেষমেশ একটা কথা না বললেই না যে, এই দুটো দিন হাওড়ে থাকার পুরো সময়টাই দারুন কাটতো যদিনা কিছু লোক সাউন্ডবক্স বাজিয়ে শব্দ দূষণ না করতো আর প্লাস্টিক প্যাকেট ফেলে হাওড়ের পানি নোংরা না করতো। বাংলাদেশের যেখানেই ঘুরতে যাইনা ক্যানো এই সাউন্ড বক্স বাজানো আর যেখানে সেখানে ময়লা ফেলার কারনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে পারা যায়না। আমরা যারা ভ্রমণ পিপাসু আমাদের উচিৎ কোথাও ঘুরতে গেলে সেখানকার পরিবেশের কথা মাথায় রাখা। আমাদের কারনে যেন সেখানকার পরিবেশ দূষণ না হয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


