somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইয়াসমিনের জবানবন্দী (রিপোষ্ট)

২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১৯৯৫ সালের ২৪ আগষ্ট। এদিন পৃথীবি ছেড়েছে ইয়াসমিন। এদিকে আমি/আমরা খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। তাই ইয়াসমিনের ১৯তম মৃত্যূবার্ষিকিতে হতভাগিকে নিয়ে নতুন কোন লেখা দেয়া সম্ভব হয়নি। গত বছরের লেখাটাই চালিয়ে দিলাম...আমার পুর্বপুরুষদের হত্যাকান্ডের অর্ঘ্য হিসেবে !!!)


জীবিতরা খুব দ্রুত মৃতদের ভুলে যায়। আসলে, বেঁচে থাকার আস্বাদ পরতে পরতে উপভোগ করার হাতছানি কে এড়াতে চায় ? আমি মারা যাওয়ার পর তোমরা কিছুদিন তেলেবেগুনে জ্বলে-পুড়ে ছাড়খার হলে,তারপর ঠিকই ভুলে গেছ নিয়মকরে।এতদ্রুত যে,ভাবলে তোমাদেরই লজ্জা লাগবে। কিন্তু তারপরও গন্ডারের চামড়ায় লজ্জা ঢেকে বলবে-এটাই তো জীবনস্রোতের রীতি। বলি বলিহারি ! চাইলে,আমায় গালি-গালাজ করতে পার,থু থু ছুঁড়তে পার,কিন্তু বিশ্বাস করো ধৈর্যেয় আর কুলোচ্ছিল না। তাই,এই সাতসকালে,তোমরা যখন কব্জি ডুবিয়ে সেহরি শেষে নাসিকা গর্জনে মত্ত,সেই সুযোগে বসে পড়লাম জীবিতদের চরকা নিয়ে।
আমায় এখনো চিনতে পারনিবুঝি ? সেই যে আঠারো বছর আগে, কোন এক নিকষ কালো রাতে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম রক্ষকের হাত ধরে,শেষপর্যন্ত তারাই মানুষের শরীর নিয়ে জন্মানো পিচাশের বেশে গণধর্ষন করেছিল আমাকে। মায়ের মুখখানিও দেখতে দেয়নি। পিচঢালা রাস্তায় পড়েছিলাম স্খলিত বসনা লাশের মতো....
বিদীর্ণ।
নিষ্পেষিত।
দলিত-মথিত।
ফুটোপয়সা মুল্যের....
একদলা মাংসপিন্ড রুপে।
কী,শেকড় খুঁজতে সভ্যতার শুরু অব্দি পিছিয়ে গেলে নাকি ? অতদুর যেতে হবে না। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির ছুতোয় তোমরাই আমাকে উলঙ্গ করেছিলে শতশত উৎসুক চোখের সামনে ! তারপর থেকে শুধুই দল ভারী হচ্ছে । সীমা,সিমি,তানিয়া,তৃষা সহ আরও কতশত নাম। স্রোতের মতো আসছে !
সবার ক্ষেত্রেই তোমরা একে অপরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছ-"এর আমলে ঘটেছে,তাই আমার আমলে ঘটতেই পারে।'কিন্তু রাজনীতিবিদদের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেই কি মুক্তি মিলবে ? ব্যালটে-কিংবা বুলেটে যেভাবেই হোক না কেন,ওরা তো তোমাদের সীল নিয়েই বাজনা থামলে বসবো কোথায় খেলে যাচ্ছে,গত ৪২ বছর ধরে ! তাহলে ?
জৈবিক অনুভুতি বুঝে ওঠার পর থেকে তাই 'ওরা'ও টিকে যাচ্ছে। মর্মান্তিক মজার ব্যাপার হলো,যে যখন ক্ষমতায় যায় তখন তার গলাতেই 'ওরা' ঝুলে পড়ে। আর তেনারাও বরণ করে নেন বধুবরনের কায়দায় ! অথচ,আমি শুনেছিলাম,বন্দুকের নল কিংবা পুরুষত্বের বল নয়,ভোটই ক্ষমতার উৎস। তাহলে গদিটাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে নিতে চাইলে,আমজনতার প্রিয়ভাজন হলেই হয় ? কিন্তু তা,ঘটেনা কেন ?আসলে টেকনাফ থেকে তেতুঁলিয়ার প্রতিটি রাস্তা সোডিয়ামের আলোয় ঠিকরে ওঠার আগে আলো পৌঁছানো দরকার তাদের মস্তিস্কের খোন্দলে,যাদের হাতে রয়েছে দেশবদলের চাবিকাঠি। কিন্তু যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ। রামায়ণের সেই দশানন তার ক্ষমতা দিয়ে সীতাকে চেয়েছিল। আর,আমরা ক্ষমতা চাই আখের গোছানোর জন্য। তাই তো। সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বড় একটি চেয়ার দখল করতে পারলেই তো মানুষের চোখে নায়গ্রা আর বুকের ভেতর সাহারা উপহার দেয়ার আনন্দ ! ক্ষমতার মর্মসুখটা বোঝার জন্য আসলে নোবেল পাওয়ার দরকার নেই। আমি চাইলেই রক্ষক হয়ে ভক্ষন করার সুখ করতে পারবো,যা এককথায় ক্ষমতারই উৎপাদিত ফসলমাত্র। তারজন্য অনেককে বঞ্চিত করতে হয়। সেখান থেকে ক্ষোভের জন্ম হয়। তা সামলাতে একটা সন্ন্যাসী ইমেজ তো লাগবেই। সে কারণেই তো নৌকা-শীষ-পাল্লা নিয়ে সময় বুঝে শার্দুলদের এতটা মাতামাতি। আখের গোছানোর মহচ্ছবে ওরাই তো মোক্ষম হাতিয়ার।
আচ্ছা,তোমরা যারা সাধারন তারাও তো সাধ্যমতো আখের গোছানোর চেষ্টা করে থাক। কিংবা ইতিমধ্যে যা কামিয়ে ফেলেছ,তা কচ্ছপ কামড় দিয়ে পড়ে থাক ? তাই অধ্যাপকেরা প্রতিবাদ করেন না,কারণ তিনি ভাইস-চ্যান্সেলর হতে চান। লেখকের কলম থেকে চোখা শব্দ বের হয় না,কারণ তিনি লেখার দোরগুলো বন্ধ করতে চান না। 'অপরাজিতারা'ও প্রতিবাদে মুখর হয়না,কারণ ভাল বিয়ে হবেনা।
তাই আমিও মুখ বুঁজে ছিলাম। ওরা যখন আমার দুই পা দু্ই দিকে চিরে বুকের ওপরে চড়ে বসেছিল,তখন চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল গোটাগ্রহের যাবতীয় সব নীতিবাক্য। বিশ্বাস করেছিলাম, কেউ না কেউ আসবে বাঁচাতে। নইলে,ধর্মের অনেক আশ্বাস যে চুলোয় যাবে !,আসলে,ভুল ভেবেছিলাম। কারণ,তোমরা তো সেই কবে থেকেই মরে বেঁচে আছ।নরকে ফিরে যাওয়ার আগে শুধু একটা অনুরোধ-তোমাদের ঘরে কারো মেয়েসন্তান জন্মালে দয়া করে তার কোন নাম রেখোনা। মেয়ে তো মেয়েই, ভোগের রসমঞ্জরী ; তার আবার নামের প্রয়োজন কি ?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:১৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×